Thursday, October 31, 2024
Latest Newsইতিহাসফিচার নিউজ

ফিরে দেখা: জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার, ৬ বছর জেল খেটে ‛নির্দোষ’ মেটিয়াব্রুজের মুহাম্মদ হারুন রশিদ

দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : ২০১২ সালের ১৭ জুলাই গার্ডেনরিচ মেটিয়াব্রুজের লিদিপাড়ার বাসিন্দা মুহাম্মদ হারুন রশিদকে এক দল লোক সিভিল ড্রেসে এসে বাড়ি থেকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। কিছু না জানিয়েই সেদিন তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বলা হয়, থানায় গিয়ে বলব। কিন্তু স্থানীয় থানায় না নিয়ে গিয়ে সোজা লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। পরের দিন কোর্টে হাজির করা হয়। তখনও জানানো হয়নি কোন কেসে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তাঁর উকিলের মাধ্যমে জানা যায় যে, তাঁকে জাল নোটের কেসে যুক্ত করা হয়েছে। তারপর রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় অন্য কেস জুড়ে দেওয়া হয়।

শিয়ালদাহ মুচিপাড়া থানায় তাঁর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ আনে হোটেল বিউটি লজের ম্যানেজার সুমন দাস। ২১ জুলাই ২০১২ তে অভিযোগ করা হয় যে তিনি নাকি ১৭ জুলাই ২০১২ সালে হোটেল বুক করে ১১৪ নম্বর রুমে যান ও একটি ব্যাগ রেখে চলে আসেন। তাঁর কাছ থেকে নাকি নিষিদ্ধ সংগঠনের কাগজ ছিল ও ব্যাগে বোম বাধার জিনিস ছিল। চার্জশিটে লেখা ছিল, মুহাম্মদ হারুন রশিদের লক্ষ্য ছিল নাকি জইস এ মুহাম্মদ, সিমি, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন, দার্সগাহ জিহাদ ও শাহাদাৎ এর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা। মুসলিম যুবকদের নাকি জেহাদে উদ্বুদ্ধ করার জন্য মিটিং, ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতেন।

৫ বছর ৯ মাস জেল খাটার পর অবশেষে সন্ত্রাসের অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস পান মুহাম্মদ হারুন রশিদ। কোর্টে সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়ে ও তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়। দীর্ঘ হাজতবাসের পর মুক্তি পেয়ে সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, “আমাকে অনেক সাদা কাগজে সই করিয়ে নেয় পুলিশ। আমার সামনে ইন্টারনেট থেকে সব কাগজ প্রিন্ট করে সই করিয়ে নেওয়া হয়, বলা হয় আমার কাছে নাকি নিষিদ্ধ জেহাদী, লিফলেট, বই পাওয়া গেছে। এইসব মিথ্যা অভিযোগ করে আমার মতো নিরীহ মানুষকে বছরের পর বছর জেলে আটকে রাখা হয়েছিল। আমার গ্রেফতারের ২ মাস পর ছেলে মারা যায়। বহু দুঃখ যন্ত্রনা নিয়ে বেঁচে আছি। পাঁচ বছর নয় মাস অর্থাৎ প্রায় ছয় বছর জেল খাটার পর আমাকে মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু এতটা জীবন যে নষ্ট হলো তার মূল্য কে দেবে? আমার পরিবার না খেয়ে থেকেছে। ছেলেদের পড়াশোনার খোঁজ নিতে পারিনি। আমার ব্যবসা শেষ। আমি এখন কী করব? জেলে বসে চোখের জল ফেলেছি আর আল্লাহর কাছে বিচার চেয়েছি। আমার অনুরোধ, আমার মতো কাউকে যেন মিথ্যা কেসে না ফাঁসানো হয়। মানুষ হিসাবে মানুষ যেন একটু বাঁচতে পারে।”

Leave a Reply

error: Content is protected !!