দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: নির্বাচনের আগে যাঁর বাড়িতে মাটির দাওয়ায় বসে পেট পুরে খেয়েছিলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনিই এখন অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
বাংলা বিজয়ের লক্ষ্যে তখন নিয়মিত এ রাজ্যে আসছিলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তেমনই একদিন বোলপুরে এসে পৌঁছলেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। র্যালি করার উদ্দেশে সকাল সকাল তিনি আসেন বোলপুরের রাঙামাটিতে।
শান্তিনিকেতনে গিয়ে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের সঙ্গে বৈঠক, বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখার পর দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জন্য মধ্যাহ্নভোজনের ব্যবস্থা করা হয় প্রখ্যাত বাউল শিল্পী বাসুদেব দাস বাউলের বাড়িতে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়, বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা সহ একাধিক নেতাকে নিয়ে মাটির দাওয়ায় বসে, মাটির থালায় মধ্যাহ্নভোজন সারেন অমিত শাহ। বাউল শিল্পীর কন্ঠে গানও শোনেন।
কিন্তু, তারপর? দেশে ও বিদেশে অনুষ্ঠান করে থাকলেও আধপেটা খেয়ে থাকার সহজাত অভ্যেস আছে বাসুদেব দাসের। কিন্তু দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর বাড়িতে খেয়ে যাওয়ার পরেও অবস্থার উন্নতি হয়নি বাসুদেবের। তাঁর কথা কেউ শোনেনি। আশা ভেঙে চুরমার আজ। অমিত শাহের সেই র্যালির পাল্টা হিসেবে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই বোলপুরে পদযাত্রা করেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। সেই মিছিলেও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে পা মিলিয়েছিলেন এই বাউল শিল্পী। রাজ্য সরকারের দেওয়া রেশনের চাল, গমই এখন ভরসা বাসুদেবের।
এটা ঘটনা, নির্বাচনের পর বিজেপি নেতারা আর এ–মুখো হন না। গরিবের বাড়িতে অন্নগ্রহণ করার পালাও শেষ হয়েছে। বাসুদেব তাই ফিরে গিয়েছেন পুরনো অভ্যাসে। নিয়মিত আধপেটা খাওয়া এবং কবে ভবসাগরে সুখের চিলতে ঢেউ উঠবে তার দিকে তাকিয়ে থাকা।
করোনার কারণে গোটা রাজ্য জুড়ে চলছে আংশিক বিধিনিষেধ। জৌলুস নেই শান্তিনিকেতনেও। পর্যটক শূন্য এলাকা। বাউলের একতারা স্তব্ধ। বন্ধ গান–বাজনার অনুষ্ঠান। খুব স্বাভাবিকভাবেই পেটে টান পড়েছে লোকশিল্পীদের। যার মধ্যে অন্যতম বাউল শিল্পী বাসুদেব দাস বাউলের পরিবার।
সেই বাসুদেব বাবুরই আজ একমাত্র ভরসা ও সম্বল রাজ্য সরকারের রেশনের চাল, গম, আটা এবং মুখ্যমন্ত্রীর বাউল ভাতাটুকুই।
বাসুদেব দাস বাউল জানান, রাজ্য এবং কেন্দ্রের বিজেপি নেতারা একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচনী প্রচারে এসে তাঁদের বাড়িতে খাওয়াদাওয়া করেছিলেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্যজুড়ে বিধিনিষেধ চলাকালীন বিজেপির কোনও নেতা–কর্মীরা খবর নেয়নি, কেমন আছেন তিনি বা তাঁর মতো শিল্পীরা। তাঁর কথায়, ‘রাজ্য সরকারের বাউল ভাতা, রেশনের চাল, গম, আটাই এখন আমাদের ভরসা।’ একরাশ ক্ষোভ ধরা পড়েছে বাসুদেব দাস বাউলের স্ত্রী উর্মিলা দেবীর গলাতেও, যিনি নিজেও একজন বাউল শিল্পী। তাঁদের দুর্দশার কথা জানতে পেরে বোলপুরের এসডিপিও অভিষেক রায় বাসুদেব দাস বাউলের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের হাতে সাহায্য তুলে দিয়ে এসেছেন। পাশে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।