দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : দু’মাসের বেশি সময় কেটে গেছে। লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক দুর্দশার মধ্যে থেকেছেন। হঠাৎ ঘোষিত লকডাউনে আটকে পড়ে কাজ, ছাদ, আয় খুইয়েছেন তাঁরা। বাধ্য হয়েছেন পায়ে হেঁটে শত শত কিলোমিটার পথ পেরোতে। পথেই প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ১৫০ জন। মুখ ফিরিয়ে থাকা কেন্দ্রীয় সরকার যখন শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালু করতে বাধ্য হয়েছে তখনও অব্যবস্থায় ট্রেনেই মারা গিয়েছেন ৮০ জন।
এত কিছুর পরে রবিবার প্রধানমন্ত্রী সময় পেয়েছেন এই পরিযায়ী শ্রমিক ও গরিব মানুষ সম্পর্কে দু’কথা বলার, তাঁদের দুর্দশা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করার। কোনও দায় নেননি, বরং পরোক্ষে দায়ী করেছেন তাঁর আগের সরকারের সময়কালকে। ‛মন কি বাত’ ভাষণে এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‛মহামারীতে দেশের সব অংশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন গরিব শ্রমিকরা। তাঁদের যন্ত্রণা, ব্যথা, দুর্দশা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে তাঁরা ও তাঁদের পরিবার যাচ্ছে তা কে না অনুভব করেন?’
তিনি যে অন্তত এযাবৎ করেননি, এদিন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই। করলে কোটি কোটি মানুষকে বিপদে ফেলে চার ঘণ্টা সময় দিয়ে লকডাউন ঘোষণা করতেন না। পরিযায়ীদের যত্রতত্র ফেলে রাখা হতো না দু’মাস। কেন্দ্রীয় সরকার নিজের খাদ্যশস্যের উদ্ধৃত মজুত থেকে রেশনের ব্যবস্থা করতে পারত। এমনকি এদিনও ‛চোখের জল’ ফেলার পরেও সমস্ত গরিব ও পরিযায়ী শ্রমিকদের এককালীন অর্থ সাহায্যের কোনও প্রতিশ্রুতি দেননি প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী পরিযায়ী সম্পর্কে এদিন বলেছেন, ‛দেশের পূর্বাঞ্চল থেকেই সবচেয়ে বেশি পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। যে অঞ্চল দেশের বিকাশের চালিকাশক্তি হতে পারে সেই পূর্বাঞ্চলেই উন্নয়নের অভাব। অতীতে যে কাজ করা হয়নি, আজকের ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।’ এরপরই তাঁর দাবি, ‛গত কয়েক বছরে এই লক্ষ্যে অনেক কিছুই করা হয়েছে যা আমাকে ভেতর থেকে প্রশান্তি দেয়।’ প্রশ্ন উঠেছে, এতই কিছু যদি করা হয়েছে, তাহলে গত কয়েক বছরে পরিযায়ীর সংখ্যা বেড়ে গেল কেন?
প্রধানমন্ত্রী এদিন বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নতুন সমাধান করতে হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা বিরতিহীন কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। তাঁদের দক্ষতার মানচিত্র তৈরি করা হবে। পরিযায়ী কমিশনের কথা ভাবা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি যে প্যাকেজ ঘোষণা করেছে তাতে গ্ৰামে কর্মসংস্থান, স্বনিযুক্তি ও ছোট শিল্পের প্রচুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যদি আমাদের গ্ৰাম, শহর, জেলা, রাজ্য স্বনির্ভর হতো তাহলে এই মাত্রার সমস্যা তৈরি হতো না।
প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় প্যাকেজের কথা বললেও তা যে অন্তঃসারশূন্য তা বলছেন বিশেষজ্ঞরাও। গ্ৰামীণ কর্মসংস্থানের কোনও প্রকল্পই ঘোষিত হয়নি। রেগায় বাজেটের বরাদ্দ কিছু বাড়ানো হয়েছে এই পর্যন্ত।
প্রধানমন্ত্রী এদিন দাবি করেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারত অনেক ভালো ভাবে করোনার মোকাবিলা করেছে। যত যত দ্রুত তা ছড়াতে পারত তা ছড়ায়নি, মৃত্যুর হারও ভারতে অনেক কম। যেদিন প্রধানমন্ত্রী এই ভাষণ দিয়েছেন সেদিন নতুন করে দেশে সংক্রমিত হয়েছেন ৮৩৮০ জন। মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫১৬৪।
এদিন মোদী আমফানের প্রসঙ্গে তুলে বলেন, ওই ঝড়ে পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দুই রাজ্যের মানুষই সাহসের সঙ্গে এই বিপর্যয়ের মোকাবিলা করেছেন। এই প্রয়াস অভিনন্দনযোগ্য।