রেবাউল মন্ডল, দৈনিক সমাচার, শান্তিপুর : ভিনরাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকদের বিভিন্ন স্কুলে রাখার বন্দোবস্ত করেছে নদীয়া জেলা প্রশাসন। যা নিয়ে বেশ কিছু এলাকায় প্রতিবাদে সামিলও হয়েছে এলাকাবাসী। এই পরিস্থিতিতে পরিযায়ী শ্রমিকদের কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য এগিয়ে এল নদিয়ার শান্তিপুরের ঐতিহ্যবাহী গোপালপুর পুরাতন জুম্মা মসজিদ কমিটি।
গত ৩০ মে যেসমস্ত পরিযায়ীরা বাড়ি ফিরেছেন তাদের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এই মসজিদেরই একাংশ। এক পাশে নিয়ম মেনে পড়া হচ্ছে নামাজ। বাকি অংশে তৈরি হয়েছে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। তাঁদের জন্য রয়েছে আলাদা টয়লেট। আছে পর্যাপ্ত লাইট-ফ্যানের ব্যবস্থাও।
মসজিদ কমিটির সভাপতি রহমত আলি জানান,‛মানুষ বাঁচলে তবেই তো ধর্মপালন হবে। জীবিকার তাগিদে এলাকার ছেলেরা ভিনরাজ্যে কাজে গিয়েছিল। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশ গড়ে তারাই এখন সমস্যায়। তাদেরকে নিরাপদে ভালোভাবে রাখার জন্যই আমরা মসজিদের একাংশকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করার অনুমতি দিয়েছি।’
মসজিদের ইমাম মৌলানা আব্দুল হাকিম জানিয়েছেন, ইংরেজ আমলে ১৯০৫ সালে তৈরি হয়েছিল ঐতিহ্যবাহী এই জুম্মা মসজিদটি। বাইরে থেকে আসা সাত জন শ্রমিক এই সেন্টারে আছে। তাদের জন্য খাওয়া দাওয়ার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই মসজিদে এবছর ৬জনের বেশি ঈদের নামাজ পড়াতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল বলেও জানান তিনি।
মসজিদের মতোয়াল্লি কামালউদ্দিন সেখ বলেন, ওই পরিযায়ী শ্রমিকরাই তো আমাদেরই ঘরের সন্তান। মসজিদের একাংশে আমরা নামাজ পড়ছি। সেইসাথে ওদের দেখাশুনাও করছি।
স্থানীয় যুবক রুহুল কুদ্দুস বলছেন, অদূরদর্শী সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউনের ফল ভুগতে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ খেটে খাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের। পথে ফিরতেও নির্মম পরিণতি হয়েছে তাদের। অনেকের মৃত্যুও হয়েছে নানান দুর্ঘটনায়। কেউবা মারা গেছেন অনাহারে। এখন অনেকেই কঠিন জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বাড়ি ফিরছেন নিজেদের কষ্টার্জিত টাকা খরচ করে। তাদের জন্য আমাদের মসজিদ কমিটি খুব সুন্দর সময়োপযোগী একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মহারাষ্ট্র থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিক রাজ সেখ বলেন, ‛বাড়ি ফিরে কোথায় থাকবো তা নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। মসজিদে আশ্রয় পেয়ে আমাদের দুশ্চিন্তা কেটেছে।’ সরকারি যাবতীয় নিয়ম মেনেই এখানে ১৪দিন থাকব বলে জানিয়েছেন রাজ সেখ, সাহাবুল সেখ, সিধু সেখ ও আতাবুল মণ্ডলরা।