Friday, March 14, 2025
Latest Newsদেশফিচার নিউজ

মোদী কিছু বললেই ভাইরাল! সোশ্যাল মিডিয়ায় ‛মোদী ম্যাজিক’? টাকা নিয়ে কাজ করছে বিশাল টিম

ছবি : সংগৃহিত

দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মুখ খুললেই কেল্লাফতে! তাঁর মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। কীভাবে সম্ভব? পুরোপুরি না জানলে বলবেন, এটা মোদী–ম্যাজিকই বটে। ‛ইন্ডিয়া টুডে’র পরামর্শক সম্পাদক রাজদীপ সারদেশাই সম্প্রতি ইংরেজি সংবাদমাধ্যম স্ক্রল ডট ইনে লেখা এক প্রতিবেদনে মোদী ও বিজেপির কারিশমার নেপথ্যের বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন। তিনি দাবি করেছেন মোদী ও তাঁর দল বিজেপির জন্য এ ম্যাজিক বা কারিশমা দেখান আসলে একদল পেশাদার ডিজিটাল মার্কেটিং কর্মী।

প্রতিবেদনে রাজদীপ সারদেশাই প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তা, বিশেষজ্ঞ, বিজেপির ডিজিটাল মিডিয়া টিমের কর্মীদের বরাতে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেছেন। প্রাক্তন একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘প্রতিদিন সকালে মোদীকে নিয়ে সোশ্যাল সাইটে কোন প্রভাবশালী ব্যক্তি কী বলেছেন, তার বিস্তারিত তালিকা পেয়ে থাকেন প্রধানমন্ত্রী।’ প্রধানমন্ত্রী মোদীর করা প্রতিটি ট্যুইট প্রকাশের আগে একাধিক বিশেষজ্ঞ তা বারবার খতিয়ে দেখেন। প্রতিটি ট্যুইটে মোদীর ভাবমূর্তি যেন দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে রক্ষিত হয়, সে বিষয়টি খেয়াল রাখা হয়।

আমাদের সব খবর পড়ুন এইবার মোবাইল অ্যাপে। ডাউনলোড করুন বাংলার সেরা নিউজ অ্যাপ

এ বছর সাধারণ নির্বাচনের আগে ফেসবুক ও ট্যুইটারে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হওয়ার খুব কাছাকাছি ছিলেন মোদী। ফেসবুকে ভেরিফায়েড ‘নরেন্দ্র মোদী’ নামে তাঁর ব্যক্তিগত পেজে ৪ কোটি ৪৪ লাখ লাইক রয়েছে। ট্যুইটারেও একই নামে ভেরিফায়েড পেজে ৫ কোটির ২১ লাখের বেশি অনুসারী। ইউটিউবে তাঁর ১০০টিরও বেশি ভিডিও রয়েছে। এর বাইরে লিংকডিন ব্যবহার করেন তিনি। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে ইনস্টাগ্রামে ৩ কোটি ফলোয়ার পার হয়েছে তাঁর।

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও রাজনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জয়জিত পাল বলছেন, ‘মোদির আগে ভারতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে কেউই রাজনীতি ও প্রযুক্তির মধ্যে এমন সমন্বয় ঘটাতে পারেননি। শুধু মোদিই নন, বিজেপির জ্যেষ্ঠ নেতাদের প্রত্যেকেই এবং তাঁর কেবিনেটের প্রত্যেক সদস্য সামাজিক যোগাযোগের সাইটে সক্রিয়। তাঁদের কার্যক্রম সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী অফিস (পিএমও)। প্রত্যেক কেবিনেট মন্ত্রীর তাঁর অফিসে নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া টিম ও ব্যক্তিগত সহকারী রয়েছেন, যাঁরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। যেসব ভিডিও আপলোড করা হবে বা যেসব টুইট শেয়ার করা হবে, সেগুলো নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হয়।’

কেন্দ্রীয় একজন মন্ত্রী এ বিষয়ে বলেছেন, ‘আমাদের অত্যন্ত সুগঠিত সিস্টেম রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর যেকোনো ট্যুইট তাৎক্ষণিক লাইক দেওয়া ও রিট্যুইট করা হয়। এমনকি, কোনও ভিডিও পোস্টের পর দ্রুত তা শেয়ার করা হয়।’ ২০১৯ সালের নির্বাচনের সময় মোদীর টিম ধরে নিয়েছিল, এবারের নির্বাচন–যুদ্ধ হবে স্মার্টফোনে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে অপেক্ষাকৃত তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্মার্টফোনেই যুদ্ধ করতে হবে তাদের। বিজেপির আইটি ও সোশ্যাল মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অমিত মালব্য বলেন, ‘ভারতের প্রথমবার সত্যিকারের সোশ্যাল মিডিয়াভিত্তিক নির্বাচন ছিল এবার। টিভি স্টুডিওর চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে লড়তে হয়েছে।’

২০১৫ সালে বিজেপির মিডিয়া সেলে যুক্ত হওয়ার আগে অমিত ব্যাংক অব আমেরিকা ও এইচএসবিসিতে করপোরেট খাতে কাজ করেছেন। বিজেপিতে যুক্ত হয়ে ২৫ সদস্যের একটি টিম নিয়ে বিজেপির কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবীদের সংযুক্ত করে দেশব্যাপী নানা কর্মশালা পরিচালনা করেন তিনি। তাঁদের উদ্যোগে প্রতিটি বুথ কমিটিতে এখন কমপক্ষে পাঁচজন বিজেপি কর্মী আছেন, যাঁরা প্রযুক্তিজ্ঞান রাখেন এবং যাঁদের হাতে স্মার্টফোন রয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়াতে বিজেপির ১২ লাখ স্বেচ্ছাসেবী নিবন্ধিত কর্মী রয়েছেন।

মালব্যর দাবি, বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপ্তি এখন ব্যাপক। তিনি যখন শুরু করেন, তখন বিজেপির ডোমেইন নাম ছিল বিজেপি ফর ইন্ডিয়া ও ট্যুইটারে মাত্র ১৭ লাখ অনুসারী ছিল। এখন ১ কোটি ১৬ লাখ অনুসারী পার হয়েছে। ফেসবুকে ফলোয়ার ছিল ৭২ লাখ, যা এখন ১ কোটি ৬০ লাখ পার হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ভারতে ২৫ কোটির মতো ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল, যা ২০১৯ সালে দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। দেশে স্মার্টফোন ব্যবহারকারী ২০১৪ সালে ছিল সাড়ে ১৫ কোটি, যা গত ৫ বছরে তিন গুণ বেড়ে ৪৫ কোটি ছাড়িয়েছে। দেশে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী রয়েছে ৩০ কোটির বেশি। নির্বাচনের সময়ে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী ছিল প্রায় সমান।

 

সব খবর পড়তে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন – এখানে ক্লিক করুন

Leave a Reply

error: Content is protected !!