দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: বেশ কিছুদিন ধরে দিল্লি আর হরিয়ানা সীমান্তের সিঙ্গু এবং উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ ও দিল্লির সীমান্তে গাজীপুরে সদ্য আনা তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে মহা ক্ষমতাশালী নরেন্দ্র মোদী সরকারের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা। দুপক্ষই অনড়। সরকার কৃষি আইনে বেশকিছু সংশোধন করতে রাজি, কিন্তু কিষান আন্দোলনের দাবি মেনে আইন বাতিল করতে নারাজ। কৃষকরাও তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে অনড়। এ সম্পর্কে বিস্তারিত খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত এবং প্রচারিত হয়েছে। তা নিয়ে আর নতুন করে কিছু বলছি না। তবে এই কৃষক আন্দোলনের নেতারা তাদের আন্দোলন আর দিল্লির সীমান্তে আটকে রাখতে রাজি নন। সারাদেশে তা ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। দেশের সর্বত্র তাঁরা কৃষকদের কাছে যাবেন এবং তাদের বোঝাবেন কেন্দ্রের শাসক দলের নেতারা কীভাবে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কৃষক বিরোধী এই আইন চালু করে তাদের সর্বনাশের পথে ঠেলে দিতে চলেছে। যে পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচন হতে চলেছে, সেই রাজ্যগুলি থেকেই আন্দোলন ছড়ানোর কাজ শুরু করল মোর্চা।
সংযুক্ত কিষান মোর্চা এই পাঁচ রাজ্যের কৃষকদের কাছে বলতে চাইছে বিজেপিকে ভোট নয়। কারণ একশো দিনের ওপর চলা কৃষক আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যে সরকারের মন্ত্রীরা দেখা করার সময় পাচ্ছেন না, তাঁরা কিন্তু ভোট প্রচারে বেরিয়ে পড়েছেন। গোটা সরকারই পশ্চিমবঙ্গের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। নরেন্দ্র মোদির সরকারকে এখনই ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া উচিত। কিন্তু যেহেতু সেটা সম্ভব নয়, তাই এখন যে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভার ভোট হচ্ছে সে গুলিতেই তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে দেশের মানুষ আর এই সরকারকে চায় না। যে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভার ভোট হচ্ছে তার মধ্যে সারাদেশের নজর পশ্চিমবঙ্গের ওপর। তাই কৃষক মোর্চাও পশ্চিমবঙ্গকেই বেছে নিয়েছে প্রচার কর্মসূচী শুরু করার জন্য। গত শুক্রবার তারা এখানে এসে পৌঁছেছে। যাঁরা এসেছেন তাঁদের মধ্যে আছেন দিল্লি সীমান্তে চলা কৃষক আন্দোলনের নেতা রাকেশ টিকায়েত, সমাজকর্মী মেধা পাটেকর, যোগেন্দ্র যাদবরা। রাকেশ একসময়ের অবিসংবাদী কৃষক আন্দোলনের নেতা মহেন্দ্র সিং টিকায়েতের ছেলে। মহেন্দ্র সিং-এর দুই ছেলেই এখন দিল্লি সীমান্তের কৃষক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দুদিনে পাঁচটি মহা পঞ্চায়েত করে রাজ্যের কৃষকদের মুখোমুখি হচ্ছেন তাঁরা।
রাজ্যে এসে অনেকগুলি কর্মসূচি নিয়েছেন তবে তাঁদের মূল উদ্দেশ্য জমিরক্ষা এবং কৃষিভূমি বাঁচাও আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুরের কৃষকদের সামনে তাঁদের বক্তব্য তুলে ধরা। নন্দীগ্রাম এবার হাইভোল্টেজ কেন্দ্র। সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে লড়ছেন তাঁরই একসময়ের সেনাপতি, নন্দীগ্রামের জমিরক্ষা আন্দোলনের নেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপির হয়ে। এই কেন্দ্রের দিকে নজর রয়েছে সারা ভারতের। ফলে নন্দীগ্রামের সভায় তাঁরা যা বলবেন তা সারা ভারতের মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। দিল্লি সীমান্তে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান চালিয়ে তাঁরা যতটা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছেন, এক ধাক্কায় তার থেকেও অনেকটা বেশি এগিয়ে যাবেন। শুক্রবার নন্দীগ্রামে কৃষক পঞ্চায়েতের সভা দেখে বোঝা গেল টিকায়েতদের উদ্দেশ্য সফল। প্রচুর চাষী এসেছিলেন এই সভায়। টিকায়েতরা বলেন, দেশের সরকার এবং সংসদ এখন কোনও দল নয়, চালাচ্ছে একটা কোম্পানি। লুটেরাদের কোম্পানি। এই কোম্পানির হাত থেকে দেশকে বাঁচাতে কোথাও বিজেপিকে একটিও ভোট নয়। বাংলার মানুষকে আমরা বলতে এসেছি দেশকে বাঁচাতে হলে, কৃষক আন্দোলনের জয় দেখতে হলে এখানে বিজেপিকে হারাতেই হবে।
এ রাজ্যের সাধারণ মানুষ বেশ অনেকটাই ক্ষুব্ধ নরেন্দ্র মোদীর সরকারের প্রতি। বিশেষ করে রান্নার গ্যাসের দাম ডিজেল পেট্রোলের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের নাভিশ্বাস। জানি না কোন অঙ্কে বিজেপি মনে করছে এ রাজ্যে তারা দু’শোর বেশি আসন পাবে! তেমনই কৃষকরাও খুশি নয় এই সরকারের প্রতি। কারণ কিষান সমৃদ্ধির নামে ফলাও করে যে প্রচার চলছে তার আওতায় এ রাজ্যের অধিকাংশ চাষী নেই। বরং এ রাজ্যের সরকার জমি অনুযায়ী কৃষির খরচ বাবদ যে অনুদান দিচ্ছে তা কমবেশি সব চাষী পাচ্ছে। আগে বলেছি আবারো বলছি এখন রাজনীতি যেমন অধিকাংশ রাজনীতিকের পেশা তেমনি ভোটারদের কাছেও ভোট এখন দেনাপাওনার। টিকায়েত, মেধা পাটেকররা এখানকার চাষীদের আরও একটু নাড়িয়ে দিয়ে গেলেন। এটা বিজেপির কাছে বেশ ধাক্কা।