নিজস্ব সংবাদদাতা, দৈনিক সমাচার, মুর্শিদাবাদ : দীর্ঘ এক মাস গঙ্গার করাল গ্রাসে তিনফসলা জমি সহ ভিটেবাড়ি হারিয়ে কার্যত নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন পাঁচ শতাধিক মানুষ। শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে শুধুই কান্নার রোল আর আর্তনাদ মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জের ধানঘরা, হিরানন্দপুর গ্রামজুড়ে। আগ্রাসী গঙ্গার ভয়াবহ ভাঙনে একে একে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে গোটা গ্রাম। সহায়সম্বলহীন গ্রামবাসীদের এখন একটাই দাবি স্থায়ী পুনর্বাসন।
এখানকার বাসিন্দারা মূলত বিড়ি শ্রমিক। কেউবা ভিনরাজ্যে রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। আর এভাবেই কাটে ওদের জীবন। সামান্য ওই রোজগার থেকে অল্প অল্প বাঁচিয়ে অনেকেই বাঁধিয়েছেন পাকা বাড়ি। কারও একতলা কারোবা দোতলা। চাষের তিনফসলা জমি তো আগেই গেছে, গঙ্গা গিলে নিয়েছে সাজানো সাধের আমের বাগান লিচুর বাগানও। এবার একে একে বিলীন হচ্ছে একতলা দোতলা পাকা বাড়ি গুলিও।
ইতিমধ্যে প্রায় ২০০ পরিবার তাদের বাসস্থান হারিয়েছে। একে একে বিলীন হয়েছে তাদের সর্বস্ব। এখন ঘটিবাটি আর জীবন হাতে নিয়ে কোনোমতে পালিয়ে প্রাণে বাঁচার মরিয়া চেষ্টা। আতঙ্কে বাড়িঘর ভেঙে যেটুকু বাঁচে তা নিয়েই অন্যত্র পালাচ্ছেন পাঁচ শতাধিক পরিবার। এলাকায় কার্যত হাহাকার অবস্থা।
নিজ হাতের তৈরি পাকা ঘর ভেঙে ইঁট দরজা জানালা গ্রিল সরিয়ে ফাঁকা মাঠে রাখছেন ধানঘরার টিপু সুলতান ও কেতাবুল সেখ। তারা বলছেন, মাস খানেক আগেও নদী থেকে আড়াইশো মিটার দূরে ছিল আমাদের গ্রাম। এখন সব তছনছ করে দিল আগ্রাসী গঙ্গা। কি করবো কোথায় যাবো কিছুই বুঝতে পারছি না। তাই যেটুকু বাঁচে সরিয়ে নিচ্ছি। এবার একটু মুখ তুলে দেখুক সরকার। আমাদের একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিক।
আর মাস দুই পরেই শুরু হবে শীত। কিভাবে কোথায় থাকবো বুঝে উঠতে পারছিনা বলে ডুকরে কেঁদে আঁচলে চোখ মুছলেন রিজিয়া বেওয়া। বসতবাড়ি ছাড়াও নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে বিএসএফ ক্যাম্প, আইসিডিএস সেন্টারও। পাশাপাশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে স্কুল, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, মসজিদ ও কবরস্থান।
শিবপুরের গোপাল মন্ডল, ধনপতি মন্ডল বলছিলেন, সেদিন রাতে কোনমতে পালিয়ে প্রাণে বেঁচেছি। মুহূর্তেই তলিয়ে গেল আমাদের ঘরবাড়ি। সরকারি পুনর্বাসন না পেলে আর রেহাই নেই। ছেলে মেয়েদের নিয়ে এবার পথে বসতে হবে। ধানঘরার আতঙ্কে ঘুম কেড়েছে পাশের গ্রাম কামালপুর বাসীদেরও।
এবিষয়ে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারি ক্ষতিপূরণ সহ স্থায়ী পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামী হিন্দের রাজ্য সভাপতি মাওলানা আব্দুর রফিক।
ভাঙন প্রতিরোধ সহ একাধিক দাবিতে মঙ্গলবার ফরাক্কার জেনারেল ম্যানেজারকে স্বারকলিপি দিয়েছে তৃণমূল।
এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রশাসন ও রাজনৈতিক দলগুলিকে বারবার জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। এবার যদি স্থায়ী ভাবে থাকার ব্যবস্থা করা হয় কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলবে। মুর্শিদাবাদ জেলার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এন্ড ডেপুটি কালেক্টরেট সিদ্ধার্থ সুব্বে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর আশ্বাস দিয়ে গেছেন।