Friday, March 14, 2025
Latest Newsফিচার নিউজরাজ্য

বাংলাতেও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বেকারের সংখ্যা, জুন মাসে বেকারত্বের হার বেড়ে ২২.১ শতাংশ

দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: অতিমারি এবং লকডাউনের জেরে ধাক্কা খেয়েছে দেশের অর্থনীতি । বেড়েছে বেকারত্ব । সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি (সিএমআইই)-এর সাম্প্রতিকতম রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, জাতীয় স্তরে বেকারত্বের চিত্রটির ক্ষেত্রে সামান্য উন্নতি ঘটেছে চলতি বছরে মে মাসের তুলনায় জুন মাসে । কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে চিত্রটা পুরো উল্টো । জুন মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের হার জুন মাসে অনেকটাই বেড়েছে মে মাসের তুলনায় ।

প্রথমে বেকারত্বের ক্ষেত্রে জাতীয় হার এবং পশ্চিমবঙ্গের হারের তুলনামূলক পরিসংখ্যানে আসা যাক । ২০২১ সালের মে মাসে বেকারত্বের জাতীয় হার ছিল ১১.৯ শতাংশ যেটা কমে জুন মাসে হয় ৯.২ শতাংশ । এর উল্টো ছবি কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে । ২০২১ সালের মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের হার ছিল ১৯.৩ শতাংশ । রাজ্যের সেই হারই জুন মাসে বেড়ে গিয়ে হয় ২২.১ শতাংশ ।

শুধু এই নয় । জুন মাসের বেকারত্বের এই গড় হল গত দশ বছরে সর্বোচ্চ । ২০১১-১২ সালে পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের হার ছিল মাত্র ৪.৫ শতাংশ । সেখান থেকে এই বছরের জুন মাসে এই হারের বৃদ্ধি রাজ্যের অর্থনৈতিক দিকটার করুন চিত্রটিকে তুলে ধরছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল । রাজ্য সরকারের বক্তব্য, গত বছর থেকে আজ পর্যন্ত অতিমারির দুটি ঢেউ এবং লকডাউনের কারণেই একই বেকারত্ব হারের বৃদ্ধি ।

এই যুক্তির সঙ্গে কিছুটা সহমত হলেও পুরোপুরি মানতে চাইছেন না বিশেষজ্ঞ মহল । অর্থনীতিবিদ প্রবীরকুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে জুন মাসের তুলনায় জুন মাসে পশ্চিমবঙ্গের বেকারত্বের হার বেড়েছে তাতে অস্বাভাবিকতা কিছু নেই । তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় দফার লকডাউন শুরু হয়েছে মে মাসের মাঝামাঝি থেকে এবং জুন মাসের শেষ পর্যন্ত চলেছে। এখনো চলছে কারণ লোকাল ট্রেন চালু হয় নি। পশ্চিমবঙ্গে দ্বিতীয় দফার লকডাউন শুরু হলো এমন সময় যখন বাকি রাজ্যগুলো যেমন মহারাষ্ট্র লকডাউন তুলতে শুরু করেছে। তাই যখন জুন মাসে যখন বেকারত্বের জাতীয় হার কমছে তখন পশ্চিমবঙ্গে এই হার যে বাড়বে তাতে আশ্চয কিছু নেই। খোঁজ নিলে দেখা যাবে যে মে থেকে জুন মাসের মধ্যে নতুন করে বেকার হওয়া একটা বিশাল অংশ মফস্বলে বসবাসকারী সেই সব মানুষ যারা লোকাল ট্রেনের উপর নির্ভর করে তাদের জীবিকা উপার্জনের জন্য ।”

বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ভাষ্যকার, শান্তনু সান্যাল মনে করেন যে পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিক শ্রেণীর একটা বিশাল অংশই আসে অসংগঠিত ক্ষেত্র থেকে। “আর এই অতিমারী এবং লকডাউনের সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পরে অসংগঠিত শ্রমিকদের জীবনে। তাই স্বাভাবিকভাবেই এই রাজ্যে বেকারত্বের হার হুহু করে বাড়ছে। বৃহৎ শিল্প, তা সে ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্র হোক বা সার্ভিসেস সেক্টর হোক, এই রাজ্য বেশ কিছু থাকলে, চিত্রটা এতো করুন হতো না। অতিমারী এবং লকডাউন তো একটা কারণ বটেই। কিন্তু শিল্পক্ষেত্রে রাজ্যের সামগ্রিক করুন চিত্রটাও আর একটা কারণ তো বটেই। এবং কোনো যুগান্তকারী পলিসি সিদ্ধান্ত না নিলে এই চিত্র বদলাবে বলে মনে হয় না,” তিনি বলেন।

Leave a Reply

error: Content is protected !!