দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: রকেট হানায় ছোট্ট শহর গাজা এখন যেন মৃত্যুপুরী। ইজরায়েল–প্যালেস্টাইন সংঘর্ষে একেবারে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে এই শহর। তার মধ্যেই সামনে এল মর্মান্তিক এক কাহিনী। ইজরায়েলের রকেট হানায় শেষ হয়ে গেছে মহম্মদ আল হাদিদির পরিবার। মারা গেছেন স্ত্রী, তিন সন্তান। সহায় এখন পাঁচ মাসের ছেলে ওমর। অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে গিয়েছে সে। পাথরের স্তূপের মাঝে ছোট দুটো পা নড়তে দেখে তাকে উদ্ধার করে উদ্ধারকারী দল। তবে ওমরের একটি পায়ের তিন জায়গা ভেঙেছে। আপাতত বাবার সঙ্গে হাসপাতালেই রয়েছে সে। তাকে কোলে জড়িয়ে বসে থাকা মহম্মদ আল হাদিদির ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। একরাশ যন্ত্রণা নিয়ে হাদিদি বলেছেন, ‘আমার আর কেউ রইল না। শেষ সম্বল ওমর। তবে আমরাও আর বেশিদিন এখানে থাকব না। খুব শীঘ্রই উপরে গিয়ে পরিবারের সকলের সঙ্গে মিলিত হব।’ ইদের পরদিনই পরিবারকে হারান হাদিদি। সেদিনের স্মৃতি মনে পড়লেই শিউড়ে উঠছেন তিনি।
গত শুক্রবার রাতের কথা। পাথরের চাঁই সরাতে গিয়ে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালেন উদ্ধারকারী বাহিনীর লোকজন। ক্লান্ত হাতদু’টো যন্ত্রের মতো নড়াচড়ার শক্তিও হারাল! থরথর করে বারকয়েক কেঁপে উঠল যেন। ততক্ষণে ধুলোর পরত সরিয়ে চোখে ভেসে উঠেছে এক মহিলার নিথর শরীর। মৃত। প্রাণের স্পন্দনটুকু নেই। কিন্তু মায়ের একটি হাত, অসাড় হাত, জড়িয়ে রেখেছে পাঁচ মাসের সন্তানকে।
কোলের ছেলে ওমারকে রক্ষা করতে চেষ্টার কোনও কসুর করেননি বছর ছত্রিশের মহা আবু হাত্তাব। চটজলদি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যায় সে। কিন্তু অন্যদিকে স্ত্রী-সহ চার সন্তানকে হারিয়ে কার্যত দিশেহারা মহম্মদ আল-হাদিদি। তিনি যুদ্ধের কারবারি নন। গাজার সাধারণ নাগরিক মাত্র। শেকড়সুদ্ধ তাঁর সংসারের আগাগোড়া উপড়ে ফেলেছে একটিমাত্র বোমার আঘাত। হাদিদি বুঝে উঠতে পারছেন না, কাকে দোষ দেবেন? তাঁর ভাগ্যকে? ঈশ্বরকে? নাকি তাঁর মতো সাধারণকে পাশার দান করে যারা যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলে, তাঁদের?
ওমারকে নিয়েই আপাতত নিজের লড়াই চালিয়ে যেতে চান হাদিদি। চোখের পাতা উঠে এসেছে। ছোট্ট পা দু’টোও ভালোই জখম হয়েছে। খয়েরি রঙের কোঁচকানো চুলে সামান্য জট। তাতেই বিলি কাটতে কাটতে তিনি বলেন, ‘আমার এই দুনিয়ায় আর কেউ রইল না। তুই ছাড়া।’ তারপর বিড়বিড় করতে করতে যোগ করেন, ‘ওরা ভগবানকে খুঁজতে গেছে। আমাদেরও যেতে হবে। খুব জলদি। এখানে আর বেশিদিন থাকতে চাই না। কোনওভাবে না।’