দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: ভারতীয় জনতা পার্টির মধ্যেও রয়েছেন চিকিৎসা পেশার বহু মানুষ। কিন্তু তাঁর পরেও চিকিৎসকদের ঘুষখোর-রাক্ষস বলে সম্বোধন করল বিজেপি। আর ওই ভাষাকে ‘মারাত্মক অপমানজনক’ বলছেন চিকিৎসকরা। মাত্র চল্লিশ সেকেন্ডের একটা ভিডিও। তাতেই চটে লাল পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসককূল। বাংলার বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে তৈরি করা ওই ভিডিওতে বিজেপিকে ভোট দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। সেই আবেদনের ভাষা নিয়েই শুরু হয়েছে গন্ডগোল।
ইউটিউবে বিজেপির অফিসিয়াল সাইটে ওই ভিডিওটি ছিল। শুক্রবার বিকেলে প্রথমে সেটি নজরে পড়তেই ক্ষোভ দানা বাঁধতে থাকে চিকিৎসকদের মনে। এ রাজ্যে প্রায় ৭০ হাজার চিকিৎসক রয়েছেন। নির্বাচনের মুখে চিকিৎসকদের ক্ষোভ ইভিএমে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, এমন চিন্তা থেকেই রবিবার তড়িঘড়ি ভিডিওটি সরিয়ে ফেলে ভারতীয় জনতা পার্টির আইটি সেল। কিন্তু ততক্ষণে ডাউনলোড করা সেই ভিডিও চলে এসেছে চিকিৎসকদের মোবাইলে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডা. কৌশিক লাহিড়ির কথায়, কোনও নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে উদ্দেশ্য করে এই ধরনের বিদ্বেষমূলক মন্তব্য বাংলার রাজনীতিতে নতুন নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় এটাই যে, সমাজে যাঁরা সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত তাঁরাই আবার মানুষের প্রাণ বাঁচানোর কারিগরদের সমালোচনা করছেন। এই ঘটনার পর বিশেষ ওই রাজনৈতিক দলকে ক্ষমা চাইতে বলছে ‘প্রোটেক্ট দ্য ওয়ারিয়র্স’ নামে চিকিৎসকদের আরেকটি সংগঠন।
৪০ সেকেন্ডের শর্ট ফিল্মে দেখানো হয়েছে একমাত্র সন্তানকে হারিয়েছে এক দম্পতি। তার জন্য হাসপাতালের ডাক্তার, ওয়ার্ড মাস্টারদের দায়ী করেছেন তিনি। চিকিৎসকদের ঘুষখোর এমনকী রাক্ষসও বলা হয়েছে সেখানে। ভিডিওতে ওই ব্যক্তি জানাচ্ছেন, হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেলে ঘুষ চান চিকিৎসকরা। এহেন প্রচার-ভিডিও সামনে আসতেই মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি লিখেছে রাজ্যের চিকিৎসকদের অন্যতম সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম। চিঠি দেওয়া হয়েছে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকেও। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ডা. কৌশিক চাকীর কথায়, “যা হয়েছে তা অত্যন্ত গর্হিত কাজ। একদিকে চিকিৎসকরা নিজের জীবন বাজি রেখে করোনা আবহে উদয়াস্ত পরিশ্রম করছেন। সেখানে তাঁদের এভাবে অপমান করা ঠিক নয়।” প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেছেন, আসলে চিকিৎসকরা সফট টার্গেট। যে যেভাবে পারছে, তাঁদের হেয় করছে।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ কলকাতার কসবা বিধান সভা এলাকা থেকে পদ্মফুল চিহ্নে নির্বাচনে লড়ছেন চিকিৎসক ইন্দ্রনীল খান। ভিডিও-র খবরটি পৌঁছেছে তাঁর কানেও। বিজেপির প্রচার ভিডিওটি অস্বীকার করে তিনি জানিয়েছেন, কেউ দলকে বদনাম করতে ভিডিওটি ভাইরাল করেছে। বিজেপি পার্টি চিকিৎসক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এমন ভিডিও বানাবে বলে মনে হয় না।