দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : গড়িয়েছে দিন, পেরিয়েছে মাস, কেটে গিয়েছে বছর। একে একে ৪টি বছর কেটে গেলেও খোঁজ মেলেনি নাজিব আহমেদের। তিনি মাইক্রোবায়োলজির ছাত্র হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে। মাত্র সাত দিন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মাহি মান্ডভি হস্টেল’-এ। তার পরই অক্টোবরের ১৪ তারিখ ‘এবিভিপি’ অর্থাৎ ‘অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ’-এর ছাত্রদের হাতে তিনি শারীরিক ভাবে নিগৃহীত হন বলে অভিযোগ। ১৫ তারিখ থেকে নাজিবকে আর কেউ কখনও দেখেননি।
নাজিবের মা দিল্লি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। দিল্লি হাইকোর্টে ‘হেবিয়াস কর্পাস’ পিটিশন ফাইল করেন। হাইকোর্ট পুলিশের তদন্তে বার বার অসন্তোষ প্রকাশ করে। নাজিবের সম্পর্কে তথ্য দিতে পারলে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষিত হয়। পুরস্কারের অর্থমূল্য পরে দশ লক্ষ করা হয়। পরিবার আর ছাত্র বিক্ষোভে বিশ্ববিদ্যালয় উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল। তাই ‘সিট’ গঠিত হয়। কিছুতেই কাজ হয়নি। ২০১৭ সালের মে মাসে নাজিবের তদন্তের ভার সিবিআইকে দেওয়া হয়।
সিবিআই তদন্ত চালাচ্ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক কোণে অনুসন্ধানকারীরা পৌঁছে গিয়েছিলেন। তবে সবই দেরিতে। যেমন সিবিআই কেস হাতে নেওয়ার আড়াই মাস পরে নাজিবের মোবাইল ফরেন্সিক-এ পাঠায়। পরীক্ষার ফল জানা যায় আরও ছ’মাস পরে। এই ভাবে সময় এগিয়ে চলে, প্রতিবাদ স্তিমিত হয়ে আসে, বিশ্ববিদ্যালয় আগের ছন্দে ফিরে আসে। তার পর গত অক্টোবরে সিবিআই কোর্টকে জানায়, নাজিবের হারিয়ে যাওয়ার কারণ হিসাবে কোনও অপরাধের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। অতএব ৮ অক্টোবর কেস ক্লোজ করে দেওয়ার প্রার্থনা মঞ্জুর হয়ে যায়।
মেধাবী ছাত্র নাজিবের এই ‘ভ্যানিশ’ হয়ে যাওয়া শুধু তাঁর পরিবার বা তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষতি, এমনটা নয়। সেই তরুণের জীবনে ঠিক কী ঘটেছিল বা এখন তিনি কোথায়, কেমন আছেন বা সত্যিই আছেন কি না— এই সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার অধিকার প্রত্যেক ভারতবাসীর আছে। আমাদের দেশ বিরাট। কত মানুষই তো এ দেশে হারিয়ে যান, অনুসন্ধান চলে, প্রমাণের অভাবে খাতা বন্ধ হয়ে যায়। তবু নাজিবের হারিয়ে যাওয়াটা অনেক আলাদা। নাজিব এ দেশে বড় হয়েছেন কিন্তু দেশটা কি ঠিক তাঁর ছিল? এই মুহূর্তে নাজিবদের কি কোনও দেশ আছে?