দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: ‘লাভ জিহাদ’ আইনের প্রথম কেসেই হোঁচট খেল যোগী সরকার! মুসলিম যুবক জোর করে ধর্মান্তরণ করেনি, এমনটাই জানাল আদালত। দেশে ‘লাভ জিহাদ’ আইন (জোর করে ধর্মান্তরণ) প্রথম এনেছিল উত্তরপ্রদেশ। উদ্দেশ্য, বৈধ মুসলিম দম্পতিকে হেনস্থা। পুলিশ-প্রশাসনকে দিয়ে কম চেষ্টা করেনি যোগীর প্রশাসন। তারপরও পরাজয় স্বীকার করে নিতে হল তাদের। আদালতে যোগী সরকারকে স্বীকার করে নিতে হল, জোর করে ধর্মান্তরণ করেনি ওই মুসলিম যুবক। তার বিরুদ্ধে এমন কোনও প্রমাণও মেলেনি।
মাত্র ক’দিন আগের ঘটনা। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর। তার ঠিক দু’দিন আগেই তথাকথিত ‘লাভ জিহাদ’ আইন পাস করিয়েছে যোগী সরকার। এই আইনে নাদিম (৩২) ও তার ভাই সলমনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। উত্তরপ্রদেশে ‘লাভ জিহাদ’ আইনের প্রথম শিকার তারাই। তারপর অবশ্য এই আইনে আরও অনেককে গ্রেফতার ও হেনস্থা করেছে যোগীর পুলিশ। তবে প্রথম কেসেই মুখ পুড়ল যোগী সরকারের। ইলাহাবাদ হাইকোর্টে শুনানি চলাকালীন উত্তরপ্রদেশ সরকার মেনে নিতে বাধ্য হল, জোর করে ধর্মান্তরণের সঙ্গে নাদিম ও সলমন জড়িত নয়। তাদের বিরুদ্ধে এমন কোনও প্রমাণও নেই। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে একাধিক নাগরিক সংগঠন।
তাদের বক্তব্য, বিনা কারণে শুধুমাত্র মুসলিমদের নিশানা করতেই যোগী সরকার যে এই আইন করেছে তা আরও একবার প্রমাণিত হল। ইলাহাবাদ হাইকোর্টের কড়া নির্দেশ, নাদিমের বিরুদ্ধে পুলিশ যেন কোনও ব্যবস্থা না নেয়। শুধু তাই নয়, নাদিমকে সুরক্ষা দিয়ে হাইকোর্ট সাফ জানিয়ে দিয়েছে, পরবর্তী শুনানির আগে পর্যন্ত যেন তাদের (নাদিম, সলমন) পুলিশ গ্রেফতার না করে। মামলার পরবর্তী শুনানি ১৫ জানুয়ারি। এই প্রসঙ্গে নাদিমের আইনজীবী ফরমান আহমদ নাকভি জানান, ‘আজ মামলাটি যখন হাইকোর্টে ওঠে তখন উত্তরপ্রদেশ সরকার একটি হলফনামা দেয়। সেখানে বলা হয়েছে, ধর্মান্তরণ বিরোধী আইনে দায়ের হওয়া এফআইআরে নাদিম ও সলমনের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া দেখা গিয়েছে ঠিক হয়নি। এবং তদন্তে এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি যার থেকে বলা যায়, নাদিম বিয়ের জন্য কোনও হিন্দু মহিলাকে জোর করে ধর্মান্তরণের চেষ্টা করেছে। সংবিধানের ২৫ নম্বর ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, যে কেউ তার পছন্দের ধর্ম বেছে নেওয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ স্বাধীন। আর এখানে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, যোগী সরকার সেই সেই ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে চাইছে।’
রাজ্য সরকারের তরফে এ দিন যুগ্ম ডিরেক্টর অবদেশ পান্ডে আদালতে ৬ পাতার একটি সংক্ষিপ্ত হলফনামা পেশ করে বলেন,‘তদন্তকারী অফিসার অনুসন্ধান করে দেখেছেন এটা জোর করে ধর্মান্তরণের কোনও মামলা নয়। এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি যা থেকে বলা যায় নাদিম জোর করে পারুল নামের ওই মহিলার ধর্মান্তরণের চেষ্টা করেছিল।