দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: হাথরস কাণ্ডে ধর্ষকদের বাঁচাতে যতটা চেষ্টা চালিয়েছে যোগী সরকার, সিবিআই চার্জশিট পেশ করার পর ঠিক ততটাই বেকায়দায় পড়ল উত্তর প্রদেশ সরকার।
হাথরস কাণ্ডে তথ্য–প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছে যোগী–রাজ্যের পুলিশ? সেদিকেই ইঙ্গিত করছে সিবিআই–এর চার্জশিট।
সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি সূত্রে খবর, চার্জশিটে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে, দলিত তরুণীকে ধর্ষণ করেই খুন করা হয়েছে। চার্জগঠন করা হয়েছে ওই চার অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি গোটা চার্জশিটের বেশ কয়েকটি জায়গায় পুলিশি তদন্তের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ তুলেছে সিবিআই।
তদন্তকারী সংস্থার অভিযোগ, শুরুতে নির্যাতিতার বয়ানই রেকর্ড করেনি পুলিশ। অভিযোগ দায়েরে শুধু বিলম্বই নয়, তরুণীর যৌন নির্যাতনের অভিযোগকে দু’বার এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। যার জেরে মেডিক্যাল পরীক্ষাতেও অনেক দেরি হয়েছে। সময় নষ্ট হওয়ায় অনেক ফরেন্সিক তথ্য–প্রমাণ হাতে আসেনি।
গত ২৯ ডিসেম্বর ওই ধর্ষিতা তরুণীর মৃত্যুতে তোলপাড় হয়েছিল গোটা দেশ। নির্যাতিতা বারেবারেই অভিযোগ করেছিলেন, তাঁকে ধর্ষণ করা হয়েছে। শারীরিক নির্যাতন চালানো হয় তাঁর ওপর। তাঁকে শ্বাসরুদ্ধ করে খুন করার চেষ্টা হয়েছে। গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হ্যাঁচরাতে হ্যাঁচরাতে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাজরা খেতের ওপর দিয়ে। শুধু এখানেই থেমে থাকা নয়। তরুণীর মৃত্যুর পর পরিবারের অসম্মতি সত্ত্বেও রাত দু’টোর সময়ে তাঁর দেহ দাহ করেছে যোগীর পুলিশ। যদিও পোস্টমর্টেম রিপোর্টে দাবি, যৌন নির্যাতনের কোনও চিহ্ন মেলেনি নির্যাতিতার শরীরে। তবে গোপনাঙ্গে আঁচড়ের দাগ পাওয়া যায় বলে জানানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ক্লিনচিট দেওয়া হয় ওই চার অভিযুক্তকে।
চার্জশিটে সিবিআই জানাচ্ছে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর চাঁদপা থানার পুলিশকে যখন গোটা ঘটনা জানাচ্ছিলেন ওই নির্যাতিতা, পুলিশ তা লিখে রাখেনি। পুলিশের খাতায় বয়ান তোলা হয়েছে পাঁচদিন পর। তার ভিত্তিতেই মেডিক্যাল পরীক্ষা হয় ২২ সেপ্টেম্বর। অর্থাৎ ঘটনার ৮ দিন পর। এই দেরির কারণেই অনেক মেডিক্যাল প্রমাণ নষ্ট হয়ে গেছে। ওই ১৪ সেপ্টেম্বরে বয়ানেই ‘জবরদস্তি’ অর্থাৎ ‘বলপ্রয়োগ’ শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন নির্যাতিতা। পুলিশ তা এড়িয়ে গেছে। না মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে, না ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়েছে। তারপর ১৯ ডিসেম্বর দলিত তরুণী ফের বয়ানে ‘হেনস্থা’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। ওইদিন ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারায় মামলা দায়ের হওয়া সত্ত্বেও তরুণীর মেডিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থা করেনি পুলিশ। ২২ ডিসেম্বরের বয়ানে ‘ধর্ষণ’ শব্দটির প্রয়োগ করেন নির্যাতিতা। তারপরই মেডিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয় পুলিশের তরফে। সিবিআই জানাচ্ছে, নির্যাতিতা উল্লেখ করা সত্ত্বেও শুরুতে দু’জন অভিযুক্তের নাম নেয়নি পুলিশ। অর্থাৎ প্রথম লিখিত বয়ানেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে দু’জনের নাম। জানানো হয়েছে, ‘অভিযুক্ত’ পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।