দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মীর নিসার আলীর (তিতুমীর) নাম উজ্জ্বল হয়ে আছে। তিনি সর্বপ্রথম ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে লড়াই করে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আজ ১৯ নভেম্বর, এই দিনে ব্রিটিশ বাহিনীর সাথে অসম যুদ্ধে তিনি শহীদ হয়েছিলেন।
স্মৃতির পাতা উলটে আরও একবার স্মরণ করে নিই এই বীর মুসলিম বাঙালী যোদ্ধাকে। ব্রিটিশ সরকারের পাশাপাশি তাঁর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল অত্যাচারী হিন্দু জমিদার ও ধনী মুসলমানও। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় তিতুমীর ও তার অনুসারীদের সাথে স্থানীয় জমিদার ও নীলকর সাহেবদের মধ্যে সংঘর্ষ হতে থাকে। ঐতিহাসিক সুপ্রকাশ রায়ের ভাষায় তিতুমীরের এই সংগ্রাম ছিল প্রকৃত কৃষক বিদ্রোহ যার অভিমুখ ছিল অত্যাচারী জমিদার ও নীলকর সাহেবরা।
তিতুমীর তাঁর গ্রামের দরিদ্র কৃষকদের সাথে নিয়ে জমিদার এবং ব্রিটিশ নীলকদের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তিনি এবং তার অনুসারীরা তৎকালীন হিন্দু জমিদারদের অত্যাচারের প্রতিবাদে ধুতির বদলে ‛তাহ্বান্দ’ নামে এক ধরনের বস্ত্র পরিধান শুরু করেন। তিতুমীর হিন্দু জমিদার কৃষ্ণদেব রায় কর্তৃক মুসলমানদের উপর বৈষম্যমূলকভাবে আরোপিত ‛দাড়ির খাজনা’ এবং মসজিদের করের তীব্র বিরোধিতা করেন।
তারপর তাঁর বিরোধিতা আছড়ে পড়ে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে। তারা সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হয়। ১৮৩১ সালের ২৩শে অক্টোবর বারাসতের কাছে বাদুড়িয়ার ১০ কিলোমিটার দূরে নারিকেলবাড়িয়া গ্রামে তাঁরা ইতিহাসে বিখ্যাত ‛বাঁশের কেল্লা’ তৈরি করেন। বাঁশ এবং কাদা দিয়ে তারা দ্বি-স্তর বিশিষ্ট এই কেল্লা নির্মাণ করেন। সেখানে তিনি দেশীয় প্রযুক্তিতে সেনা প্রশিক্ষণ দিতে থাকেন, দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র জোগাড় করতে থাকেন।
১৪ নভেম্বর কর্নেল হার্ডিং-এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ সৈন্যরা ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার অনুসারীদের আক্রমণ করে। তাদের সাধারণ তলোয়ার ও হালকা অস্ত্র নিয়ে তিতুমীর ও তার সৈন্যরা ব্রিটিশ সৈন্যদের আধুনিক অস্ত্রের সামনে টিকতে পারে নি। ১৯ নভেম্বর তিতুমীর ও তাঁর চল্লিশজন সঙ্গী যুদ্ধরত অবস্থায় সেই বাঁশের কেল্লাতেই প্রাণ হারান।
তবে তাদের অদম্য সাহস ও মজবুত ইরাদা আজও স্মরণীয় হয়ে আছে।