দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: মোদীর রাজ্য গুজরাতে ১০ বছর ধরে উচ্চশিক্ষিত তিন ভাইবোনকে অন্ধকার ঘুপচিতে বন্দি করে রাখার অপরাধে তাদের বাবাকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তিনজনেই উচ্চশিক্ষিত এবং মানসিকভাবে সুস্থ। এঁদের প্রত্যেকেরই বয়স ৩৫ থেকে ৪৫-এর মধ্যে। এক সমাজসেবী সংস্থা খবর পেয়ে পুলিশকে সব জানায়। পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ওই তিন জনের বাবা তাঁদের গৃহবন্দি করে রেখেছিলেন। তিন ভাইবোন তা মেনেও নিয়েছিলেন। তাঁদের বয়স্ক বাবা নবীন মেহতাকে পুলিশ গ্রেফতার করে জেরা করছে। সবারই চিকিৎসা চলছে।
এই ঘটনায় সাড়া পড়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, তিন সন্তানকে কেন এভাবে বন্দি করে রাখলেন বাবা? পুলিশ জানিয়েছে, রাজকোটের কিসানপাড়ায় থাকে মেহতা পরিবার। নবীন মেহতা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী। মাসিক ৩৫ হাজার টাকা পেনশন পান। তাঁর স্ত্রী ১০ বছর আগে মারা গিয়েছেন। পরিবারে বর্তমানে চার সদস্য থাকলেও বাড়িতে শুধুমাত্র নবীনকেই দেখতে পেতেন পড়শিরা। নবীন দোকান বাজার সবই করতেন। কিন্তু তাঁর ছেলেমেয়েদের বাইরে কেউ বেরোতে দেখতেন না। নবীনের বড় ছেলে ওকালতি করছিলেন। ছোট ছেলের বয়স প্রায় চল্লিশ। তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক এবং মেয়ে সাইকোলজিতে স্নাতকোত্তর। প্রত্যেকেই উচ্চশিক্ষিত।
প্রতিবেশীরা ভাবতেন চাকরি বা কাজের সূত্রে ছেলেমেয়েরা হয়তো বাইরে থাকেন। বাড়ি আসেন না। কিন্তু কৌতূহলপ্রবণ কোনও এক প্রতিবেশীর সন্দেহ হওয়ায় তিনি এক সমাজসেবী সংস্থাকে সব জানান। সেই সংস্থা পুলিশে খবর দিলে পুলিশ দরজা ভেঙে তাঁদের উদ্ধার করে। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ঘরের চার দিকে ছড়িয়ে ছিল মল মূত্র, পচা খাবার, আধখাওয়া খাবার। আর মেঝেতে পড়ে রয়েছে কঙ্কালসার তিনটি মানুষ। তাঁদের গায়ে কোনও পোশাক নেই। সমাজসেবী সংস্থার কর্ণধার জানান, দু’জন ছেলের চুল বেড়ে হাঁটু পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। দাড়ি বেড়ে যাওয়ায় মুখটাই ঠিক করে বোঝা যাচ্ছিল না।
নবীন মেহতা দাবি করেছেন, ১০ বছর আগে তাঁর স্ত্রী মারা গিয়েছিলেন। মায়ের মৃত্যুতে প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিল ছেলেমেয়েরা। মানসিক আঘাত পেয়ে হঠাৎই নিজেদের গৃহবন্দি করেন তাঁরা। নবীনের দাবির সত্যতা পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। প্রতিবেশীদের দাবি, এর পিছনে রয়েছে অন্ধ কুসংস্কারের প্রভাব। সন্তানদের ‘কালো জাদু’-র প্রকোপ থেকে বাঁচাতেই এমন পদক্ষেপ করেছেন তিনি।