দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: কবি আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, ‘ যুদ্ধে যদি আকাশ ঢাকে / সূর্য তবে উঠবে কোথায়।/ মাটি যদি রক্ত মাখে/ ফুল গুলো সব ফুটবে কোথায় ? কিন্তু কবিতা দিয়ে তো আর রাজনীতি হয় না। কবির কথায় কিসসু আসে যায় না। বিশ্ব রাজনীতির ময়দানে কার কত শক্তি কার কত অস্ত্রের ভাণ্ডার রয়েছে তা নিয়ে রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে। অস্ত্রের ঝনঝনানি শুনলে যেন আপামর বিশ্ববাসী থরহরি কম্পমান হয়। তাই পাহাড় প্রমাণ সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরাতে বাজানো হয় যুদ্ধের বাদ্য। অনেক পরিকল্পনা করে ছক কষে চাপিয়ে দেওয়া হয় যুদ্ধ। পছন্দের সরকার বসিয়ে সেই দেশকে নিজের ক্ষমতায় রাখতে সেনা অভ্যুত্থান ঘটানো হয়। তারপর নির্বাচিত সরকারের রাষ্ট্রপ্রধানকে কাটাতে হয় কারাগারের অন্ধকারে। আর সেই সুযোগে সংশ্লিষ্ট দেশের মূল্যবান খনিজ সম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার কুক্ষিগত করে যুদ্ধবাজ শকুনী ও হায়নার দল।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পর এই ফর্মুলাতেই চলছে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই। আর লোলুপ রাষ্ট্রনেতাদের অস্ত্র প্রতিযোগিতার বিষবাষ্পে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে ৭৫০ কোটি মানুষের বাসযোগ্য পৃথিবীর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পর থেকে বিগত সাড়ে সাত দশকে শুধু মার্কিন যুদ্ধে ৩৭ দেশের অত্যন্ত ৩ কোটি মানুষের অকাল মৃত্যু হয়েছে। যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহতের প্রায় দ্বিগুণ। পাশাপাশি ২০০০ সালের পর থেকে অর্থাৎ ৯ – ১১ পরবর্তী গত ২০ বছরের যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৮ লক্ষাধিক এবং আবার গৃহহীন হয়েছেন ৩ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ। মার্কিন নেতৃত্বে ন্যাটো জোটের অংশগ্ৰহণে কথিত সন্ত্রাস – বিরোধী এই যুদ্ধে শুধুমাত্র আমেরিকার খরচ হয়েছে আনুমানিক ৬.৪ ট্রিলিয়ন ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় ৪৬,৯৭, ২৫,৭৬,০০,০০০ টাকা। ‘ গ্লোবাল রিসার্চ সেন্টার ফর রিসার্চ অন গ্লোবালাইজেশন এই খতিয়ান প্রকাশ করেছে।
রিসোর্টটি তৈরি করেছেন প্রখ্যাত মার্কিন ইতিহাসবিদ জেমস এ লুকাস। এই চাঞ্চল্যকর রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৯/১১ – র পর সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান,লিবিয়া, পাকিস্তান, লেবানন, সোমালিয়া, ইয়েমেন প্রভৃতি দেশে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধ চাপিয়ে দেন তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশ। বেছে বেছে মুসলিম দেশগুলোর ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দিতে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। এই যুদ্ধে ৮ লক্ষ ১০ হাজার মানুষকে হত্যার পাশাপাশি প্রায় ৭৫ হাজার মুসলিম সারাজীবনের জন্য পঙ্গু ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়েছেন। একইসঙ্গে পৌনে ৪ কোটি মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়েছেন।
৬.৪ ট্রিলিয়ন ডলার খরচ করে ৮ মুসলিম দেশে এই হত্যালীলা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট। পশ্চিমাদের যুদ্ধ বিমান থেকে ফেলা নানা রকম বোমা ও সেনাদের ছোঁড়া গুলি, কামান , বারুদে ধ্বংস হয়েছে এদের বসতবাড়ি। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রত্যেক নিহতের বিপরীতে আরও দশ গুণ মানুষ আহত হন। সেই হিসেবে গত ৭৫ বছরে ৩ কোটি মানুষ নিহত হলে আরও অত্যন্ত ৩০ কোটি মানুষ আহত হয়েছেন।