Friday, March 29, 2024
Latest Newsফিচার নিউজরাজ্য

ফুটো টিনের চাল, ছিটে বেড়া ও ভাঙা ঘর! প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও অনন্তর স্বপ্ন শিক্ষক হওয়া

রাজেন্দ্র নাথ দত্ত, দৈনিক সমাচার, মুর্শিদাবাদ : গ্রামে ঢুকতেই চোখে পড়বে ভাঙাচোরা জীর্ণ মাটির চালা ঘর। শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর ওই চালা ঘরেরই কৃতী সন্তান অনন্ত। মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দী শহর থেকে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার দূরে আমজুয়া গ্রামে বাড়ি অনন্ত মণ্ডলের। এ বছর সাদল অঞ্চল সাধারণ বিদ্যাপীঠ থেকে ৬৫৬ নম্বর পেয়ে খড়গ্রাম ব্লকে সম্ভাব্য প্রথম হয়ে মাধ্যমিক পাশ করে নজর কেড়েছে সে।

বাবা প্রভাত মণ্ডল, তিনি মাধ্যমিক পাশ, পেশায় দিনমজুর। মা ফুলকরি মন্ডল মাধ্যমিকের গণ্ডিও পেরোননি। পরিচারিকার কাজ করে সামান্য টাকা পান। তাতে কোনও রকমে খাওয়া-পরা চলে। এক জনের পড়ানোর খরচ জোটাতেই হিমশিম খেতে হয় তাঁকে। ছেলে ভালো ফল করলেও মা ফুলকরি মণ্ডলের চোখে জল। তিনি বলেন, এর পরের পড়ার খরচ জোটাব কী করে? সারা মাস হাটুভাঙ্গা খাটনির পরে, হাতে তো সামান্য টাকা আসে। সেটা দিয়ে সংসারের বোঝা ঠেলব, নাকি পড়াব? সরকার যদি সাহায্যে করে তাহলে শিকে ছিড়বে।

ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় ডুবে থাকা ফুলকরি দেবী বলেন, প্রশাসন যদি একটু পাশে দাঁড়ায়, তা হলে ছেলে বড় হতে পারে। পাকা বাড়ি যদি সরকার থেকে পায়, বহুদিন ধরে আশায় আছি তাহলে মাথা গোজার ঠাঁইটা হয়। ভরা বর্ষা কালের বৃষ্টি হলে চালা ঘর ভেঙে পড়তে পারে। মাটির চালা ভেঙে পড়লে সারানোর ক্ষমতাটাও নেই। অনন্ত বলে, ইচ্ছে আছে, বড় হয়ে শিক্ষক হওয়ার। কিন্তু সে ইচ্ছে পূরণ হবে কি না জানি না। ঘরের চাল নুয়ে এসেছে। বাড়িতে কোন টিভি নেই।

সে সকাল, সন্ধ্যা, এমন কি রাত্রি জেগে পড়ে যেতে পারে। সেখান থেকেই , ইংরেজি, ভূগোল, ইতিহাস, ভৌত বিজ্ঞান -সহ সব বিষয়ে ‘লেটার’ নম্বর, অঙ্কে একশো তে একশো নিয়ে পাশ করেছে অনন্ত। মেধাবী ছেলেটি জানায়, পড়ার কোনও বাঁধাধরা সময় ছিল না। ছিল না সুযোগও। বাড়ির কাজ ও বাবার সাথে মাঠে দিন মজুরির কাজ গুছিয়ে যখনই ফুরসত মিলত, পড়তে বসে যেত। স্থানীয় চার শিক্ষক তার মেধা ও চেষ্টা দেখে বিনা পারিশ্রমিকে পড়া বুঝিয়ে দিতেন।সেই শিক্ষক রাজেন্দ্র মার্জিত, স্বপন পাল, রাজেশ পাল, সুখেন মার্জিতরা বলেন, ছেলেটি বরাবরই পড়াশোনায় খুব ভাল। পরবর্তী পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে সাহায্যের বড় দরকার। অনন্ত বাংলায় ৯০, ইংরেজিতে ৮০, অঙ্কে ১০০, ভৌত বিজ্ঞানে ৯৩, জীবন বিজ্ঞানে ৯৩, ইতিহাসে ৯৭ এবং ভূগোলে ৯৭ নম্বর পেয়েছে। কয়েকদিন বাদে মার্কশিট দেওয়া হবে স্কুলে। তারপর কীভাবে একাদশ শ্রেণিতে ছেলেকে ভর্তি করিয়ে ভবিষ্যতে আরও পড়াবেন, সে নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন বাবা এবং মা।

 

আরও খবরাখবর পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রূপে

Leave a Reply

error: Content is protected !!