Thursday, March 28, 2024
Latest Newsদেশফিচার নিউজ

‛কাফিল খানের মুক্তি চাই’ – দাবিতে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া!

ছবি : সংগৃহিত

দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : মানবতাবাদী ডাক্তার কাফিল খানকে জেলে বন্দি রেখেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। সূত্রের খবর বর্তমানে তিনি জাতীয় নিরাপত্তা আইনে বন্দি। প্রথমে তাঁকে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএএ আইন বিরোধী আন্দোলনে উত্তেজক ভাষণ দেওয়ার অপরাধে গ্ৰেফতার রা হয়েছিল। কিন্তু সেই মর্মে তথ্য প্রমাণ না দিতে পারায় চলতি বছরের মে মাসের শেষের দিকে জামিন পেয়ে যান কাফিল। কিন্তু মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসার আগের মূহূর্তে তাঁর বিরুদ্ধে এনএসএ ধারা লাগিয়ে দেয় ইউপি পুলিশ। এই আইনটি এমনই আইন যে, বিনা বিচারে দীর্ঘ দিন আটকে রাখার যায়।

সম্প্রতি ডাঃ কাফিল খান জেল থেকে একটা চিঠি লিখে জেলের মধ্যে কেমন নরক যন্ত্রণায় আছেন তা উল্লেখ করেন। তার আগে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এক দীর্ঘ চিঠিতে তিনি জানান, এ করোনা মহামারির সময়ে দেশবাসীর সঙ্গে থেকে, কাছ থেকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে চান। এছাড়া চিঠিতে দেশের প্রতি তাঁর পূর্ণ ভালোবাসার কথাও উল্লেখ করেছিলেন কাফিল। ডাঃ কাফিল খানের স্ত্রী প্রশ্নে তুলেছেন, কাফিলের মতো মানব দরদি ত্যাগী মানুষের বিরুদ্ধে কিসের ভিত্তিতে এনএসএ লাগানো হয়েছে তা জানতে চাই। তিনি বার বার একটাই কথা বলতে চান, একজন ডাক্তার কখনও দেশের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারেন না। সরকার তাঁর পরিবারের প্রতি নির্দয় আচারণ করছে। ছোট্ট মেয়ে প্রতিদিন জানতে চায় বাবা কোথায়। আমি বলতে পারি না। দেশের মানুষের জন্যে কাফিল জেলে আছে, দেশের মানুষ বুঝতে পারছেন তাঁর ওপর সরকার কি ব্যবহার করছে। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে জানান, আমাদের লড়াই আমরা লড়বো।

সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের সমাজকর্মী বিনয় দুবে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে ডাক্তার কাফিল খানকে মুক্ত করার শপথ নিয়েছেন। তিনি দেশের আইনজীবী ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করেন, যে বা যারা ডাক্তার কাফিল খানকে মুক্ত করে আনবেন দেশবাসীর কাছ থেকে ভিক্ষা করে তাকে এক কোটি টাকা সাহায্য করবেন। এই ঘোষণার পরপরই অগণিত আইনজীবী ও অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা তাঁকে জানিয়েছেন তাঁরা কোনরকম পারিশ্রমিক ছাড়াই কাফিল খানের জন্যে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, আগামী ১৫ জুলাই জামানতের জন্যে শুনানি আছে। সেদিন বিভিন্ন রাজ্য থেকে একঝাঁক আইনজীবীদের সঙ্গে নিয়ে তিনি উপস্থিত থাকবেন। এই দিনটির জন্যে তিনি আরও কয়েকটি আবেদন করেছেন, ১৫ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে ডাঃ কাফিল খানের মুক্তির দাবিতে ট্রেণ্ড চালাতে এবং সম্ভব হলে কিছু কিছু আর্থিক সাহায্য করতে।

বিনয় দুবের এই আবেদনে সাড়া দিয়ে বিগত চারদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়াতে হ্যাশট্যাগ দিয়ে ট্রেণ্ড চলছে। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ট্যুইটার, ইনস্টাগ্ৰাম সর্বত্র একটাই পোস্ট কাফিল খানের মুক্তি চাই, ন্যায় বিচার চাই ডাঃ খানের। তাৎক্ষণিকভাবে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্ৰুপও তৈরি হয়েছে ডাঃ কাফিল খানের মুক্তির দাবিতে। এছাড়াও বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে পোস্ট হচ্ছে ডাক্তার কাফিল খানের মুক্তি চাই। অনেক এমন কিছু ভিডিও পোস্ট করেছেন, যাতে দেখা যাচ্ছে কোমর জল পেরিয়ে ময়লা পোশাকের ছোট্ট শিশুকে কোলে তুলে নিয়ে এক হাত দিয়ে বুকে স্টেথো ধরছেন ও ওষুধ খাওয়ার নিয়ম লিখে দিচ্ছেন। প্রশ্ন উঠেছে, এমন মানবিক ডাক্তার জেলে, এটা ভাবা যায় না।

একজন ডাক্তারের এই চরম হেনস্থা ও জেল হাজত নিয়ে দেশের ডাক্তার সংগঠনগুলোর নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। বিশেষত গতবছর বঙ্গে এনআরএস হাসপাতালের ঘটনায় ডাক্তার আন্দোলনকে ডাক্তার বিদ্রোহ বলে কটাক্ষ করতেও তারা ছাড়ছে না। প্রশ্ন উঠছে, কাফিল খান কি ডাক্তার নয়? এখন কেন দেখা নেই সেই সব আন্দোলনকারী ডাক্তারদের। বিশেষত এক ভট্টাচার্য ডাক্তার বাবুর নাম করে তীব্র প্রশ্ন কোথায় গেল আপনার দীপ্তকণ্ঠের ঘোষণা বা দাবি – ভারতবর্ষের যেখানেই কোনও ডাক্তারের ওপর নির্যাতন বা অবিচার হবে আমরা তার বিরুদ্ধে এমনভাবে গর্জে উঠবোই । কোথায় গেলেন মুখ্যমন্ত্রীর সামনে মুখরোচক ডায়লগ, আমরা ডাক্তার, আমরা ধর্ম বিচার করি না। ১৯-এর মহাবিদ্রোহের নায়ক আজ কোথায়? অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন এই ডাক্তারের নামের সাথে খান আছে বলে ডাক্তার স্বীকৃতি নেই। আর কোথায় গেলেন সেই সব সোশ্যাল মিডিয়া বিপ্লবীরা। যারা সেদিন ডাক্তারদের অপমানের বিরুদ্ধে গর্জন করেছিলেন।

 

আরও খবরাখবর পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রূপে

Leave a Reply

error: Content is protected !!