ওলীদ আবু বকর : পৃথিবীর সব জাতির আনন্দ-উৎসবের নির্দিষ্ট কিছু দিন আছে। কারন প্রত্যেকের জীবনেই আনন্দ-উৎসবের প্রয়োজন আছে।
মুসলমানদের ‘ঈদ’ অন্যসব জাতির আনন্দ-উৎসবের চেয়ে পৃথক ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। অন্যান্য উৎসব মানুষ নিজেদের ইচ্ছে মতো তৈরী করে নিয়েছে। কিন্তু ‘ঈদ’ মহান রবের পক্ষ থেকে সৃষ্টি জগতের জন্য আনন্দের উপহার। একারণে ঈদের আনন্দের মধ্যে খারাপ কিছু নেই।
ঈদ মানে – খুশি, আনন্দ। মূলত আরবী ভাষায় ঈদ অর্থ – ফিরে আসা। খুশি ও আনন্দের সংবাদ নিয়ে ঈদ বারবার আমাদের মাঝে ফিরে আসে, সেজন্য ‘ঈদ’। সারা বিশ্বের প্রায় দেড়শ কোটি মুসলমানের হৃদয়জুড়ে ঈদ আসে প্রতিটি বছর। ঈদের আনন্দ অনুভব করে ইসলামী সমাজের প্রত্যেক সদস্য। ঈদ ধনী-গরীব, বিত্তবান-বিত্তহীন ও সাদা-কালো সকল মুসলমানের জন্য সমান। আরবি-আজমি তথা এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, আমেরিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, ওশেনিয়া, অস্ট্রেলিয়া, দূরপ্রাচ্য যেখানেই আছে মুসলিম, সেখানেই আছে আনন্দের ঈদ।
ঈদ আনন্দ আর উচ্ছলতার নির্মল ম্যাসেজ। প্রতি চন্দ্র বছরে দুইবার এই আনন্দ মুসলমানদের মন ছুঁয়ে যায়। একটি শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে অন্যটি জিলহজ্ব মাসের দশম তারিখে। ত্যাগ ও কুরবানী বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর নিত্য সঙ্গী। মুসলমানদের দুটি ঈদেরই পশ্চাতে থাকে বৈষম্যমুক্তির অমোঘ চেতনা। পৃথিবীর আর কোনো উৎসব-অনুষ্ঠানে এর নজির পাওয়া যাবে না। ঈদুল ফিতরের আগেভাগেই সম্পদশালীরা আবশ্যিক ও ঐচ্ছিকভাবে দরিদ্রদের টাকা-পয়সা দিয়ে সহযোগিতা করে থাকে। প্রকৃত ইসলামের এ উদারতা অনবদ্য।
আবার কুরবানীর ঈদের বিষয়টি আরো বিষ্ময়কর। নিজের ঐশ্বর্যে কেনা পশু জবাই করে তার নির্দিষ্ট পরিমাণ বা তার চেয়েও বেশি গোশত অসহায়দের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া অনায়াসসাধ্য নয়। এটি কেবল ইসলামের দৌলতেই সম্ভব। ঈদ এভাবেই সামাজিক সম্প্রীতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, আনন্দকে করে অর্থবহ।
উৎসব, পার্বণ কিংবা আনন্দ-আয়োজন মানুষের সহজাত। ক্লান্তি, অবসাদ কিংবা বিষন্নতা থেকে মুক্তি পেতে নির্দোষ বিনোদন মানব মনকে করে অমলিন। সফেদ মননকে করে আরো বিশুদ্ধ।
জাতি, গোষ্ঠী, বর্ণ, ধর্মভেদে সর্ব যুগেই ছিল আনন্দ আর উৎসবের সুবিশাল আয়োজন।
ঈদকে সারা বিশ্বের মুসলমানদের আনন্দের উৎসব বলা হয়। পৃথিবীতে নানান ধরনের আনন্দোৎসব রয়েছে তন্মধ্যে ঈদ অন্যতম। ঈদ এজন্য অন্যতম যে, ঈদে কোনো অশ্লীলতা নেই, খারাপ কিছু নেই। ঈদের উৎসবে সকল ধরনের অশ্লীল কাজকর্ম অনুচিত।
ঈদ একটি অনন্য সভ্যতার প্রতীক। ঈদ এলে সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সঞ্চারিত হয় ভ্রাতৃত্ববোধ, সহমর্মিতা, সহানুভূতি এবং একজনের দুঃখ, দারিদ্র্য ও আনন্দে আরেকজনের অংশীদার হওয়ার অনুভূতি এবং আকুতি।
ঈদ হলো সুস্নিগ্ধ প্রীতিঘন মিলন উৎসব। শ্রেণি-বৈষম্য বিবর্জিত, পঙ্কিলতা ও অশালীনতামুক্ত সুনির্মল আনন্দ উপভোগ করা যায় এই পুণ্যময় দিনে।
ইসলামী শরীয়াহ্ ঈদ আয়োজনকে এমনভাবে সাজিয়েছে যেন তা হতে পারে সম্প্রীতির সংমিশ্রণ। সৌহার্দ্যের উৎসভূমি। কিন্তু ঈদকে আনন্দ ও খুশির বার্তা বলে যেভাবে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় সম্প্রচার করা হয়, আমরা তার সাথে সংযুক্ত করতে চাই- এ আনন্দকে করতে হবে অবারিত। সম্প্রীতির সৌন্দর্য ও সৌহার্দ্যের সৌকর্য ব্যতিত ঈদ আনন্দ অসমাপ্ত থেকে যাবে।
‘মুসলিম’ একটি আদর্শিক জাতির নাম। একারনে সমগ্র বিশ্বের মুসলমান একই বিশ্বাস ও বিধানের অনুসারী। সাংস্কৃতিক একই মূল ধারার অধিকারী তারা। কারন তাদের সভ্যতা সংস্কৃতি তো আল্লাহ ও রাসূল (সা.) প্রদর্শিত আদর্শ প্রসূত।
ধ্বংস হোক সকল ষড়যন্ত্রকারীর হিংস্র নখর। নিপাত যাক সকল চক্রান্তকারীর কৃষ্ণদন্ত। ঈদ হোক মজবুত সম্প্রীতির মাধ্যমে ইনসাফপূর্ণ ইসলামী সমাজ বিনির্মাণের জন্য।
ঈদের আনন্দ অফুরন্ত ও অমলিন হলেও এ আনন্দ সবার জন্য সমান নয়। ঈদ কারো কারো জীবনে দুঃখ কষ্ট বয়ে আনে। ঈদের আনন্দ, আনন্দ হয়ে আসে না ফকীর-মিসকিন কিংবা গরীব-দুঃখী আর ছিন্নমূল মানুষের ঘরে। মূলত এসব মানুষের জীবনে ঈদ হয়ে ওঠে দলা পাকানো কষ্টের আধার।
আসুন,,,,,, সবাই মিলে যাবতীয় ঈর্ষা, দ্বেষ, বৈরিভাব ও পরশ্রীকাতরতা থেকে মুক্তি পেতে ঈদ সংস্কৃতির সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য, সৌভ্রাতৃত্ব ও শৈলিকতার উন্নত চর্চা করি।
এবারের ঈদ হোক সম্প্রীতির,
সম্প্রীতির ঐশ্বর্যে দীপ্তিমান হোক আগামীর জগৎ, হৃদতার মহানুভবতায় সুবাসিত হোক অশান্ত ও আক্রান্ত এই বিশ্ব। ঈদ উৎসব হোক মনুষোচিত সম্প্রীতির গন্তব্যস্পর্শী।
সবার প্রতি ঈদ শুভেচ্ছা, সম্প্রীতির শুভ কামনা। ঈদ মোবারক, ঈদ মোবারক,
আবারো সবাইকে জানাচ্ছি
ঈদ মোবারক।