দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারকে অসন্মান করার অভিযোগে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা নিতে চায় শিবসেনা। বিধাননগর পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জকে দেওয়া চিঠিতে পশ্চিমবঙ্গ শিবসেনার রাজ্য শাখার সাধারণ সম্পাদক অশোক সরকার বলেছেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়িয়ে দিচ্ছেন রাজ্যপাল। রাজ্যপাল বহুবার এমন মন্তব্য করেছেন যাতে বাঙালি ও বাংলার সংস্কৃতির প্রতি অবমাননা হয়েছে বলে মনে করেন অশোক বাবু। রাজ্যপালের সেই সব মন্তব্য বাংলার অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। তাই তিনি রাজ্য পুলিশের কাছে দাবি জানিয়েছেন বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে।
পুজোর পরেই যখন এরাজ্যে বিজেপি তাদের প্রচার অভিযান জোরদার করার পরিকল্পনা নিয়েছে ঠিক তাঁর আগে এরাজ্যে কট্টর হিন্দুবাদী দল শিবসেনা কার্যত বিজেপির মতাদর্শের বিরুদ্ধে গিয়ে মত প্রকাশ করেছে। গোঁড়া হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল শিবসেনা এবার বিজেপির বিরুদ্ধেই ফোঁস করে তৃণমূল কংগ্রেসের পাশে দাঁড়াল। আর তার শুরুয়াত হল খোদ রাজ্যপাল জগদীশ ধনকড়ের বিরুদ্ধে। বিধাননগর পূর্ব থানায় অভিযোগ দায়ের করেন শিবসেনার তরফ থেকে পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বে থাকা আশোক সরকার, যিনি এই রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। এই অভিযোগ থানায় জমা পড়ার পর থেকে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। আগামী ২০২১-এর নির্বাচনে ধর্মীয় মেরুকরণের যে তাস খেলার চেষ্টা করছে গেরুয়া শিবির তা এবার আদৌও কতটা কাজে লাগবে তা নিয়ে সন্দেহ আরও জোরালো হয়েছে।
কারণ এদিনে এই অভিযোগ পত্রে অশোক বাবু স্পষ্টই জানিয়েছেন, গত ৬ থেকে সাত মাস ধরে রাজ্যপাল নিজের কাজ না করে কেবলই ট্যুইট করে রাজ্যকে বিঁধে চলেছেন। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে রাজ্যপালের এই ধরনের কর্মকাণ্ড আগে কখনও ঘটেনি বলে দাবি করেছেন অশোক বাবু। এখানেই শেষ নয়, শিবসেনার সাধারণ সম্পাদকের আরও অভিযোগ, এভাবেই বারংবার পশ্চিমবঙ্গকে অশান্ত করার চেষ্টাও চালাচ্ছেন তিনি। যা দেখে মনে হচ্ছে তিনি রাজ্যপালের পদ ছেড়ে বিজেপির ক্যাডারে পরিণত হয়েছেন। যা একজন রাজ্যপালের কাছ থেকে মেনে নেওয়া যায় না। শুধু তাই নয়, এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রকেও একইসঙ্গে বিঁধেছেন শিবসেনার সাধারণ সম্পাদক। তাঁর অভিযোগ বিজেপির বদন্যতার তিনি রাজ্যপালের পদে বসে রাজভবনকে দলীয় অফিসে পরিণত করেছেন। শিবসেনার তরফ থেকে দলীয় সদস্যরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও তিনি সময় দিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ জানিয়েছেন অশোকবাবু। কোভিড আবহে দেখা করা সম্ভব নয় বলে বৈঠক এড়িয়ে যাচ্ছেন।
এদিকে বিজেপির প্রতিনিধি দলকে সবসময় স্বাগত জানিয়েই চলেছেন তিনি। অর্থাৎ যাতে সুবিধা হয় সেই ধরনের কাজকর্ম তিনি একের পর এক করে চলেছেন। আর রাজ্যপাল জগদীশ ধনকড়ের এহেন ব্যবহারে এতটাই ক্ষুব্ধ অশোকবাবু যে, তিনি আর রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে চান না বলেও জানান। ফলে এতদিন যে তৃণমূলের তরফ থেকে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ তোলা হচ্ছিল তাতে যেন এদিন শিলমোহর পড়ল তা বলাই যায়। আর সেই শিলমোহর দিল বিজেপির থেকে আরও কঠোর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন শিবসেনা। আর তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও রাজ্যপালকে কটাক্ষ করে যে ‛পদ্মপাল’ বলে ভূষিত করেছিলেন তাকেও যেন এদিন সমর্থন জানাল শিবসেনার এই অভিযোগ পত্র।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আগামী বিধানসভা ভোটের আগে কি তাহলে শিবসেনা এরাজ্যেও বিজেপিকে বার্তা দিয়ে রাখলো? পদ্মের টক্কর কি তাহলে তীর ধনুক দিয়ে হবে? আর এই দুই কট্টর হিন্দুবাদী রাজনৈতিক দলের লড়াইতে কি তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করবে তৃণমূল? তীর দিয়ে কি পদ্ম কাঁটা তুলতে সক্রিয় হবেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন হাজারো প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।