দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: অসমে ফের বিজেপি ক্ষমতায় এলে সব মুসলমানকে হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করতে হবে, এমনটাই মন্তব্য করলেন কংগ্রেস বিধায়ক ওয়াজেদ আলি চৌধুরী। এর পর তিনি বলেন, হিন্দু ধর্মগ্রহণ না করলে দেশ ছাড়তে হবে তাদের। আজান বন্ধ করা হবে, নামাজ আদায়ও বন্ধ করা হবে। এখানেই শেষ নয়, কংগ্রেস বিধায়কের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্টের সাহায্য নিয়ে পাঁচশো বছরের পুরনো বাবরি মসজিদ ভেঙে সেখানে রামমন্দির গড়া হচ্ছে। লালকেল্লা, তাজমহল মুসলমানদের সম্পত্তি, তাহলে সেগুলোও ভেঙে ফেলা হোক।
বিধানসভা ভোটের আগে উগ্র সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়িয়ে ক্রমেই বিষিয়ে তোলা হচ্ছে অসমের পরিস্থিতি। একদিকে বিজেপি, অন্যদিকে কংগ্রেস এআইআইডিএফ। হিন্দু ভোট একত্রিত করতে বিজেপির জনাকয়েক প্রভাবশালী নেতা যেভাবে কটু সাম্প্রদায়িক মন্তব্য করে চলেছেন, একইভাবে মুসলিম ভোট দখলে আনতে চাইছেন আজমল, ওয়াজেদের মতো বিরোধী নেতারা। কিন্তু এর পরিণাম ভয়াবহ হতে পারে।
ওয়াজেদের দাবি অসমে বিজেপি ক্ষমতায় এলে মুসলিমদের সামনে দুটি রাস্তা থাকবে। হয়তো হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে এই দেশে থাকতে হবে, না হলে দেশ ছাড়তে হবে’। বিজেপি সরকারকে মুসলিম-বিরোধী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের আগে ব্রিটিশ সরকারের আমলে অসমে মাদ্রাসা চলছে। কিন্তু বিজেপি সরকার এখন কেবিনেট সিদ্ধান্ত নিয়ে মাদ্রাসা বন্ধ করে দিচ্ছে। মুসলিম-বিরোধী এই সরকার মুসললিমদের বিরুদ্ধে নানা আইন প্রণয়ন করছে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে নানা চক্রান্ত করা হচ্ছে’।
বাবরি মসজিদ ভেঙে রাম মন্দির নির্মাণ নিয়ে কংগ্রেস বিধায়কদের মন্তব্য, মুসলমান সাড়ে সাতশো বছর রাজত্ব করেছে এই দেশে। কিন্তু সেই দেশে পাঁচশো বছরের পুরনো বাবরি মসজিদ একদিনে সতেরো কিমি দূরে সরিয়ে দিল। বিনা কারণে বাবরি মসজিদ ভেঙে সেখানে রামমন্দির নির্মাণ করা হচ্ছে। সাড়ে পাঁচশো বছর আগে যে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল, এখন সেটাকে ভেঙে ফেলা হল। কারণ, আরএসএস বিজেপির মসজিদের মাটিতে মন্দিরের জমি বলেছে’।
ইতিহাসের উদ্বৃতি দিয়ে ওয়াজেদ আরও বলেন, সাড়ে সাতশো বছর মুসলিমরারা রাজত্ব করেছে। দিল্লি, লখনউ সেখানেই যান, যেদিকে তাকাবেন, সেদিকে মুসলিমদের চিহ্ন। যে লালকেল্লায় মোদী পতাকা সেটা মুসলিমদের সম্পত্তি, মুসলমানের সম্পত্তি, মুসলমানের বানিয়েছেন। আগ্রার তাজমহল, ‘ভারতের গৌরব। সেটাও মুসলমানের বানানো। তাহলে সেটাও ভেঙে দাও’।
আরএসএসের হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন এখন বিজেপি সরকার করছে, এমন অভিযোগ এনে বিরোধী বিধায়কের মন্তব্য, ‘দেশ বিভাজনের পর আরএসএস ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র করার দাবি করেছিল। কিন্তু আমাদের নেতা-মহাত্মা গান্ধী, খান আব্দুল খান, জওহরলাল নেহরু, সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলদের জন্যই ভারত ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলনের বিজেপির কোনও অবদান ছিল না। আরএসএসসের হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন এখন তারা করার পথে এগোচ্ছে।
কংগ্রেস বিধায়কেরর মন্তব্য, বিজেপি জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বন্ধ করে দিল। রাজ্যে মুসলমান অস্তিত্ব শেষ করে দিচ্ছে তারা। আজান দেওয়া বন্ধ করবে, নামাজ আদায় বন্ধ করা হবে, সময় আসছে। তাই একটা রাস্তা রয়েছে, এই সাম্প্রদায়িক সরকারকে উৎখাত করতে হবে ক্ষমতা থেকে। সেটা করতে না পারলে ভবিষ্যতে অসমে মুসলমানদের আর কোনও অধিকার থাকতে হবে। ব্রিটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভে মুসলমানদের আর কোনও অধিকার থাকতে হবে। ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে লড়েছিলেন মুসলমানরা। এর ফলে পরাধীনতা থেকে মুক্তি পেয়েছি আমরা। কিন্তু বিজেপির শাসনে মুসলমানদে আজ সমীক্ষায় নেই। অসম তথা মুসলমানদের স্বাধীনতা নেই, আমরা এখন পরাধীন’।