নায়ীমা আনসারী : সামাউল্লাহ মল্লিক-এর দ্বারা পরিচালিত সত্য প্রকাশে অঙ্গীকারবদ্ধ দৈনিক সমাচারে প্রকাশিত খবর “সব দোষ নিজামুদ্দিনের! এদিকে অষ্টমী স্নানে ‛হিন্দুদের’ ভিড়ে ঠাসাঠাসি কোচবিহারের নদী” খবরটি পড়লাম। পড়ে মনে হল – প্রধানমন্ত্রী মোদীজি তথা বিজেপির জামানায় ‛হিন্দুদের সাতখুন মাফ’।
ভারত সহ সারা বিশ্ব যখন করোনার ত্রাসে ত্রাহি ত্রাহি করছে, দেওয়ালে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে বিশ্বে মৃত্যু মিছিল চলছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সহ সারা বিশ্বের তাবড় নেতা মন্ত্রী, ডাক্তার, বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক করোনার কাছে অসহায়। বিজেপি নেতাদের গোমূত্র পানে, করোনা মন্ত্র পাঠে কমেনি করোনা, ভারত ছেড়ে পালিয়ে যায়নি করোনা বরং গোমূত্র পানকারিরা অসুস্থ হলে তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
করোনা শুরু হয় প্রথমে চীনে তারপর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। সোশ্যাল মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া, ফেসবুক, টুইটার হোয়াটসঅ্যাপ প্রভৃতির মাধ্যমে করোনা ছড়িয়ে পড়ার খবর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ দ্রুত জানতে সক্ষম হয়। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথম করোনা ছড়ানোর মাধ্যম বিদেশি উড়ান বন্ধ করার এবং পরে পরিকল্পিত ভাবে অভ্যন্তরীণ বিমাসেবা এবং ট্রেন পরিষেবা লও বন্ধ করার দাবি ও পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং পরে ১২ মার্চ রাহুল গান্ধী ট্যুইট করেছিলেন করোনা ভারতে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। কিন্তু তখন প্রধানমন্ত্রী মোদীজি তাতে কোনও গুরুত্ব দেননি।
১৩, ১৪, ১৫ মার্চ নিজামুদ্দিনে তবলীগ জামাত প্রশাসনের তরফ থেকে জমায়েত করার অনুমতি পায়। এই তবলীগ জামাতের জমায়েত নিয়ে যখন বিতর্ক চলছে, সেই সময় ও তারপরেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তার থেকেও বড় ধরনের ধর্মীয় ও অধর্মীয় জমায়েত হয়েছে। তারমধ্যে কোচবিহারের নদীতে অষ্টমী স্নানের জমায়েতও পড়ে। আশ্চর্যজনক, দুঃখজনক ও লজ্জাজনক বিষয় হল তবলীগ জামাতের সমালোচক গোদি মিডিয়া ঐসব ধর্মীয় ও অধর্মীয় জমায়েতকারীদের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটিও করছেনা।
যাঁরা করোনা নিয়ে এলো ভারতে, ভারত সরকারের অযোগ্যতার কারণে তারা সবাই ছাড় পেয়ে গেল। ভারতে করোনা ছড়ানোর সমস্ত দোষ পড়লো তবলীগ জামাতের ঘাড়ে। এ যেন ‛উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে’, ‛সব দোষ নন্দ ঘোষ’। ২৫ মার্চ হঠাৎ করে লকডাউন হওয়ায় মানুষ নানাভাবে নানা স্থানে আটকা পড়ল। কোথাও ছাত্ররা, কোথাও রুগীরা, আশ্রমের লোকেরা, মন্দীরে পুণ্যার্থীরা, পরিযায়ী শ্রমিকরা দিল্লিতে ও অন্যান্য স্থানে। আটকা পড়ল তবলীগ জামাতের লোকেরাও। কিন্তু গোদি মিডিয়া তবলীগ জামাত ছাড়া অন্যান্যদের ক্ষেত্রে প্রচার করল তারা ফেঁসে গেছে। কিন্তু এই মিথ্যাবাদি, ফাসাদ সৃষ্টিকারী, বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী গোদি মিডিয়া জোরে সোরে নির্লজ্জের মত প্রচার করলো নিজামুদ্দিনে লোক লুকিয়ে আছে। আর তাঁরা পরিকল্পিতভাবে ভারতে করোনা ছড়াচ্ছে।
মিডিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সত্য প্রচার করা। কিন্তু গোদি মিডিয়া মিথ্যা প্রচারে বাহাদুরি দেখালো। গদি মিডিয়ার এই মিথ্যাচারিতার প্রতি তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ধিক্কার জানাচ্ছি। তবলীগ জামাতের তথ্য প্রমানের বিবরণ অনুযায়ী তারা নির্দোষ। বরং দিল্লি প্রশাসন, কেজরিওয়াল এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্বশীলগণ তবলীগ জামাতের সাথে যে অসহযোগিতার আচরণ করেছেন তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। শুধু তাই নয় আমি মনে করি তারা যা করেছেন তার জন্য প্রথম এফআইআর হওয়া প্রয়োজন তাদের বিরুদ্ধেই।
ভারতের অযোগ্য, অপদার্থ প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় বিজেপির নেতারা মানুষকে বর্জ্য পদার্থ গোমূত্র পান করালো। তিনি বাজালেন থালা, তালি। আজ রাত ৯টায় জ্বালাবেন দেশের জনগণকে নিয়ে মোমবাতি, টর্চ, মোবাইল। এব্যাপারে ভারতের ১৩০ কোটি জনগণ কথা বলবে। তবে একটা কথা বলতেই হয় রাজা রামমোহন রায়, ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁরা কুসংস্কার মুক্ত ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন, আন্দোলন করেছিলেন। আর চাওয়ালা মূর্খ প্রধানমন্ত্রী কুসংস্কার যুক্ত ভারত গড়ার স্বপ্ন দেখছেন। বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় যখন মানব সভ্যতা উন্নতির উচ্চ শিখরে সমাসীন তখন বিজেপি নেতাদের চিন্তা ভাবনা একেবারে তলানিতে। ছিঃ! বিজেপির এধরনের কার্যকলাপের জন্য ভারত মাতার লজ্জায় মাথা হেঁট বিশ্বের দরবারে। দেশবাসীর জন্য তা বড় বেদনাদায়ক। দৈনিক সমাচার তার অঙ্গীকার নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাক এই আমাদের প্রত্যাশা।