শ্রীনগর, ২৪ অক্টোবর: আর্থিক দুরাবস্থা তাঁকে স্কুল ছাড়তে বাধ্য করেছিল। কিন্তু স্বপ্ন দেখা ছাড়াতে পারেনি। স্বপ্নের উড়ানে চেপে পাড়ি দিয়েছিলেন কাশ্মীর থেকে ব্রিটেন। স্কুলছুট সেই ছেলেই আজ ব্রিটেনের একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার মালিক। তাঁর অধীনে কাজ করেন বহ উচ্চশিক্ষিত কর্মী।
জম্মু-কাশ্মীরের বাতামালু অঞ্চলে জন্ম শেখ আসিফের। পরিবারে একমাত্র রোজগেরে ছিলেন তাঁর বাবা। জম্মু-কাশ্মীর পুলিশে কর্মরত ছিলেন তিনি। কিন্তু একার উপার্জনে সংসারের হাল বহন করা আর সম্ভব হচ্ছিল না তাঁর পক্ষে। বাবাকে সাহায্য করার জন্যই মাঝপথে পড়া থামিয়ে উপার্জন করতে শুরু করেছিলেন আসিফ।
তখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন তিনি। বরাবরই আসিফের ইচ্ছা ছিল তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা করার। সেটা আর হয়ে ওঠেনি। কিন্তু স্কুল ছাড়ার পর একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাতেই তিনি কাজে যোগ দিয়েছিলেন। টুকটাক কাজ শিখেছিলেন সেখানেই।
ছ’বছর সেখানেই কাজ করেন। তার পর ২০১৫ সালে নিজের একটি সংস্থা গড়ে তুলতে যান তিনি। কিন্তু অর্থের অভাবে সে সময় তা হয়ে ওঠেনি। ২০১৬ সালে অন্য একটি সংস্থায় কাজের সুযোগ পান আসিফ। সেই সংস্থায় গ্রাফিক ডিজাইনার হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তী ছ’মাস সেখানে কাজ শেখেন। ওই সংস্থা তার পর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আসিফকে নতুন কোনও কাজ খুঁজে নিতে বলা হয়।
দিনরাত নতুন চাকরির সন্ধান শুরু করেন তিনি। ওই বছরই লন্ডনে এক ব্যক্তি তাঁকে ডেকে পাঠান। তিনি গুগল-এ কর্মরত ছিলেন। তিনিই আসিফকে নিজের একটি অফিস গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। খুব কম খরচে কী ভাবে আসিফ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা গড়ে তুলতে পারবেন সেটিও জানিয়ে দেন তিনি।
এর মাত্র তিন মাসের মধ্যেই ব্রিটেনে ওই ব্যক্তির সঙ্গে যৌথ ভাবে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। তাঁর সংস্থা ওয়েব ডিজাইনিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক ডিজাইনিং, অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ শুরু করে।
সময়ের সঙ্গে লন্ডনের অন্যতম বড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় পরিণত হয় তাঁর সংস্থা। ম্যাঞ্চেস্টারেও বড় অফিস রয়েছে। আসিফের বেশির ভাগ সময় এখন লন্ডনেই কাটে। তবে জন্মভূমিকে ভুলে যাননি তিনি। নিজের ব্যবসা দাঁড় করানোর পরই তাই ২০১৮ সালে তিনি কাশ্মীরে ফিরে আসেন। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলছেন সেই দিন থেকেই। বিনামূল্যে পরামর্শ দেন তিনি।
অন্তত ৮০০ ছাত্রছাত্রীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করেছেন আসিফ। তাঁর ছাত্রছাত্রীরা আজ কেউ তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত, কেউ নিজের সংস্থা গড়ে তুলেছেন। স্কুল ছেড়ে যখন কাজে যোগ দিয়েছিলেন আসিফ মাইনে পেতেন দেড় হাজার টাকা। আজ তিনি কোটি কোটি টাকার সংস্থার মালিক।