দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : শালবনী ব্লকে তৃণমূল আর বিজেপি আমফানের সরকারি অনুদান ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। এই এলাকায় ঝড়ের প্রভাব ছিল না। জেলায় বরাদ্দ কুড়ি কোটি টাকা অপরিকল্পিত ভাবে ব্লকে ব্লকে দেওয়ার ঘটনাতে ব্যাপক দূর্নীতি ধরা পড়েছে। শালবনী ব্লক প্রশাসনের বক্তব্য গরিব মানুষ টাকা পাচ্ছে তা নিয়ে হইচই করার কি আছে?
এই ব্লকের ৮ নম্বর গড়মাল অঞ্চলের তৃণমূল প্রধান নিতাই ভূঁইয়া আর বিজেপি উপ-প্রধান তাদের দলের বিত্তবান এবং আত্মীয়দের ১৩৪টি পরিবারকে ঘর ভাঙা বাবদ ২০ হাজার করে টাকা পাইয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ। জলহরি মৌজার তৃণমূল নেত্রী সোমা চক্রবর্তী, মৌপাল মৌজার অর্ধেন্দু অধিকারী, বিজেপি নেতা বাগমারির সুমন্ত মানা সকলেই যথেষ্ট বিত্তবান। এদের পাকা বাড়িও আছে। তা সত্ত্বেও এদের মতো ওই ১৩৪টি পরিবারকে ‛ফিফটি ফিফটি’ ভাগে অনুদান দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
অধিবাসী রাধানাথ পাল, মুকিলেশ চক্রবর্তী সহ এলাকার অধিবাসীরা বলেন, শালবনী ব্লকে ঝড়ে একটাও ঘর না ভাঙলেও সেই বরাদ্দ টাকা যদি গরিব পরিবার, যারা জীর্ণ কুঁড়ে ঘরে বাস করেন, এখানে আবাস যোজনায় টাকা পাননি এমন লোকেদের দেওয়া হতো তাহলে বর্ষার মুখে ঘরগুলো তাঁরা সারাই করতে পারতেন। কিন্তু তা হয়নি। এমনই সাতপাটি গ্ৰাম পঞ্চায়েত এলাকায় ২৬৮ জন বিত্তবান এবং বেশিরভাগ পাকা বাড়ির মালিকদের ভাগাভাগি করে টাকা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে।
গ্ৰামবাসীদের বক্তব্য, প্রসাশন সেই তালিকা প্রকাশ করে প্রমাণ দিক যে গরিব মানুষকে টাকা দিয়েছে। পিংলা ব্লকের কুসুমদা গ্ৰাম পঞ্চায়েত এলাকায় বীরসিংহপুর বুথে চন্দনা সরেন, ফুলমণি সরেন সহ এমন ১৩টি পরিবারের ঘর চালা আমফান উড়িয়ে নিয়ে যায়। তারা নিজেরাই ভাঙা ঘরের ছবি সহ ব্লক দফতরে আবেদন জানায় ত্রিপল সহ ক্ষতিপূরণ চেয়ে। প্রসাশনের লোক গ্ৰামে ছবি তুলতে এলেও তাদের ভাঙা ঘরের ছবি না তুলে চলে যায়। তাদের একটা ত্রিপলও দেওয়া হয়নি, এখন ক্ষতিগ্রস্ত নয় এমন পরিবারগুলির কাছ থেকে অগ্ৰিম নিয়ে তাদেরই সাজানো ছবি দিয়ে রফা করা হচ্ছে ২০ হাজার টাকা আধাআধি ভাগ করার।
পটের গ্ৰাম নয়ার শেখ আবু চিত্রকর, শেখ আব্দুল চিত্রকর বলেন, তাদের নয়া মৌজায় ন’টি ঘর আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ত্রিপল বা ক্ষতিপূরণের তালিকায় তাদের নাম নেই। মালিগ্ৰাম মৌজার ঘুসুম পুকুর পাড়ায় আবেদা বিবি, সফিনা বিবি এমন সতের জনের পরিবারও নিজেদের জোগাড় করা ত্রিপল ভাঙা ঘরের চালে টাঙিয়ে বাস করছে এই বর্ষায়। এমন পরিবারগুলি সেই ভাঙা ঘরের ছবি ও জমা দেওয়া আবেদনপত্র বিডিও দফতরে জমা দিয়েছেন। বিডিও বলেছেন তদন্ত করে দেখা হবে।
গ্ৰামবাসীদের অভিযোগ , জলচক-২ নম্বর গ্ৰাম পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূল নেতা সুব্রত ভূঁইয়া, কার্তিক বেরা নিজেদের পরিবার সহ আত্মীয়দের অগ্ৰিম টাকা নিয়ে দেড় শতাধিক পরিবারকে সেই তালিকায় রেখে বেশ কিছু পরিবারে ২০ হাজার করে টাকা পাইয়ে দিয়েছে। এই দেড় শতাধিক পরিবারের মধ্যে মাত্র ৩৬ জন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত। জোহাট মৌজায় তৃণমূল নেতা অনিল মাইতি, গোকুলচক মৌজায় তৃণমূল নেতা তপন বেরা ভুয়ো তালিকা দিয়ে ঘর ভাঙার টাকা লুট করেছে বলে অভিযোগ গ্ৰামবাসীদের।