Thursday, November 21, 2024
সম্পাদকীয়

এনআরসি তালিকা প্রকাশ ও প্রয়োগ অত সহজ নয়

ছবি : নিজস্ব

চৌধুরী আতিকুর রহমান : এত তাড়াতাড়ি উতলা হবেন না। দেখলেন না বর্ষাকালীন অধিবেশনে কেমন এদিক-ওদিক করে রাজ্যসভায় ইউএপিএ সংশোধন, তাৎক্ষনিক তিন তালাক শাস্তি বিল আর ৩৭০-৩৫-এ বিলোপ বিল পাশ করিয়ে নিল। তিনটিতেই সরাসরি বা ঘুরিয়ে মুসলিমদের শায়েস্তা করা যাবে। যদিও দ্বিতীয় ও তৃতীয়টি সুপ্রিমকোর্টে ধোপে টিকবে না। মুখপোড়া বিজেপির বদন দেখার জন্যে প্রস্তুত হন। তালাক বিলের প্রয়োগ তো শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত হয়ে গেছে।

বিজেপির ঘোষিত এজেন্ডা ১৯৫৫-র নাগরিকত্ব আইনের সেকুলার চরিত্র ক্ষুন্ন করে মুসলিমদের ঘুষ-বৈঠ ঘোষণা করে বাকিদের শরনার্থি ঘোষণা করে নাগরিকত্ব দিয়ে দেবে।

এখন প্রশ্ন বিজেপি বর্ষাকালীন অধিবেশনে নাগরিকত্ব সংশোধনি বিল্টা পাশ করালো না কেন? বিজেপি আরএসএস দ্বারা পরিচালিত। দুটি সংগঠনই একালষেড়ের মত মুসলিম ছাড়া কিছু দেখে না। নিজেদের হিন্দুত্ব গন্ডির বাইরে কোনদিন কোন কিছুর পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা নেই। তা না হলে বলে ভারতের মত বিচিত্র রীতি-নীতি আর সংস্কৃতির দেশে একটাই ব্যক্তিগত আইন চালু করবে।

আসলে পাকামো করতে গিয়ে অনভিজ্ঞ বিজেপি অসমে ফেঁসে গেছে। অসমে হিন্দু-মুসলিম নয় অহমিয়ারা নিজের দেশে সংখ্যালঘু হয়ে যাওয়ার ভয়ে বিশেষ করে বাঙালি স্রোত রোধে এনআরসি চেয়েছিল। আর এখন এই স্রোত বাঙালি হিন্দুর। এই হিন্দুদের বিজেপি এনআরসি তালিকায় ঢোকাতে পারবে না। ঢোকালে জোটসঙ্গী অগপ রাজ্য অচল করে দেবে। আর তাড়ালে একই কায়দায় আসা পশ্চিমবঙ্গবাসী বন্ধু- আত্মীয়স্বজন বিজেপিকে রাস্তা দেখিয়ে দেবে। এমনিতেই দার্জিলিং নিয়ে বেকায়দায় আছে। গোর্খাল্যান্ড হলে বাঙালি বিজেপিকে মজা চাখাবে। আর গোর্খারা ল্যান্ড না পেলে গুজরাতল্যান্ডে পাঠিয়ে দেবে।

কি করবে? রোহিঙ্গারা মুসলিম বলে বাংলাদেশ নিয়ে নিয়েছে বরং জায়গা দিয়েছে বলা যায়। অহমিয়া বাঙালি হিন্দুদের না-ও নিতে পারে, নেবে না বলায় ভালো। লাখ লাখ মানুষকে ক্যাম্পে রাখলে নাগরিক দূষণ হবে। বিজেপি এনআরসি, এনআরসি করে চিৎকার করছে কারণ তার পুরনো খেলা বেআইনি পথে দাঙ্গা না লাগিয়ে আইনি পথে মুসলিমদের নাগরিকত্বহীন করে জমিজায়গা কেড়ে নিয়ে ভূমিহীন দলিতদের মধ্যে বিতরণের লোভ দেখাচ্ছে। এই লোভেই কট্টর মুসলিম বিরোধী পূর্ববঙ্গীয় হিন্দুদের মজিয়েছে। আসাম, বাংলা, ত্রিপুরা সর্বত্র।

তবে বিজেপি যা ভাল পারে সেই দাঙ্গা লাগাতে পারে।

ইতিউতি ১৯ লক্ষের জনবিন্যাস বিশ্লেষণ দিয়ে একটা খবর ঘুরছে। জানি না এটার সরকারি শিলমোহর আছে কি না? এতে রয়েছে ১৯ লক্ষ এনআরসি তালিকছুটে হিন্দু ১৩ লক্ষ, বাঙালি ১১ লক্ষ, অবাঙালি ২ লক্ষ। মুসলিম ৬ লক্ষ।

আমি তো ভেবে পাচ্ছি না হিন্দি ভাষীরা অন্য দেশের হয় কি করে? মরিশাস বা গায়ানার মানুষরা হিন্দি ভুলে গেছে। নেপালিরা ভারতের যেখানে খুশি বাস করতে পারে। তবে কি আসামের জন্যে ভিন্ন নাগরিকপঞ্জি?

যাই হোক, পারসেন্টেজ হিসাব করলে একটা সিদ্ধান্তে আসা যায়, মুসলিমরা এনআরসি তালিকা ছুট কম।

অসমের এই মানচিত্রটি দেখুন –

মুসলিম অধ্যুষিত জেলাগুলিতে এনআরসি ছুটের শতকরা হার কম। ধুবড়ি ৮.৬৭%, দক্ষিন সালমারা ৭.২২%, করিমগঞ্জ ৭.৬৭%। এই তিন মুসলিম সংখ্যাগুরু (যথাক্রমে ৭৯.৬৭%, ৯৫%, ৫৬%) জেলায় এনআরসি ছুটের সংখ্যা কম দ্বারা প্রমাণিত হয় এঁরা অসমের আদিবাসিন্দা।

অপরদিকে তিনসুকিয়ায় হিন্দুরা সংখ্যাগুরু ৮৮.৯৬%। সেখানে তালিকা ছুট ১৩.২৫%। দরং জেলায় ৩০.৯%, বঙ্গাইগাও জেলায় ২২.৫১%, শিল্পের জন্যে বহিরাগত বেশি। হোজাইয়ে ৩২.৯৯% এনআরসি তালিকা ছুট।

Leave a Reply

error: Content is protected !!