Thursday, March 13, 2025
Latest Newsদেশফিচার নিউজ

মন্দিরে নামাজ! গান্ধীজির অনুগামীকে সন্ত্রাসবাদী বলল আরএসএস

দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : গত ২ নভেম্বর উত্তরপ্রদেশ পুলিশ দিল্লি থেকে ফয়জল খান নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। তাঁকে মথুরা জেলে বন্দি রাখা হয়।

মোটা দাগে এটুকু বোঝা গেল! কিন্তু গ্রেফতারের কারণ কি? শুরুটা তাহলে একটু ইতিহাস ঘুরেই করতে হবে।

স্বাধীনতার আগে ‘সীমান্ত গান্ধী’ খান আবদুল গফফর খান ‘খুদাই খিদমদগার’ নামে একটি সংগঠন গড়েছিলেন। উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে ওই সংগঠনটি অহিংস আন্দোলন পরিচালনা করত। ২০১১ সালে মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যুদিনে ফয়জল খান নতুন করে ওই সংগঠনটি গড়ে তোলেন।

সীমান্ত গান্ধীকে তাঁর অনুগামীরা বলত বাদশা খান। খুদাই খিদমদগারের সমর্থকরা স্বাধীনতা সংগ্রামে অভুতপূর্ব বীরত্বের পরিচয় দিয়েছিলেন। ১৯৩০ সালে পেশওয়ারের কুইসা খাওয়ানি বাজার অঞ্চলে তাঁরা সত্যাগ্রহ করেন। ব্রিটিশদের সাঁজোয়া গাড়ি তাঁদের অনেককে চাপা দেয়। তবুও বাকিরা জমায়েত ছেড়ে নড়েননি। ব্রিটিশরা তাঁদের ওপরে মেশিন গান চালায়। সরকারি হিসাব মতো সেখানে ২০ জন নিহত হয়েছিলেন। জাতীয়তাবাদীরা বলেছিলেন, মৃতের সংখ্যা অন্তত ৩০০। ব্রিটিশ ইন্ডিয়ান আর্মি সত্যাগ্রহীদের ওপরে গুলি চালাতে অস্বীকার করেছিল। সেজন্য পরে তাদের প্রত্যেকের আট বছর করে জেল হয়।

পরাধীন ভারতে বাদশা খান ১৪ বছর জেলে ছিলেন। তিনি পাকিস্তান গঠনের তীব্র বিরোধিতা করেন। দেশভাগের পরে তিনি সেই বিখ্যাত উক্তি করেন, ‘আমার লোকজনকে নেকড়ের মুখে ছুড়ে ফেলা হয়েছে’। তাঁর দল নির্বাচন বয়কট করে। শীঘ্র তাঁকে বন্দি করে পাকিস্তান সরকার। তিনি জীবনের মোট ৩৭ বছর জেলে কাটিয়েছিলেন। তার এক বড় অংশ কেটেছিল সলিটারি কনফাইনমেন্টে। অর্থাৎ তাঁকে নিঃসঙ্গ অবস্থায় বন্দি থাকতে হয়েছিল।

এবার ফেরা যাক বর্তমানে!

একুশ শতকের সেই খুদাই খিদমদগার সংগঠন স্থির করেছে, সংগঠনের অন্তত ৩৫ শতাংশ সদস্যকে হতে হবে অমুসলিম। শুরুতে সংগঠনের সদস্যরা বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে আলোচনা করবেন। নতুন করে খুদাই খিদমদগারকে গড়ে তোলার আইডিয়াটা অনেকের পছন্দ হয়েছে। খুব দ্রুত তার সদস্য সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে ৫০ হাজার। তাঁদের মধ্যে অনেক হিন্দু আছেন।

গত ৪ অক্টোবর চার খিদমদগার, ফয়জল খান, চাঁদ মহম্মদ, অলোক রতন এবং নীলেশ গুপ্ত মথুরায় ৮৪ ক্রোশ অর্থাৎ প্রায় দেড়শ মাইল পদযাত্রা করেন। তাঁরা স্থানীয় পুরোহিতদের সঙ্গে কথা বলেন। অনেকের সঙ্গে খাওয়া দাওয়া করেন। পুরোহিতরা কেউ কেউ তাঁদের বন্ধু হয়ে যান।

২৯ অক্টোবর খিদমদগাররা নন্দ বাবা মন্দিরে পৌঁছন। মন্দিরের পুরোহিত তাঁদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। প্রসাদ খেতে দেন। ফয়জল খান তুলসীদাসের রামায়ণ থেকে আবৃত্তি করে শোনান। তিনি পুরোহিতের সঙ্গে ধর্মীয় আলোচনা করেন। নমাজের সময় হলে ফয়জল জানতে চান, আশপাশে কোনও মসজিদ আছে কি? তাহলে তিনি নমাজ পড়ে আসবেন। পুরোহিত বলেন, তিনি মন্দির চত্বরেই নমাজ পড়তে পারেন।

এক হিন্দু খিদমদগার ফয়জলের নামাজ পড়ার ছবি তোলেন। তিনি মনে করেন, ওই ছবি দুই ধর্মের মানুষের সৌভ্রাতৃত্বের প্রতীক। ছবিটা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে শুরু হয় হইচই। মন্দিরের পুরোহিতকে চাপ দেওয়া হয় যাতে তিনি পুলিশে অভিযোগ করেন। ফয়জলকে গ্রেফতার করে অনেকগুলি চার্জ দেওয়া হয়। তার অন্যতম হল, তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চেয়েছেন। গত মাসের শেষ মথুরায় ওই মামলার শুনানি হয়। সেখানে আর এস এস কর্মীরা ব্যাপক সংখ্যায় উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা ফয়জলকে সন্ত্রাসবাদী বলে চিহ্নিত করেন। তাঁর জামিনের আবেদন নাকচ হয়।

বিশিষ্ট তথ্যচিত্র নির্মাতা আনন্দ পটবর্ধন জানিয়েছেন, তিনি ফয়জল খানকে চিনতেন। ফয়জল মানবাধিকারকর্মী। তিনি ম্যাগসাইসাই পুরস্কার বিজেতা সন্দীপ পান্ডের সহযোগী ছিলেন। সন্দীপ ও ফয়জল, দু’জনেই একনিষ্ঠ গান্ধীবাদী। কিন্তু আজকের ভারতে তাঁদের মধ্যে একটা বড় পার্থক্য আছে। তাঁদের একজন মুসলিম।

 

 

 

 

Leave a Reply

error: Content is protected !!