নিজস্ব সংবাদদাতা, দৈনিক সমাচার, কলকাতা : সংসদে প্রণীত নাগরিকত্ব আইনকে অসাংবিধানিক, বিভেদমূলক ও বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়ে ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া পশ্চিমবঙ্গ শাখা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। বুধবার বিকেলে কলকাতা প্রেস ক্লাবে একটি প্রেস কনফারেন্স করে পার্টির অভিযোগ, সিএএ আইনের সাথে এনআরসি আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষ এবং বহুত্ববাদী চরিত্রকে ধ্বংস করবে। এটি সংবিধানের ১৪, ১৫ ও ২১ অনুচ্ছেদেরও পরিপন্থী। এটি ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর আরএসএসের এজেন্ডা প্রতিষ্ঠার একটি পদক্ষেপ। নাগরিকত্ব আইনের ফলে মুসলিম নাগরিক, প্রান্তিক শ্রেণি এবং দরিদ্ররা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। পার্টির ধারণা, এই আইনটি আমাদের বৈদেশিক নীতিতেও গভীর প্রভাব ফেলবে। এটি আমাদের জাতিকে বিচ্ছিন্ন করবে। সিএএ আইনে মায়ানমার, ভুটান, শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলিকে বাদ দেওয়া হয়েছে, যে সমস্ত দেশে বড় আকারের ধর্মীয় নিপীড়নের দৃষ্টান্ত রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সরকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি মনসা সেন এনপিআরের ব্যাপারে বলেন, ‛১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী ভারতের একজন নাগরিকের যাবতীয় তথ্য জোগাড় করার নামই এনপিআর। এককথায় একটা ডাটাবেস। এরজন্য বাড়ি বাড়ি সমীক্ষা হবে, কিন্তু কোনওভাবেই নাগরিকের বায়োমেট্রিক বা পরিচয়ের কোনও প্রমাণপত্র চাইতে পারবেন না। ইউপিএ সরকারের আমলে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, উদ্দেশ্য ছিল হাউস ভিত্তিক পরিবারের কতজন লোক থাকে, অন্যান্য রাজ্যে কেউ থাকেন কিনা, বিগত ৬ মাস একই ঠিকানায় আছেন কিনা এবং আগামী ৬ মাস একই ঠিকানায় থাকবেন কিনা তার নিশ্চয়তা দেয় এর নাম এনপিআর। এই জায়গায় আমরা বিরোধিতা করছি, বিজেপি খুব সহজভাবে বলছে, একজন মুসলমানকেও দেশ ছাড়তে হবেনা। এনপিআর হচ্ছে এনআরসির প্রথম ধাপ, একথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন। ২০১৮-১৯ সালের বার্ষিক রিপোর্টের ২২২৬ নম্বর পাতায় একথা স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে। আমরা এনপিআরের কেন বিরোধিতা করছি? এনপিআরে নতুন কিছু যোগ করা হয়েছে যেমন, বাবা-মায়ের জন্মস্থান, ধর্ম ইত্যাদি। ইউপিএ সরকারের আমলে যে এনপিআর হয়েছিল সেখানে এসব উল্লেখ ছিল না। এসব উল্লেখ করে যে নতুন কলম বানানো হয়েছে, এই কলম দেখে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে, হিন্দুত্বের এজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে এনপিআরকে একটি ধর্মীয় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কারণেই আমরা এনপিআরের বিরোধিতা করছি।’
জেএনইউ, জামিয়া, এএমইউ, বিএইচইউ, এইচসিইউ এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নৃশংস হামলার শিকার হয়েছে। এসব ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছে ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া। পার্টি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান গুণ্ডামি নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছে। এছাড়া উত্তরপ্রদেশ পুলিশ কর্তৃক আন্দোলনকারীদের প্রদত্ত নোটিশের তীব্র নিন্দা করেছে এবং প্রতিবাদকারী ও মুসলিম নাগরিকদের শুধুমাত্র ভীত ও হতাশ করার জন্য সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার নিন্দা জানিয়েছে এবং বলেছে যে, এটি অবৈধ ও সাংবিধান বিরোধী। পার্টি দাবি করেছে, নিহত ও আহত সকলকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। ওয়েলফেয়ার পার্টি দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ভূমিকার নিন্দা করেছে এবং দেশে ভয় এবং ঘৃণা ছড়ানোর জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে।
দেশের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া ২৩ জানুয়ারী থেকে ৩০ জানুয়ারী ‛সংবিধান বাঁচাও, নাগরিকত্ব বাঁচাও’ শীর্ষক একটি জাতীয় প্রচারাভিযানের আহ্বান জানিয়েছে এবং এদেশের নাগরিকদের একত্রিত হওয়ার জন্য ও তাঁদের এই প্রতিবাদকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছে। প্রচারাভিযানকে সফল করতে দেশব্যাপী সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, সমাবেশ, মানববন্ধন, সত্যাগ্রহ, কেন্দ্রীয় সরকারী অফিসের সামনে ধরনা, পিকেটিং, টর্চ বা মোমবাতি মিছিল, জনসভা, জেল ভরো আন্দোলন, পথ নাটিকা, ডোর টু ডোর ভিজিট ইত্যাদি পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। এদিনের প্রেস কনফারেন্সে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ওয়েলফেয়ার পার্টির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সারওয়ার হাসান, রাজ্য সভানেত্রী শাহাজাদী পারভীন প্রমুখ।
আমাদের সব খবর পড়ুন এইবার মোবাইল অ্যাপে। ডাউনলোড করুন বাংলার সেরা নিউজ অ্যাপ
সব খবর পড়তে আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত হোন – এখানে ক্লিক করুন