দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক :
সারাবছরই এদের দেখা মেলে মোড়ের চায়ের দোকানে, কখনও রাস্তায় চলন্ত ট্রেকারে ডেকে ডেকে যাত্রী তোলার কাজে, আবার কখনও ইট ভাটা বা গ্যারাজে। অসংখ্য মলিন মুখ কাজ করে চলে দিনরাত। সময়ের এই বিবর্ণ কোলাজে এবার কিছু স্কুল পড়ুয়ার মুখ জুড়ে দিল করোনা। যে বয়সে হাতে রং পেন্সিল থাকার কথা, সেই বয়সেই তারা হাতে তুলে নিয়েছে জীবনের বাটখারা। এ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে অসমের হাইলাকান্দিতে। শুধু হাইলাকান্দিতেই নয়, দেখা যাচ্ছে সর্বত্রই।
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বহু সরকারি স্কুলে শুধু পড়াশোনাই নয়, মিড ডে মিলটাও পড়ুয়াদের কাছে এক বড় প্রাপ্তি। কিন্তু এই মূহুর্তে স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুরা সেই প্রাপ্তি থেকে অনেকটাই বঞ্ছিত। তার ওপর লকডাউনের দোদুল্যমান গ্ৰাফ পাল্টে দিয়েছে অনেক কিছুই। ফলে দু’বেলা দুমুঠো যোগাড়ের লড়াইয়ে দাঁড়িপাল্লা তুলে নিয়েছে অগণিত কচি হাত। সম্প্রতি বিশ্ব শিশু শ্রম দিবস চালু হয়েছে জেলায়, গঠিত হয়েছে টাস্কফোর্স। তারপরও কি কোনও পরিবর্তন এসেছে। জীবন-জমিনের ঘূর্ণাবর্তে এখনও এমন দৃশ্যপট রয়ে গিয়েছে, যাকে ঘিরে এই প্রশ্ন আবর্তিত হচ্ছে, হবে। শিশু শ্রমিকরা কাজ করছে। কারণ, সে জানেই না, এখন তার স্কুলে যাওয়ার বয়স। যেখানে গেলেই দুপুরের খাবার তার প্রাপ্য অধিকার। সে এ-ও জানে না, দেশের আইন ব্যবস্থা ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত তার মত সমস্ত শিশুর জন্যই শিক্ষা, খাদ্য, সুরক্ষা অধিকারকে সুনিশ্চিত করেছে।
করোনা আবহে সরকারি বিদ্যালয়ে মাথাপিছু হিসেবে বরাদ্দ মধ্যাহ্ন ভোজনের চাল, ডাল রান্নার সামগ্ৰী প্রতিমাসেই স্কুল প্রধানরা ছাত্র – ছাত্রী কিংবা তাদের পরিবারবর্গের হাতে তুলে দিচ্ছেন। কিন্তু এটুকুতেই কি বিপন্ন পরিবারগুলোর সমস্যা ফুরিয়ে যাচ্ছে? উত্তরটা কিন্তু অধরা। আর তাই দাঁড়িপাল্লা নিয়ে সব্জি বিক্রি করছে পড়ুয়ারা। পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারের শিশুরাও হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়েছে পায়ে হেঁটে। এই বিপন্ন সময়ে কর্মসংস্থান কমে যাওয়ায় সংসার প্রতিপালন করতে গিয়ে ভীষণ অসুবিধায় পড়েছেন বহু লোক, তাই পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াচ্ছে তাদের স্কুল পড়ুয়া সন্তানরাও।
শিশু শ্রম রোধের সরকারের সদিচ্ছার কোনও খামতি নেই। মূলত শিশুদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখেই সরকারিভাবে এখনও পর্যন্ত স্কুল খোলার নির্দেশ জারি হয়নি। কিন্তু এ করতে গিয়ে কচিকাঁচারা যে সমস্যায় পড়েনি, একথাও জোর করে বলা যাচ্ছে না। এরকম একটা বিপন্ন পরিস্থিতিতে শিশুশ্রম বিরোধী অভিযান কতটা সফল হবে, প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। আর তাই হয়তো হাইলাকান্দি শহরের বিভিন্ন বাজার কিংবা গলিপথে এইসকল স্কুলছুট বিপন্ন পড়ুয়াদের নিত্য আনাগোনা। এই পরিস্থিতিতে শিশুশ্রম রোধের এই লড়াইয়ে সামাজিক সংগঠনগুলোকে যে আরও বেশি করে কাজ করতে হবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সমাজের সকল স্তর থেকে সবাইকে আন্তরিক ও ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাতে হবে। যতদিন পর্যন্ত স্কুল নিয়মিত না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত শিশুশ্রম বিরোধী অভিযানে আরও আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেই মনে করছেন সচেতন মহলের একাংশ।