দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : লাভ জেহাদ দেখাচ্ছে সিরিয়াল! এমনই গুরুতর অভিযোগ তুলে অসমে প্রতিবাদে নামে হিন্দু সংগঠন। মামলা ওঠে হাইকোর্টে। কিন্তু হিন্দু-মুসলিম ছেলেমেয়ের সম্পর্ক দেখানো মানেই যে লাভ জেহাদ নয় – সেই কথা তুলে ধরল না আদালত, পুলিশ বা প্রশাসন। উল্টে দুই মাসের জন্য নিষিদ্ধ করে দেওয়া হল সিরিয়ালকেই! ভারতের টেলি ইতিহাসেও সম্ভবত এমন ঘটনা এই প্রথম।
শুধু ৬০ দিনের জন্য সিরিয়াল বন্ধ করাই নয়, সেই সঙ্গে প্রযোজক-নির্মাতাদের শো-কজ নোটিশ পাঠিয়ে ১ মাসের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে। হিন্দু সংগঠনগুলির দাবি, রেঙনি চ্যানেলের বেগমজান সিরিয়ালে মুসলিম যুবকের সঙ্গে হিন্দু যুবতীর পালানো দেখানো হয়েছে। এদিকে প্রযোজক-পরিচালকের দাবি, হিন্দু মেয়েটিকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে মুসলিম ছেলেটি। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হওয়াও এখনও দেখানো হয়নি।
হিন্দু সংগঠনের পাল্টা দাবি, তাতে কী! সে তো সময়ের অপেক্ষা। হিন্দু মেয়েকে নিয়ে মুসলিম ছেলে কোন সাহসে পালায়! এ তো নিক্কষ লাভ জেহাদের ঘটনা। এই সব টিভিতে দেখলে তো রাজ্যে হিন্দু মেয়েদের আর ঘরে বেঁধে রাখা যাবে না। দ্বিগুণ উৎসাহে মুসলিম যুবকরা হিন্দু পরিবারের মেয়েদের ফুঁসলিয়ে নিয়ে যাবে। অতএব রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ। আন্দোলন। হাইকোর্টে রিট পিটিশন। যেখানে আবেদনকারীদের আইনজীবী খোদ রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র।
এতেই ক্ষান্ত হননি হিন্দু ধর্মের ধারক-বাহকরা। মূল চরিত্রের অভিনেত্রী প্রিটি কঙ্কনা শর্মাকে নিশানা করে নেয় একাংশ মহা-হিন্দু। তাঁকে ধর্ষণ, হত্যা ও আরও যা যা ন্যক্করজনক হুমকি দেওয়া সম্ভব- সব দেওয়া হতে থাকে। এমনও বলা হয়, কঙ্কনা আরব দেশের টাকা নিয়ে নিজের ধর্মকে বেচেই দিয়েছেন। এমন মেয়ের মরে যাওয়াই ভাল! নাগাড়ে হুমকি-অপমানে ক্লান্ত অভিনেত্রী পুলিশের দ্বারস্থ হন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে মেলেনি সুরাহা।
অথচ ভারতের টেলি ও সিনেমার ইতিহাসে মুসলিম মেয়ের সঙ্গে হিন্দু ছেলে বা হিন্দু মেয়ের সঙ্গে মুসলিম ছেলের প্রেম কোনও নতুন ঘটনা নয়। গদর, বোম্বে, দিল সে, বীর জারা, রাঞ্ঝনা, এক থা টাইগার, মাই নেম ইজ খান, ইশকজাদে, যোধা-আকবর…..তালিকা শেষ হওয়ার নয়। কিন্তু হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, হিন্দু জনজাগৃতি সমিতির মতো সংগঠনগুলি বেগমজানকে কোনওরকম ছাড় দিতে নারাজ। গুয়াহাটি হাইকোর্টে রিট পিটিশন জমা দেয় ইউনাইটেড ট্রাস্ট অফ অসম।
শুধু শিল্পী মহল নয়, বিরোধীদেরও প্রশ্ন- পুলিশ বা প্রশাসন প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে প্রযোজক-পরিচালকদের মুখোমুখি বসাতে পারত। না করে তড়িঘড়ি সিরিয়ালে নিষেধাজ্ঞা আনা হল গেরুয়া রাজ্য বলেই কি? পুলিশ কমিশনার জানান, সিরিয়ালটি দেখালে শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হতে পারে বলে কমিটি আশঙ্কা করেছিল। তাই প্রদর্শন বন্ধ করা হয়েছে।