দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক: রাজ্যে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ আসছে ৷ মাঝে মধ্যেই বেশ কিছু হিংসার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ৷ মূলত অভিযোগগুলি আসছে বিজেপি শিবির থেকে ৷ ইতিমধ্যেই বিধানসভা বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি ৷ বিধানসভার অধ্যক্ষ নির্বাচনে তাঁরা থাকবেন না বলেই জানিয়ে দিয়েছেন দিলীপ ঘোষ ৷ যতদিন পর্যন্ত না রাজ্যে হিংসা বন্ধ হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত বিধানসভা বয়কট করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি ৷
কিছুদিন আগেই একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায় ৷ যেখানে দেখা যাচ্ছে একদল দুষ্কৃতী হামলা চালাচ্ছে একজনের উপর ৷ ভয়ঙ্কর সেই ভিডিয়ো ৷ দুষ্কৃতীদের বেধড়ক মারে প্রাণ হারান ওই ব্যক্তি ৷ বিজেপি তরফে দাবি করা হচ্ছিল, ওই মৃত্য ব্যক্তি তাঁদের দলের কর্মী ৷ নাম উত্তম ঘোষ ৷ উত্তরপ্রদেশের হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সভাপতি অমিত সিংও ভিডিয়োটি টুইটারে শেয়ার করেন ৷ সঙ্গে মৃত উত্তম ঘোষের স্ত্রীর বয়ানে লেখেন, “তৃণমূলের কর্মীরা আমার স্বামীকে বাড়ি থেকে টানতে টানতে নিয়ে যায় ৷ তাঁকে জয় শ্রীরাম বলে দেখানোর কথা বলে ৷ বলছিল, কোথায় এখন বিজেপি লোকেরা ? কোথাও এখন হিন্দুরা ? আমার স্বামীকে ওরা মেরে ফেলল ৷”ভিডিয়োটি ফেসবুকেও শেয়ার হয়েছে ৷ সঙ্গে হ্যাশট্যাগ ছিল #BangalBurning (বঙ্গাল বার্নিং)।
যদিও বেশ কিছু পুরানো নথি বলছে, ওই ভিডিয়োটির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসার কোনও যোগ নেই ৷ এমনকি এই দেশের ঘটনাও নয় ৷ ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাজ়িলের সিয়েরা এলাকায় প্রাইয়া ডু ফরটালেজ়ায় ৷ ২০১৮ সালের ৩০ নভেম্বর ৷ জার্নাল ডি ব্রাসিলিয়া, আর ৭, এসকুরিয়া ডায়েরিও, মোনোলিটোস পোস্টের মতো ব্রাজ়িলের একাধিক সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল ৷
সেখানে বলা হচ্ছে, আক্রান্তের নাম ওয়েসলি টিয়াগো ডি সউসা কারভালো ৷ যারা হামলা চালিয়েছিল, তাদেরও প্রত্যেককে শনাক্ত করা হয়েছিল ৷ দু’জনকে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ ৷ পুলিশ রিপোর্টে বলা হয়েছে ওয়েসলিকে কুড়ুল, পাথর ও বাগান পরিচর্যার সামগ্রী দিয়ে আক্রমণ করেছিল দুষ্কৃতীরা ৷
ভিডিয়োটির সঙ্গে দূর দূরান্তেও বাংলার ভোট বা ভোট পরবর্তী হিংসার কোনও যোগ নেই ৷ আর এই ধরনের ভুয়ো ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করায় বিজেপিকে একহাত নিয়েছে তৃণমূল শিবির ৷ তৃণমূলের প্রাক্তন মুখ্য সচেতক তথা পানিহাটির বিধায়ক নির্মল ঘোষ বলছেন, “বিজেপির কাজই হল মিথ্যে প্রচার করা । মিথ্যে প্রচার, মিথ্যে দেখাতে গিয়েই বিজেপি ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল । কিন্তু মানুষ তাঁদের রুখে দিয়েছে । এখন এসব মিথ্যা ভিডিয়ো দিয়ে হিংসা ছড়াতে চাইছে । আমি সাধারণ মানুষকে বলব, ওদের প্ররোচনায় পা দেবেন না । আর যা প্রচার হবে তার সত্যাসত্য খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করবেন ।”
এই ভিডিয়ো ভুয়ো প্রমাণিত হওয়ার পর মুখ পুড়েছে বঙ্গ বিজেপিরও ৷ জয়প্রকাশ মজুমদারের সঙ্গে এই বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ভোট পরবর্তী হিংসার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করার সময় যাতে আরও সতর্কভাবে কাজ করা হয় তার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ও আইটি সেলের ইনচার্জ অমিত মালব্যকে অনুরোধ করেছে বঙ্গ বিজেপি ৷ যাতে সঠিক ভিডিয়ো শেয়ার করা হয়, সে-জন্যও অনুরোধ করা হয়েছে ৷’’