Tuesday, April 16, 2024
Latest Newsফিচার নিউজরাজ্য

আলিমে লামিসা, ফাজিলে আয়েশা – রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থানে ডানকুনি মাদ্রাসার দুই ছাত্রী

নিজস্ব সংবাদদাতা, দৈনিক সমাচার, ডানকুনি : হুগলি জেলার ডানকুনি সিদ্দিকিয়া সিনিয়ার মাদ্রাসার ছাত্রী লামিসা খাতুন ৮০৩ নম্বর পেয়ে আলিম পরিক্ষায় ষষ্ঠ ও রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং আয়েশা খাতুন ৫৩৯ নম্বর পেয়ে চতুর্থ ও রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে নজির গড়ল।

ইংরেজি পরিক্ষার দিন সেন্টারে যাওয়ার পথে দূর্ঘটনার কবলে পড়ে যায় লামিসা খাতুনের গাড়ি। জখম অবস্থায় ইংরাজি সহ বাকি পরিক্ষা দেয় লামিসা। এই ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে পরিক্ষা দিয়েও আলিম পরিক্ষায় লামিসা খাতুন আলিম পরিক্ষায় রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে এই মেধাবী।

ডানকুনির মনোহরপুরের বাসিন্দা লামিসা জানালেন, ‛ভবিষ্যতে আরবী বিষয়ে গবেষণা করে অধ্যাপক হতে চায়।’ তার বাবা মাওলানা বরকতুল্লাহ পেশায় এমএসকে মাদ্রাসার শিক্ষক। তিনি বলেন, ‛ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতেও মেয়ের এই ফলে মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ।’ উল্লেখ্য লামিসা খাতুনের নেতৃত্বে ঐ মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীরা খালের নোংরা জল থেকে বায়োগ্যাসের প্রকল্প তৈরি করেছিল। তার দিদি লুবাবা খাতুনও আলিম ও ফাজিল পরিক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছিল।

এদিকে ফাজিল পরিক্ষায় চতুর্থ ও রাজ্যে মেয়েদের মধ্যে প্রথম আয়েশা ইতিপূর্বে আলিম পরিক্ষাতেও মেয়েদের মধ্যে প্রথম হয়েছিল। ডানকুনি থানার আকডাঙ্গার বাসিন্দা আয়েশার বাবা আওলাদ আলি পেশায় ভ্যান চালক। কোন রকমে দিন মজুরী করে সংসার চলে। অভাবের সংসার, কখনোও কখনোও সংসারের কাজে তাকেও হাত লাগাতে হয়। অভাবের তাগিদে পড়াশোনার ফাকে ছাতা বুনতে হত আয়েশাকে।

আলিম পরীক্ষার পূর্বে হঠাৎ বিয়ের সম্বন্ধ হয়ে গেলে মাদ্রাসার মিনামঞ্চের ছাত্রছাত্রীদের প্রচেষ্টায় তা বন্ধ হয়। নানান বাধা সত্বেও লেখাপড়ায় তার কোন প্রভাব ফেলতে দেননি আয়েশা। সে চেয়েছিল ভবিষ্যৎ চিকিৎসক হতে। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার অভাবের সংসার। প্রায় সব মহল থেকে পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউই পাশে দাঁড়ায়নি। বাধ্য হয়ে ফাজিলে ভর্তি হয়। ফাজিল পরিক্ষায় এমন ফলের পর সে আক্ষেপের সুরে জানায়, ‛চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরনে কেউই সহায়তা করেনি, আমার আজকের ফলে আমি খুবই খুশি, আগামীতে থিওলোজিতে গবেষণা করে অধ্যাপনার স্বপ্ন দেখছি।’

ডানকুনি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আরেফ হালদার বলেন, ‛অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের মেয়ে আয়েশা খুবই ‘জিনিয়াস’ তার এই ফল প্রত্যাশিত। লামিসা খাতুন ইংরেজি পরিক্ষার দিন দূর্ঘটনার কবলে পড়ে যাওয়ায় আমরা আশঙ্কিত ছিলাম, তার এই ফলে সে প্রমান করল কোন বাধায় মেধাকে আটকাতে পারে না।’

এদিকে ডানকুনি মাদ্রাসার ছাত্রীদের নজরকাড়া সাফল্যে খুশির হাওয়া এলাকায়। পরিচালন সমিতির সম্পাদক ওমর আলি খান বলেন, ‛আমাদের মাদ্রাসার বিশেষত ছাত্রীদের প্রতি বছর নজরকাড়া সাফল্যে থাকলেও থিওলোজিতে উচ্চশিক্ষার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে আলিয়ার মূল ভবন ছাড়া নিকটবর্তী কোন কো-এড স্টাডি সেন্টার নেই।’ তিনি আরও জানান, ‛রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা, এই ছাত্রীদের ভবিষ্যতের দিকে লক্ষ্য রেখে ডানকুনি মাদ্রাসাকে কামিল স্টাডি সেন্টার গড়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের দিকে তাকিয়ে আছে এলাকাবাসী।’

 

আরও খবরাখবর পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রূপে

Leave a Reply

error: Content is protected !!