দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক :
স্যোশাল মিডিয়ায় নানান অসত্য ভুয়ো খবর এবং ঘৃণা ছড়িয়ে পড়ায় কিছুদিন আগেই রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস ভুয়ো খবর এবং মুসলিম বিদ্বেষ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কখন দেখা গিয়েছে খাবারের থালায় থুথু দিয়ে ভাইরাস ছড়াচ্ছে একটি সম্প্রদায়ের মানুষ। বলিউড সুপারস্টার আমির খান আটার প্যাকেটের মধ্যে ১৫ হাজার টাকা বিলিয়েছেন। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সময় এমন বহু ‘ফেক নিউজ’ ঘুরে বেড়িয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এমনকি এই ফেক নিউজের ফাঁদে পা দিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। আবার অনেক সংবাদমাধ্যম সত্য খবর প্রকাশ করেছেন। এই সব ফেক নিউজের চরিত্র বা প্রকৃতি বুঝতে ফ্যাক্ট চেক করেছে একটি জাতীয় সংবাদ মাধ্যম।
‛ফেক নিউজ ইন দ্য টাইম অব করোনা ভাইরাস: এ ব্যুম স্টাডি’ শিরোনামে ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, করোনা ভাইরাস পর্বে তারা মোট ১৭৮টি ভুয়ো, ভুল বা বিভ্রান্তিকর খবরের সত্যতা যাচাই করেছে এবং এই ভুয়ো নিউজগুলি কোন ফর্ম্যাটের বা কোন উদ্দেশ্যে ছড়ানো হয়েছে, তাও বিশ্লেষণ করেছে ‛বুম’। বিশ্লেষণ করা এই ফেক নিউজের মধ্যে একটা বড় অংশেই মুসলিম সমাজকে টার্গেট করা হয়েছে। যে ভুয়ো খবরগুলি ছড়িয়েছে তার মধ্যে ৩৫ শতাংশ ভিডিও থেকে, ২৯ শতাংশ টেক্সট ফরম্যাটে, আডিয়োতে ছড়িয়েছে ২ শতাংশ এবং প্রচলিত সংবাদমাধ্যমের খবর হিসাবে ছড়িয়েছে প্রায় চার শতাংশ।
জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির মধ্যে ফেক নিউজ ছিল চিনা ভিত্তিক, তার সঙ্গে ছিল ভবিষ্যদ্বাণী, কী হারে ছড়াবে, কোন কোন দেশে এই ভাইরাস দেখা যাবে। এছাড়াও ছিল চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ সংক্রান্ত বিভিন্ন মতামত। চিন ‛জৈব অস্ত্র’ ছেড়েছে তার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বহু ফেক নিউজ ছড়িয়েছে। যেমন জাপানের এক নোবেলজয়ী ভাইরোলজিষ্ট বিজ্ঞানীর মুখে বসানো হয়েছিল যে তিনি নিশ্চিত করোনা ভাইরাস উহানের ল্যাবেই তৈরি হয়েছিল। এর পর ইতালিতে সংক্রমণ প্রায় শীর্ষে তখন সে দেশের প্রশাসন কার্যত হাত তুলে নিয়েছে। হাসপাতালে জায়গা নেই। সরকার করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা করার মতো অবস্থায় নেই। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের কান্নার ছবি, ইতালির প্রেসিডেন্ট কাঁদছেন, ইত্যাদি। ভারতে যখন সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ঠিক তার কিছুদিন পর থেকেই ফেক নিউজের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছিল ভারত। কিন্তু উদ্বেগ বাড়ানোর মতো একটা প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছে এপ্রিল মাসে।
এই সময় উঠে আসে সাম্প্রদায়িক ফেক নিউজ, বহু ফেক নিউজে নিশানা করা হয়েছে মুসলিম সমাজকে। দিল্লির তবলীগ জামাতের ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই বহু ফেক নিউজ ছড়িয়েছে। কয়েক বছরের একটি ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করা হয় মুসলিম সম্প্রদায়ের কয়েক জন মানুষ থালায় থুথু দিয়ে করোনা ভাইরাস ছড়াচ্ছেন। কিন্তু পরে দেখা যায় ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই তৈরি ভিডিওটি। থালা চেটে পরিস্কার করে খেয়ে খাবার নষ্ট না করার বার্তা দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। বিশ্লেষকদের দাবি এই ধরনের নিউজগুলি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ছড়ানো হয়েছে। তার সঙ্গে করোনা ভাইরাস লকডাউন, প্রতিকার, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে নিয়ে অনেক ফেক নিউজ ছড়িয়েছে। তবে এই সমস্ত টপিকের বাইরে অনেক ফেক নিউজই নির্দিষ্ট কোনও ধারায় ফেলা যায়নি, সেগুলি কার্যত স্বতন্ত্র।
Support Free & Independent Journalism
