Sunday, May 19, 2024
Latest Newsদেশফিচার নিউজ

সর্বভারতীয় অনলাইন প্রতিযোগিতা ‛কানেক্টিং হার্ট’-এ প্রথম নদীয়ার দিনমজুর সন্তান রাজু ঘোষ

রেবাউল মন্ডল, দৈনিক সমাচার, থানারপাড়া : দেশজুড়ে করোনার আতঙ্ক ও লকডাউনের আবহে বন্ধ সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর এই দুর্বিসহ পরিস্থিতিতে ইসলামের পরিচিতি সকলের কাছে পৌঁছাতে জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য সর্বভারতীয় পর্যায়ে অনলাইন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ছাত্র সংগঠন স্টুডেন্টস ইসলামিক অর্গানাইজেশন অফ ইন্ডিয়া (এসআইও)। ‛কানেক্টিং হার্ট’ শিরোনামে এই প্রতিযোগিতা গত ২২ মে এবং ৩০ মে অনুষ্ঠিত হয়।

সর্বভারতীয় ওই প্রতিযোগীতায় প্রথম স্থান অধিকার করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে নদিয়ার থানারপাড়ার রাজু ঘোষ। এছাড়াও সর্বভারতীয় পর্যায়ে প্রথম দশজনের মধ্যে রয়েছেন হাওড়ার দীপান্বিতা দে।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় দেশের ১৮-৩০ বছরের পড়ুয়ারা। বাংলা ছাড়াও অসমীয়া, ইংরাজি, গুজরাটি, হিন্দী, কানাড়া, মালয়ালাম, মারাঠী, পাঞ্জাবী, তামিল, তেলেগু এবং উর্দূ প্রভৃতি ভাষাতেও ছিল অংশগ্রহণের সুযোগ। পরীক্ষার বিষয় হিসেবে ‛ইসলাম পরিচিতি’ নামক একটি বই থেকে অনলাইনে কিছু প্রশ্ন মোবাইলে টাইপ করে উত্তর দেয় প্রতিযোগীরা। জাতীয় স্তরে প্রথম স্থানাধিকারী হিসেবে ২৫,০০০ হাজার টাকা ও সার্টিফিকেট দ্বারা পুরস্কৃত হয়েছেন রাজু ঘোষ।

এসআইও পশ্চিমবঙ্গ শাখার পক্ষ থেকে রাজু ঘোষ এবং দীপান্বিতা দে সহ সকল অংশগ্রহণকারীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সংগঠনটির রাজ্য সভাপতি ওসমান গনি। তাদের জীবনের সার্বিক সফলতা কমনা করে তিনি বলেন, ‛লকডাউনকালে করোনার আতঙ্কের মাঝেই যেভাবে দেশজুড়ে ইসলামোফোবিয়ার পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে সেই পরিস্থতিতে ছাত্র যুবকদের সামনে ইসলামের সঠিক বার্তা তুলে ধরতেই আমাদের এই আয়োজন। যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণীর ছাত্র-ছাত্রীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। আর তাতে প্রথম স্থান অর্জন করেছে এরাজ্যেরই রাজু ঘোষ, আমরা তাকে নিয়ে গর্বিত। সারা দেশে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন তামিলনাড়ুর এস আসমাত মুবিনা, তৃতীয় তেলেঙ্গানার অমূল্য।’

প্রতিযোগিতায় দেশে প্রথম হবার কথা ভাবতেই পারে নি রাজু ঘোষ। সে জানিয়েছেন, ‛বন্ধু অসীম কেরল থেকে হোয়াটসআপে পরীক্ষাটির বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। প্রস্তুতির জন্য সময় ছিল এক সপ্তাহ। খবরটা শোনার পরও আমার বিশ্বাস হয়নি। আজ মা বেঁচে নেই, থাকলে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। মা-ই ছিলেন আমার জীবনের প্রেরণা। বন্ধুরাও বিভিন্ন ভাবে আমাকে হেল্প করেছে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

রাজুকে অভিনন্দন জানিয়েছেন টিউশন শিক্ষক মিলন ফকির। রাজুকে পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্নভাবে গাইড করতেন তিনি। ফোন করে অভিনন্দন জানাচ্ছেন বন্ধু বান্ধবরা। শুভেচ্ছা জানাতে রাজুর বাড়িতে ছুটে যাচ্ছেন গ্রামবাসীরাও।

রাজুর দরিদ্র পরিবার। বাবা সুদেব ঘোষ অন্যের জমিতে সবজি চাষ করে কোনমতে সংসারটা চালান। রাজুর মা নেই। তাই পড়াশুনার ফাঁকে সংসারের রান্নাবান্নার কাজটা তাকেই করতে হয়। এপর্যন্ত রাজুর পড়াশুনায় সাহায্য করে এসেছেন মামা চিরঞ্জিত ঘোষ। ভাগ্নের এমন অভাবনীয় সফলতায় আপ্লুত তিনিও। রাজুর শিক্ষক সাহাবুদ্দিন মন্ডল জানিয়েছেন, সত্যকে জানার আগ্রহ ওর প্রবল। রাজুর জ্ঞানপিপাসু মানসিকতা ওকে জীবনে অনেক বড় করে তুলবে বলে আমার বিশ্বাস।

বাবা সুদেব ঘোষ বলেন, আমার মত দিনমজুরের ছেলে যে সারা দেশে ফার্স্ট হবে ভাবতে পারিনি। এখন ওকে নিয়ে অনেক গর্ব হচ্ছে। আগামীতে এভাবেই ওর পড়াশুনা চালিয়ে যাক। যত কষ্টই হোক ওর খরচ চালিয়ে যাব।

রাজু ঘোষ হাওড়ার বেলুরমঠের ‘রামকৃষ্ণ মিশন বিবেকানন্দ এডুকেশনাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের’ সংস্কৃত বিষয়ে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার কথায়, সেখান থেকে আমি অনেক ভালো গুণের শিক্ষা পাওয়ার সাথে সাথে ধর্মীয় উদারতার শিক্ষাও পেয়েছি। আর সেই শিক্ষা নিয়েই রক্ষণশীল সমাজের একজন অমুসলিম হয়েও পরীক্ষাটি দেওয়ার জন্য প্রচেষ্টা করেছি। পরীক্ষাটি দেওয়ার জন্য আমাকে বই সরবরাহ সহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেছেন আমার শিক্ষক সাহাবুদ্দিন মন্ডল মহাশয়। তবে আমি বিশ্বাস করি সফলতার মালিক ঈশ্বর তিনি যাকে চান সফলতা দেন আর যাকে চান ব্যর্থ করেন।

 

আরও খবরাখবর পেতে যোগ দিন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রূপে

Leave a Reply

error: Content is protected !!