Thursday, April 18, 2024
Latest Newsইতিহাসফিচার নিউজ

এই প্রথম না, ভারতের কৃষকরা রুখে দাঁড়িয়েছেন বারবার! জেনে নিন সেইসব ইতিহাস

দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাজধানী দিল্লির সীমান্তে অবস্থান করছেন কৃ্ষকরা। নিজেদের দাবিতে তাঁরা অনড়। নতুন কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে। ভারতের কৃষকদের এই প্রতিবাদ কিন্তু নতুন নয়। সেই ব্রিটিশদের আমল থেকে বারবার মাথা তুলে দাঁড়িয়েছেন কৃষকরা। আসুন জেনে নেওয়া যাক সেইসব ইতিহাস।

নীল বিদ্রোহ (‌১৮৫৯–৬০)‌:‌ ধানের বদলে জোর করে কৃষকদের নীলচাষে বাধ্য করত ব্রিটিশ সরকার। কখনও লাঠি দেখিয়ে, কখনও আগাম টাকা দিয়ে জাল চুক্তিতে ফাঁসানো হত তাঁদের। ১৯৫৯ সালে নদীয়ায় প্রথম রুখে দাঁড়ান দিগম্বর বিশ্বাস ও বিষ্ণু বিশ্বাস। তাঁদের নেতৃত্বে জোটবদ্ধ হয় কৃষকরা। বাধ্য হয়ে ‘‌ইন্ডিগো কমিশন’‌ গঠনে বাধ্য হয় ব্রিটিশ সরকার।

পাবনা আন্দোলন (‌১৮৭২–৭৬)‌:‌ পূর্ববঙ্গে জমিদারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন কৃষকরা। বিভিন্ন ছুতোয় কর বাড়াতে থাকে জমিদার। ১৯৫৯ সালের আইনে কৃষকদের জমির অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়। ১৮৭৩ সালের মে মাসে পাবনার ইউসুফজাহি পরগণায় ভূস্বামী লিগ গঠন হয়। এর পর আদালতে জমিদারদের মোকাবিলা করেন কৃষকরা।

পশ্চিমে কৃষক বিদ্রোহ (‌১৮৭৫)‌:‌ গুজরাতি ও মাড়োয়ারি মহাজনদের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে ওঠেন কৃষকরা। প্রথমে মহাজনদের সামাজিকভাবে বয়কট শুরু করেন কৃষকরা। এর পর মহারাষ্ট্রের পুনে ও আহমেদনগরে সশস্ত্র প্রতিবাদে নামেন তাঁরা। জ্বালিয়ে দেন মহাজনদের ঘর, কাগজপত্র।

পাঞ্জাবে বিক্ষোভ (‌১৮৯০–১৯০০)‌:‌ মহাজনদের দৌড়াত্ম্য। জমির অত্যাধিক কর। ধনেপ্রাণে শেষ হচ্ছিলেন কৃষকরা। জমি হাতছাড়া হচ্ছিল তাঁদের। রুখে দাঁড়ান। ১৯০০ সালে আইন করে মহাজনদের কাছে কৃষকদের জমি বিক্রি বা বন্ধক রাখা নিষিদ্ধ হয়।

চম্পারণ সত্যাগ্রহ (‌১৯১৭)‌:‌ বিহারের চম্পারণে কৃষকদের নীলচাষে বাধ্য করত ইংরেজরা। তিনকাঠিয়া রীতিতে কৃষকদের প্রতি ২০ কাঠার জমির মধ্যে তিন কাঠায় নীল চাষ করতে হত। সেই নীল ইউরোপীয়দের কাছে বিক্রি করতে হত। তাদের বাধা দামে। ১৯১৭ সালে বাবু রাজেন্দ্র প্রসাদ, মজদর উল হক, জে বি কৃপালনি, মহাদেব দেশাইকে নিয়ে চম্পারণে পৌঁছন গান্ধীজি। জেলাশাসক চম্পারণ ছাড়তে বললে মানেননি। কারাবরণ করেন গান্ধীজি। ১৯১৭ সালের জুনে তদন্ত কমিটি গঠন করে ইংরেজ সরকার, যার এক সদস্য ছিলেন মহাত্মা গান্ধী।

খেড়া সত্যাগ্রহ (‌১৯১৮)‌:‌ গুজরাতের খেরায় অনাবৃষ্টির কারণে ফসলহানি হয়। ব্রিটিশ সরকার কর মকুব করতে অস্বীকার করে। কৃষকদের পাশে পৌঁছে যান মহাত্মা গান্ধী। সঙ্গে বল্লভভাই প্যাটেল। শুরু হয় সত্যাগ্রহ। শেষ পর্যন্ত সরকার কৃষকদের দাবি মানতে বাধ্য হয়।

মোপলা বিদ্রোহ (‌১৯২১)‌:‌ কেরলের মালাবার জেলায় হিন্দু জমিদারদের হাতে শোষিত হতেন মুসলিম কৃষকরা। ১৯২১ সালের আগস্টে বিদ্রোহ শুরু করেন কৃষকরা। এই নিয়ে সোচ্চার হন খিলাফৎ আন্দোলনকারী নেতারা।

বারদোলি সত্যাগ্রহ (‌১৯২৮)‌:‌ জমির রাজস্ব ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয় ব্রিটিশ সরকার। রুখে দাঁড়ান কৃষকরা। নেতৃত্ব দেন বল্লভভাই প্যাটেল। ‘‌সর্দার’‌ উপাধি পান। শেষ পর্যন্ত তদন্ত কমিটি বসায় সরকার। কমিটি জানায় এই রাজস্ব বৃদ্ধি অযৌক্তিক।

তেভাগা আন্দোলন (‌১৯৪৬)‌‌:‌ জোতদাররা ভাগচাষীদের বা বর্গাদারদের উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক দাবি করত। ভাগচাষীরা জানিয়ে দেন, উৎপাদিত ফসলের তিন ভাগের একভাগই দেবে জোতদারদের। তাঁদের এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির কৃষক সংগঠন কিষাণ সভা। বাংলার জমি কমিশনও কৃষকদের দাবিতেই সায় দেয়।

 

Leave a Reply

error: Content is protected !!