নিজস্ব সংবাদদাতা, দৈনিক সমাচার, দুর্গাপুর : ‛আমাকে ছেড়ে দিন, অন্তত ঘন্টা দুয়েকের জন্য’। পুলিশের কাছে আর্জি জিশানীর। – ধর্মঘট করার সময় মনে ছিলোনা, কোন ছাড়া হবেনা।
‛আমার পরীক্ষা আছে অনলাইনে’। – তাতে কী, এবার বোঝো এই বয়সে এইসব করার ফল।
‘ছাড়তে হবেনা, অন্তত কাগজ, পেন্সিল,একটা স্কেল দিন। আমাকে তো পরীক্ষা দিতে হবে।’ – পুলিশের সটান জবাব, না। থানায় এসব থাকেনা। দিতে পারবোনা।
‘তাহলে অন্তত লকআপ থেকে বাইরে বেরোতে দিন, পরীক্ষা তো দিতেই হবে’। – না বেরোতে দেওয়া যাবেনা।
এরপরেই দূর্গাপুরের এমএএমসি থানার পুলিশ আটকে দিলো থানার গেট। ধর্মঘটী কাউকেও বেরোতে দেওয়া যাবেনা..
বাবা ডিপিএলের ঠিকা শ্রমিক। ২০১৪ সালে কাজ হারিয়েছেন। কারখানা বন্ধ হওয়া, কারখানা বেচে দেওয়ার মানে জীবন অভিজ্ঞতাতেই বোঝে ১৯ বছরের ছাত্রী জিশানী বাগল। সকালে ধর্মঘটীদের সঙ্গেই শামিল হয়েছিলেন দুর্গাপুরের ডিভিসি মোড়ে। রাস্তা অবরোধ করে স্লোগান তুলছিলেন। মুহুর্তেই পুলিশ, কমব্যাট ফোর্স ঝাঁপিয়ে পড়ে ধর্মঘটীদের ওপরে। শুধু এই একটা স্পট থেকেই তিনশোর বেশি ধর্মঘটীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিরিশজনের মত আক্রান্ত হন। বাকীদের মত জিশানী বাগলকেও টানতে টানতে পুলিশ তুলে নিয়ে যায় থানায়।
জিশানী গভঃ আর্ট কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এদিন দুপুরেই ছিল সেকেন্ড সেমিস্টারের পরীক্ষা।
ধর্মঘট ভাঙতে পুলিশ লেলিয়েছে তৃণমূল সরকার। মমতার পুলিশ লকআপে সামান্য খাতা পেন্সিল দেয়নি, উল্টে ব্যাঙ্গ করেছে ধৃত ছাত্রীকে। অথচ বছর দুয়েক আগে ইসলামপুরে বনধ করা বিজেপি নেতাদের গ্রেফতার করার পরে থানায় বসে খাসির মাংস ও গরম ভাত খাওয়ানোর ছবি প্রকাশ্যে এসেছিল।
শেষমেষ সিপিআই(এম) কর্মীরাই থানায় এসে দিয়ে যায় পেন্সিল, কাগজ, স্কেল। থানায় বসেই অনলাইনে পরীক্ষা দেয় জিশানী বাগল। দুপুর পৌনে একটা থেকে ৩টা পর্যন্ত। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যায় বাকীদের সঙ্গেই ছাড়া পান জিশানী।