Thursday, May 23, 2024
Fact CheckLatest Newsরাজ্য

সোনারপুরে মুসলিম পরিবারের উপর পুলিশি নির্যাতনের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট

সোনারপুরে পুলিশ কর্মী সু্রাফ হোসেন ও তাঁর পরিবারের উপর মোদী পুলিশের কায়দায় যে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়, তার ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট –

প্রেক্ষাপট

গত ৬ আগস্ট, ২০২১, সোনারপুর থানার অন্তর্গত বেনিয়াবৌ গ্ৰামের বাসিন্দা এবং পুলিশ কর্মী সুরাফ হোসেন ও তাঁর পরিবারের উপর হামলা, অকথ্য নির্যাতন ও অত্যাচার এবং গ্ৰেফতারির ঘটনা ঘটে। এই বর্বরোচিত ঘটনার নেতৃত্বে ছিলেন সোনারপুর থানার এসআই সোমনাথ দাস, এএসআই প্রিয়া সেন এবং ২০ জন সিভিক ভলান্টিয়ার।

ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম

‛অধিকার’ ও ‛সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজম’ নামে মানবাধিকার সংস্থা বিচার বঞ্চিত এই পরিবারটি পুলিশের যে নৃশংস নির্যাতনের সম্মুখীন হয় তার তদন্ত করে। এতে ছিলেন মানবাধিকার কর্মী, আইনজীবী প্রমুখ।

পদ্ধতি

পরিবারের আক্রান্ত , প্রত্যক্ষদৰ্শী এবং তাদের আইনজীবীর সরেজমিন সাক্ষাৎকার (৩০ আগস্ট , ২০২১)

ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

গত ৬ আগস্ট সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট নাগাদ সোনারপুর থানার এসআই সোমনাথ দাস এবং এবং চারজন সিভিক ভলান্টিয়ার বেনিয়াবৌ গ্ৰামের বাসিন্দা, অশোকনগর থানার পুলিশ কর্মী, ৩৭ বছর বয়সি সুরাফ হোসেনের বাড়িতে এসে হোসেনে আলির খোঁজ করেন। সুরাফ মাঠের ওপারে হোসেন আলির বাড়ি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেন। প্রসঙ্গত, হোসেন আলি ওই পাড়ার একজন বৃদ্ধ। সোমনাথ দাস সিভিল ড্রেসে, চটি পায়ে এবং মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। সুরাফ হোসেন নিজে একজন পুলিশ কর্মী হাওয়ার কারণে আইন সম্পর্কে সচেতন। পুলিশকে সিভিল ড্রেসে দেখে তাঁর সন্দেহ হয়। তাই তিনি নিজের পরিচয় দিয়ে তাদের আসার কারণ জানতে চান। তখনই ‛শালা , মোল্লার বাচ্চা, আমাকে আইন শেখাতে এসেছিস বলে দেওয়ালে চেপে ধরে সুরাফের গলা টিপে ধরে ঘুষি মারতে থাকেন সোমনাথ দাস সহ সিভিক ভলান্টিয়াররা।’

পুলিশের অত্যাচারে বেহুঁশ ও প্রায় নগ্ন সুরাফ হোসেন। এই অফিসারই জঙ্গলমহলে তাঁর কাজ ও সাহসিকতার জন্য সরকারি পুরস্কার পেয়েছিলেন এবং তিনি একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবেও পুরস্কার পেয়েছেন।

তাঁকে বাঁচাতে ছুটে যান সুরাফের আড়াই মাসের গর্ভবতী স্ত্রী তানিয়া পারভিন, তাঁকেও ধাক্কা মেরে মাটিতে ফেলে দেন সোমনাথ দাস। তাদের রক্ষা করতে গিয়ে মার খান সুরাফের ভাই আনোয়ার হোসেন, দাদা জাহাঙ্গির হোসেন এবং বৌদিরা। আক্রমনের হাত থেকে রক্ষা পাননি সুরাফের ৮৫ বছরের বৃদ্ধা মাও। সুরাফ হোসেনের বাড়িকে উদ্দেশ্যে করে সোমনাথ দাস বলেন। ‛মোল্লার বাচ্চা’ বাড়ি বানিয়েছিস? তোদের বাড়ি সবকটা ইট এক এক করে খুলে নিয়ে চলে যাব। এক রাউন্ড অত্যাচারের পর আরও পুলিশ বাহিনীকে ফোন করে ডাকেন সোমনাথ দাস। তিনটি জিপ এবং একটা প্রিজন ভ্যান – সমেত বিশাল পুলিশবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এএসআই প্রিয়া সেন (পুলিশি পোশাক পরিহিত) এবং পুলিশের পোশাকে সিভিক ভলান্টিয়ারা সেখানে উপস্থিত হয়। তারপরই শুরু হয় অত্যাচারের নতুন অধ্যায়। আতঙ্কগ্ৰস্ত অবস্থায় যারা একটু দূর থেকে ঘটনা দেখছিলেন, তাদের উপর যথেচ্ছভাবে লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়‌। প্রিয়া সেনের নেতৃত্বে সিভিক ভলান্টিয়াররা তিনবার সুরাফ হোসেনের জামা, লুঙ্গি ছিঁড়ে উলঙ্গ করে স্ত্রী ও কন্যার সামনে বেধড়ক মারতে থাকে। প্রিয়া সেন নিজে সুরাফ হোসেনের যৌনাঙ্গে লাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আঘাত করেন এবং লাথি মারেন। মারতে মারতে তানিয়া উদ্দেশ্য করে তানিয়া সেন বলেন, ‛মোল্লার জাত হয়ে তোর স্বামীর চাকরি কি করে থাকে আমি দেখছি।’ চারটে লাঠি এবং ফাইবার স্টিক মারতে মারতে ভেঙ্গে ফেলেন তাঁরা। তারপর বাড়ির পাশে ঝুলিয়ে রাখা দড়ি দিয়ে সুরাফকে হাত, পা, গলা – সহ বেঁধে একটা প্লাস্টিকে জড়িয়ে টানতে টানতে নিয়ে যান তাঁরা। মার খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়া সুরাফের জ্ঞান ফিরলে সোমনাথ তাঁকে ‛শালা মোল্লার জাত’ বলে কটুক্তি করে। একই সুরে ‛এই মোল্লাদের শায়েস্তা করতে হবে বলে অশোক নস্কর, জয় মণ্ডল, এবং বিপ্লব নামে সিভিক ভলান্টিয়াররা সুরাফের দুই বৌদি আয়েশা এবং রেহানা পারভীনকে মারতে শুরু করে। সুরাফের স্ত্রী তানিয়া পারভিন আমাদের বলেন, গর্ভবতী জানা সত্ত্বেও প্রিয়া সেন এবং সিভিক ভলান্টিয়াররা তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার পেট ব্যাথা এবং রক্তস্রাব শুরু হয়ে যায়। সুরাফের ১৩ বছর বয়সি কন্যা ক্লাস নাইনে পাঠরত সামরিনা পারভীন ফোনে সমস্ত ঘটনার ভিডিও করতে শুরু করলে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় প্রিয়া সেন বাড়িতে ঢুকে তাঁকে থাপ্পড় মেরে ফোন কেড়ে নেয়। এরপর বাড়ির সমস্ত কিছু তছনছ করে এবং সোনার আংটি, কানের দুল, গলার চেন সহ কিছু মূল্যবান সম্পদ লুঠ করে নিয়ে চলে যায়। অনলাইনে ক্লাসের জন্য ব্যবহার করা সেই ফোন পুলিশ এখনও ফেরত দেয়নি।

হামলার নেতৃত্বে ছিলেন এএসআই প্রিয়া সেন

সুরাফের এক বউদিকে ভিডিয়ো করতে দেখে প্রিয়া এবং সোমনাথের উম্মুক্ত বাহিনী তাঁরও বাড়ি ভাঙচুর করে কিন্তু সমস্ত প্রমাণ লোপাট করতে তাঁরা পারেননি। এভাবে চল্লিশ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে অত্যাচার চালান সোমনাথ দাস প্রিয়া সেনের নেতৃত্বে সোনারপুর থানার পুলিশ। তারপর সুরাফ হোসেন, তাঁর স্ত্রী , দাদা ও ভাইদের গ্ৰেফতার করে দ্রুততার সঙ্গে আদালতে চালান করে দেয়। সেখান থেকে বারুইপুর জেল হেফাজত। ৮ আগস্ট জামিন পান তানিয়া পারভিন এবং সুরাফ হোসেন। তাঁর ভাই জামিন পান ১২ আগস্ট। এখনও এলাকার মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত। সুরাফের স্ত্রী তানিয়া জানিয়েছেন, থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় প্রিয়া সেন তাঁর সহযোগীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তোরা বন্দুক এনেছিস কি করতে? গুলি করে সবকটা কে মেরে দিতে পারলি না? এই মোল্লার জাতদের একদম শেষ করে দেওয়া উচিত। তখন সুরাফ বমি করছেন, অর্ধেক শরীর গাড়ি থেকে বাইরে ঝুলছে। সেই অবস্থায় গাড়িতে উঠে এসে নিজের বুট দিয়ে প্রিয়া সেন সুরাফের তিনটে আঙ্গুল থেঁতলে দেন। আক্রান্তদের আলাদা আলাদা গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বদলে কালিকাপুর ২ নং গ্ৰাম পঞ্চায়েতের উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে প্রত্যেক আক্রান্তদের নামে ‛ফিট সার্টিফিকেট’ ইস্যু করিয়ে নেওয়া হয়। তানিয়া পারভিন গর্ভবতী ছিলেন বলে কোনো ওষুধ খেতে চাননি। কিন্তু প্রিয়া সেন জোর করে তাঁকে একটা ইনজেকশন এবং ট্যাবলেট খাইয়ে দেন। পুলিশরা নিজেরা ব্যাণ্ডেজ বেঁধে, বরফ লাগানোর ছবি তুলে এবং প্রিয়া সেন জামার বোতাম খুলে আক্রান্ত বলে দাবি করতে থাকেন। থানায় পৌঁছে সুরাফ সোনারপুর বড়বাবুর সঙ্গে দেখা করতে এবং অশোকনগর থানার বড়বাবুর সাথে যোগাযোগ করতে চাইলেও তাঁকে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। জেলে পৌঁছে তানিয়ার শারীরিক পরিক্ষা – নিরিক্ষা শুরু হয়। ইতিমধ্যে অবশ্য তাঁর গর্ভপাত হয়ে গেছে। তাঁর এই অবস্থার জন্য দায়ী প্রিয়া সেন এবং সিভিক ভলান্টিয়াররা। সুরাফ হোসেন একসময় অনুর্ধ – ১৯ জাতীয় ফুটবল দলের সদস্য ছিলেন, পাঁচটি আন্তর্জাতিক ম্যাচও খেলেছেন। তাঁর এই প্রতিভার জন্য পাড়ার সবাই তাকে খুব সম্মান করেন। জেলে থাকাকালীন এই অপমান সহ্য করতে না পেরে সুরাফ আত্মহত্যা করার কথা ভেবে ছিলেন। মোট ১২টি ধারায় সুরাফের বিরুদ্ধে কেস সাজানো হয়েছে। ভারতীয় দণ্ডবিধি ১৪৭ (দাঙ্গার চেষ্টা), ১৪৮ (সশস্ত্র উপায়ে দাঙ্গার চেষ্টা), ১৪৯ (সংগঠিত অপরাধ), ১৮৬ (কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে বাধাদান), ১৮৯ (কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে খুনের হুমকি), ৩৩২ (কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধা দেওয়া), ৩৩৩ (কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে প্রচণ্ড আঘাত করা), ৩৫৩ (কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে জখম করা), ৩০৭ (খুনের চেষ্টা), ৩৭৯ (চুরি), ১২০বি (অপরাধ মূলক ষড়যন্ত্র) এবং ৩০৬ (ভীতি প্রদর্শন বা হুমকি)। ২৪ ঘন্টার বেশি জেলে কাটানোর জন্য এবং বর্তমানে কোর্টে তার বিরুদ্ধে ১২ টি ধারায় কেস চলার কারণে অশোকনগর থানা থেকে সুরাফকে সাসপেনশন নোটিশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ এই কেসে অভিযুক্তদের তালিকায় নামবিহীন ৭ – ৮ জন ‛and others’ উল্লেখ্য করে যখন যাকে খুশি তুলে নিয়ে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করে রেখেছে।

ঘরে ঢুকেও হামলার চেষ্টা পুলিশের

ইনসাফের লড়াই চলছে

সুরাফ হোসেন দুঃখ প্রকাশ করে আমাদের বলেন, মানুষের মধ্যে মানুষ আর নেই। সোমনাথ দাস এবং সিভিক ভলান্টিয়াররা ড্রেস কোড না মেনে বয়স্ক হোসেন আলিকে গ্ৰেফতার করতে আসে। নিজে একজন পুলিশকর্মী হওয়ায় ন্যায্য প্রশ্ন করাতেই তাঁকে এবং তাঁর পরিবারকে এই অত্যাচারের মুখে পড়তে হল। সুরাফের আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মী আনিসুর রহমান অভিযোগ করেছেন যে, পুলিশ কাউকে গ্ৰেফতার করতে এসে শারীরিক নিগ্ৰহ করতে পারে না। এবং তাঁর নিজের ড্রেস কোড মেনে ঘটনা স্থলে পৌঁছানোর কথা। আনিসুর রহমানের মতে, নিজেদের এই খামতি গুলো লুকাতে সোনারপুর থানার অ্যাডিশনাল ওসি প্রশান্ত দাস সুরাফের বিরুদ্ধে হোসেন আলিকে গ্ৰেফতার করতে বাধা দেওয়া, এবং পুলিশকে শারীরিক নিগ্ৰহ করার অভিযোগ এনেছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন যে, প্রিয়া সেন ছাড়া আর অন্য কোনও মহিলা পুলিশের অনুপস্থিতিতে কি ভাবে তানিয়া পারভীন এবং তাঁর জা – দেরকে স্পর্শ করল পুলিশ? তাছাড়া তানিয়ার গর্ভপাতের জন্য সোমনাথ দাস, প্রিয়া সেন এবং তাদের বাহিনীই দায়ী। সুরাফের পরিবার অভিযোগ করেছেন যে, এলাকার অনেকে তাদের জানিয়েছেন , এই ঘটনায় যুক্ত সিভিক ভলান্টিয়াররা বিজেপি – আরএসএস এর সঙ্গে জড়িত । সুরাফ হোসেনের মতে, বৃদ্ধ হোসেন আলি মানসিকভাবে সবল নন।

বৃদ্ধ হোসেন আলির বিরুদ্ধে কি মামলা ছিল?

আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে জীবনতলা থানার জমি সংক্রান্ত একটি কেশে হোসেন আলির নাম ছিল। এই কেসে আলিপুর এসিজেএম কোর্টের নির্দেশাঅনুসারে পুলিশ দশ জনের বিরুদ্ধে একটি চার্জশিট তৈরি করে। যার মধ্যে হোসেন আলির ঠিকানা কুলিবেরিয়া নামক একটি গ্ৰাম, যা সোনারপুর থানার অন্তর্ভুক্তই নয়। আবার পুলিশের স্টেটমেন্টে এক জায়গায় হোসেন আলির পরিবর্তনে হোসেন গাজীর নাম উল্লেখ আছে। ফলে হোসেন আলিকে গ্ৰেফতার করার বিষয়টিও বেশ গোলমেলে। পুলিশের এই বর্বোরোচিত আচরণ এবং অত্যাচারের বিরুদ্ধে বিচার এবং অভিযুক্ত পুলিশকর্মীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধানবিচারপতি, মাইনরিটি কমিশন, স্টেট পুলিশ ডিজি, বারুইপুর থানার এসপি, এসডিপিও, সোনারপুর থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ, রাজ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক এবং মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও চিঠি পাঠিয়েছেন সুরাফের পরিবার। এখনও পর্যন্ত কোনও সদর্থক সাড়া মেলেনি। সোনারপুর দক্ষিণের বিধায়ক লাভলি মৈত্রকে চিঠি পাঠালেও সাড়া মেলেনি। সুরাফের পরিবার ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই তাদের এলাকায় তোলাবাজির বিরোধীতা করায় তৃণমূল এই ঘটনায় তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না। তারপর অভিযুক্ত এসআই সোমনাথ দাস এবং সিভিক ভলান্টিয়ার অশোক নস্কর সরাসরি ওই এলাকার তোলাবাজির চক্রের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। কোথাও বিচার না পেয়ে আক্রান্ত সুরাফ হোসেন আদালতে দারস্থ হবে বলে জানিয়েছেন। অবশ্য তাদের এই ইনসাফের লড়াইয়ের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।

মূল্যায়ন

তোলাবাজির বিরোধীতা করায় আঞ্চলিক পুলিশের টার্গেট হয়েছেন সুরাফ এবং তাঁর পরিবার। হোসেন আলিকে গ্ৰেফতার করতে আসার অছিলায় সুরাফ হোসেনের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে পুলিশ। এর সঙ্গে সমানভাবে যুক্ত হয়েছে পুলিশের সাম্প্রদায়িক চরিত্র, বেকসুরের উপর অত্যাচার এবং শাসক দলের নীরবতা এই দৃষ্টচক্রের চক্রের মুখোশ ফাঁস করে দিয়েছে।

‛অধিকার’ ও ‛সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যাক্টিভিজম’ – এর দাবি

১. অবিলম্বে এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু করতে হবে।

২. সোমনাথ দাস, প্রিয়া সেন এবং অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ারদের গ্ৰেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

৩. সুরাফ হোসেন এবং তাঁর পরিবারের সকল সদস্যদের সামাজিক এবং কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে।

৪. সুরাফ হোসেনকে কর্মক্ষেত্রে যথাযোগ্য সম্মান সহ প্রত্যাবর্তনের নিশ্চয়তা দিতে হবে। সুরাফ হোসেনের বাড়ি থেকে লুঠ হাওয়া সোনার গহনা এবং মোবাইল ফেরত দিতে হবে।

৫. মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশমন্ত্রীকে রাজ্য পুলিশের নির্লজ্জ এই সাম্প্রদায়িক আচরণের বিরুদ্ধে ‛জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্ৰহণ করতে হবে।

৬. পুলিশ এবং যে কোনও রাজনৈতিক দলের তোলাবাজির বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে।

৭. সিভিক পুলিশকে আইন বহির্ভূত ভাবে কোনো পুলিশি অভিযানে শামিল করা যাবে না।

মানবাধিকার কমিশনের এই রিপোর্টটি বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তাকে সুবিচার চেয়ে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘু একটি পরিবারের উপর খোদ পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ যোগী রাজ্যের মতো যে ধরনের নির্যাতন করেছে তার বিচার না হলে সংখ্যালঘুদের উপর নানা অজুহাতে আক্রমণের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। দুঃখের কথা হল পশ্চিমবঙ্গের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এই খবরটিকে গুরুত্বই দেয়নি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সংখ্যালঘু পরিবারের উপর পুলিশি অত্যাচার ও নির্যাতিতাদের ছবি – খবর এখন ভাইরাল। অনেকে দাবি করেছে এএসআই প্রিয়া সেন এর নেতৃত্বে যেভাবে গর্ভবতী মহিলাকে আক্রমণ করা এবং তাঁর সন্তান পেটেই নিহত হয় তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন এবং ওই ভদ্র মহিলা এবং তাঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া রাজ্য সরকারের কর্তব্য। এ দিকে বেশ কিছু ম্যাগাজিন এবং নামকরা ওয়েবসাইটে কিন্তু এই খবরটি ছবি সহ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তিস্তা শেতলাবাদ সম্পাদিত সব রং, মুসলিম মিরর , মকতুব , আনন্দবাজার পত্রিকা, ও দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া ইত্যাদি। টাইমস অফ ইন্ডিয়া অবশ্য পুলিশের দেওয়া রিপোর্টাটাই ছেপেছে। রিপোর্টটি শিরোনাম ‛Villagers Consatable Attack Cops’ থেকে তা বুঝতে পারা যায়।

 

Leave a Reply

error: Content is protected !!