দৈনিক সমাচার, ডিজিটাল ডেস্ক : সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, সংবিধানকে বাতিল করে দিয়ে ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসেবে গড়ে তোলাই তাদের লক্ষ্য। কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলের বিরোধিতা করে সেখানে আটক নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে গতকাল (বৃহস্পতিবার) দিল্লির যন্তরমন্তরে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি ওই মন্তব্য করেন।
ডিএমকে দলের আহ্বানে আয়োজিত ওই বিক্ষোভ সমাবেশে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের স্বার্থে সংবিধানকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করেছে। মেহবুবা মুফতি নেতৃত্বাধীন রাজ্যের জোট সরকার ভেঙে দেয়ার মধ্য দিয়েই বেশ কয়েকমাস আগে থেকে তারা এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ নিয়ে ধাপে ধাপে কাজ করেছে তারা। এটা এক বিশাল ষড়যন্ত্রের অংশ! সংবিধানকেই বাতিল করে দিয়ে ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ হিসেবে গড়ে তোলাই ওদের লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করছে, জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি একেবারেই স্বাভাবিক। তাহলে কেন তাঁদের সেখানে ঢুকতে দেয়া হলো না? সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা, কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ, সীতারাম ইয়েচুরি সম্প্রতি কাশ্মীরে গেলেও শ্রীনগর বিমানবন্দরেই তাঁদের আটক করে রাখা হয়। তাদেরকে কোথাও যেতে দেয়া হয়নি। এদিন সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন ইয়েচুরি।
বিজেপি গণতন্ত্রের ওপর আঘাত হানছে মন্তব্য করে সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, সংবিধানের তিনটি বিষয়- গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো, প্রত্যেকটির বিরুদ্ধাচারণ করেছে গেরুয়া শিবির। জম্মু-কাশ্মীরকে ভেঙে দিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়েছে।
সমাবেশে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাতের অভিযোগ, ‘কাশ্মীরের মানুষদের বিরুদ্ধে বিজেপি মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। সিপিএম নেতা ইউসুফ তারিগামির পরিবারের ছ’জন সন্ত্রাসীদের হাতে প্রাণ দিয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁকেই দেশদ্রোহী বলা হচ্ছে!’
ওই সভায় কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ বলেন, ‘ওই রাজ্যে ধ্বংসাত্মক কাণ্ড ঘটছে। কিন্তু সরকার আমাদের কাছে তা লুকোচ্ছে। বিদেশি গণমাধ্যম থেকে এমনই জানা যাচ্ছে। বহুবছর ধরেই আমরা জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ এবং দেশের অন্য অংশের মধ্যে এক সেতুর মতো কাজ করেছি। কিন্তু এই নেতারা জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দাদের আস্থা অর্জনের চেষ্টা না করে উপেক্ষাই করছে।’
বিরোধীদলীয় নেতাদের উপস্থিতিতে এদিন এক প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ কিংবা তাঁদের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা না বলে যেভাবে ৩৭০ ধারা বাতিল করে দেয়া হলো, তার জেরে সেই রাজ্যে অঘোষিত জরুরি অবস্থা জারি হয়ে গেছে। এই কষ্টের দিনে আমরা জম্মু-কাশ্মীরের প্রতিটি সাধারণ মানুষের পাশে আছি। কাশ্মীরকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে তুলতে কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সিদ্ধান্ত। রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে অন্য বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের এখনও আটক করে রাখা হয়েছে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিসহ হাজার-হাজার সাধারণ মানুষ বন্দি। এই বিষয়গুলো যথেষ্ট উদ্বেগের!’
‘জম্মু-কাশ্মীর উপত্যকায় বাক্ স্বাধীনতার উপর মারাত্মক হস্তক্ষেপ চলছে। এই সিদ্ধান্ত সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারের বিরোধী। অবিলম্বে ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া উচিত’ বলেও বিরোধীদের ওই প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে।
ডিএমকে দলের আহ্বানে দিল্লির যন্তরমন্তরে আয়োজিত ওই সমাবেশ কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা ও সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবী আজাদ, কংগ্রেস নেতা কার্তি চিদম্বরম, সিপিএমের মহাসচিব সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিএমের পলিটব্যুরোর সদস্যা বৃন্দা কারাত, সিপিআই মহাসচিব ডি রাজা, লোকতান্ত্রিক জনতা দলের শারদ যাদব, রাষ্ট্রীয় জনতা দলের মনোজ ঝা, সমাজবাদী পার্টির রামগোপাল যাদব, তৃণমূল নেতা দীনেশ ত্রিবেদী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।