Thursday, March 28, 2024
Latest Newsআন্তর্জাতিকফিচার নিউজ

আমসহ ভেজাল ফলে ছেয়ে গেছে বাংলাদেশের বাজার

হাবিবুর রহমান, ঢাকা: মহামারী করোনা ভাইরাসের মধ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক কার্বাইড দিয়ে রাজধানীসহ সারাদেশে পাকানো হচ্ছে আমসহ বিভিন্ন ফল। অতিরিক্ত মুনাফার আশায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী প্রকাশ্যে বাজারজাত করছে বিষাক্ত রাসায়নিকযুক্ত ফল। কার্বাইডসহ ক্ষতিকর বিভিন্ন রাসায়নিক দিয়ে পাকানো ফল দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলেও অপরিপক্ব এসব ফলে নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।

জানা গেছে, রাজধানীসহ সারাদেশের বাজারে উঠতে শুরু করে বিভিন্ন জাতের আমসহ বিভিন্ন ফল। আমগুলো দেখতেও বেশ ঝকঝকে এবং সুন্দর। এসব আম কিনে বাড়িতে নিয়ে কেটে দেখা যায় ভেতরের আঁটিই শক্ত হয়নি, আঙ্গুলে চাপ দিলেই ভেঙ্গে যায়। আম কেটে কিছু সময় রাখার পর আপনা আপনি কালো হয়ে যায়। খেতেও আমের মতো লাগে না, মিষ্টি লাগা দূরের কথা বিশ্রী স্বাদে মুখ বিস্বাদ হয়ে যায়। এ আম খাওয়ার পর অনেকের পেটেও সমস্যা দেখা দেয়। পরিপক্ব হওয়ার আগেই আমগুলো পেড়ে আনা হয়েছে বাগান থেকে। তারপর বিষাক্ত ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়েছে রোজার মধ্যে অতিলাভে বিক্রির উদ্দেশ্যে। সেই আমেই রাজধানীসহ সারাদেশের বাজার সয়লাব হয়ে গেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, ভ্রাম্যমাণ আদালত ও মান নিয়ন্ত্রক সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিটি ফল একটি নির্দিষ্ট সময়ে পাকে। এর আগে তা কেমিক্যাল বা অন্য উপায়ে পাকানো হলে স্বাদ ও গন্ধ তো পাওয়াই যায় না, উল্টো ক্ষতির কারণ হয়। কার্বাইড দিয়ে ফল পাকানো বন্ধ করতে হবে। তবে সঠিক মাত্রায় ইথরেল দিয়ে ফল পাকানো যেতে পারে। ইথরেল ব্যবহারে নিয়ম মানা হচ্ছে না।

আম বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মানুষের শরীরের সুষম পুষ্টির যোগানের জন্য আমসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফল খাওয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু কতিপয় মানুষের লোভের কারণেই সেই ফল বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। একেকটি আম বিষের গোল্লায় পরিণত হচ্ছে। তাছাড়া মাঠপর্যায়ে চাষি বা কৃষকদের অসচেতনতার কারণেও ফলে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত বিষ। এই বিষযুক্ত ফল খেয়ে একদিকে নিজেরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, অন্যদিকে মানুষ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তথা শিশুরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম অসুস্থতা চলতেই থাকবে। অসুস্থ প্রজন্ম নিয়ে দেশ ও জাতি কখনো এগুতে পারে না।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ট এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন-বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে একটি জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। জনগণকেও এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মিয়ার উদ্দিন বলেন, ফলে কার্বাইড ব্যবহার সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। আমরা এভাবে ফল পাকাতে সবাইকে নিরুৎসাহিত করি। প্রকৃতপক্ষে কার্বাইড একটি এসিটিলিন গ্যাস। ওই গ্যাসই ফল পাকাতে সহায়তা করে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তিনি আরো বলেন, ফল পাকানোর জন্য ইথোফেনও ব্যবহার করা হয়। এটিকে ইথরেল বা ইথরিলিন নামেও ডাকা হয়। আমাদের এক গবেষণায় দেখা গেছে, আম পাকানোর ক্ষেত্রে ৫০০-৭৫০ পিপিএম ইথরেল ব্যবহার করা যেতে পারে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আম পাকানো হলে কিছু কিছু করে পাকে। আর সঠিক মাত্রায় ইথোফেন ব্যবহারে সুষমভাবে সব আম একত্রে পাকানো সম্ভব হয়। ইথরেল দিয়ে আম পাকানোর পরে মেক্সিমাম রেসিডিউয়ের বিষয়টিও আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। আমরা আমের শরীরে ১ পিপিএমের বেশি ইথরেল পাইনি, যা মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। কলার ক্ষেত্রে ৭৫০-১০০০ ইথরেল ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশের উৎপাদনকারী থেকে বিপণনকারীর এ বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা নেই। তারা নিষিদ্ধ কার্বাইডের ব্যবহার করছে।
তিনি আরো বলেন, লিচু ও আনারস এমন একটি ফল, যা গাছেই পাকাতে হয়। তাই চাইলেও এতে কার্বাইড দেয়া যায় না। তবে গাছে পাকার পর ইথরেল দেয়া যায়। এটি পরিমাপ মতো দিলে ফলের রং সুন্দর হয়। আনারস গাছে বিভিন্ন সময় ফল আসে। বিভিন্ন সময় ফুল আসার জন্যই মূলত ইথরেলে উৎপত্তি হয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, আনারস গাছের বয়স যখন ৯ মাস থেকে ১ বছর হবে ও এতে ৩৪-৪০টা পাতা থাকবে তখন গাছে ২০-২৫ এমএল ইথরেল ব্যবহার করা যাবে। এর ফলে এক মাসের মধ্যেই ৯৫ শতাংশ গাছে এক সঙ্গে ফুল আসবে। কিন্তু চাষিরা অতি লাভের আশায় ইথরেল দেয়ার পর তাড়াতাড়ি আনারস বড় করতে অন্য রাসায়নিকও দেন। আবার পরিপক্ব হওয়ার আগেও ইথরেল দেন। ফলে আনারস মিষ্টি কম হয়। লিচুতেও পরিপক্ব হওয়ার আগে ইথরেল ব্যবহারের ফলে রং আসলেও স্বাদ হয় না।

রাজশাহীর আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাড. মো হামিম রেজা জানান, ইথোফেন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি ফল পাকানোর রাসায়নিক দ্রব্য। এটি দিয়ে আম বা কলা পাকালে কোনো ক্ষতি নেই। কেননা, ইথোফেন প্রয়োগের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বায়বীয় আকারে উড়ে যায়। আর যদিও কিছুটা থাকে, তা মানবদেহের সহনীয় মাত্রার মধ্যে। কিন্তু ক্যালসিয়াম কার্বাইড মোটেই ব্যবহার করা যাবে না। কেননা, এই রাসায়নিক পদার্থের মধ্যে ১০ শতাংশ আর্সেনিক থাকে। যা সরাসরি ক্ষতি করে। ইথোফেনে পাকানো আমখাওয়া যায়, কার্বাইডে নয়।

Leave a Reply

error: Content is protected !!