Wednesday, March 12, 2025
গল্পফিচার নিউজশিল্প-সাহিত্য

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ০৮)

মুহসীন মোসাদ্দেক

 

(পূর্ব প্রকাশের পর)

টিপু বলে, ‘ইলেকট্রিক শক দেয়া যাইতে পারে।

‘কীভাবে?’ লাবু বলে।

‘জুয়েল ভাইয়ের টেবিলের নিচে কোনো একটা বৈদ্যুতিক তার কেটে রাইখা দিতে হবে, সুইচ বোর্ডের সাথে সে তারের সংযোগ থাকবো। এমনভাবে রাখতে হবে যেন চেয়ার-টেবিলে পড়তে বসলেই তার পায়ে বৈদ্যুতিক তার টাচ করে এবং সাথে সাথে সে শক খাবে!’ টিপুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।

‘না, এটা বিপজ্জনক হইয়া যাইবো।’ মিন্টু বলে।

‘বিপজ্জনক ক্যান হইবো! কাঠের টেবিল-চেয়ারে বইসা থাকবো তো। খালি একটু শক খাইবো আর ভয়ে লাফাইয়া উঠবো।’

সুরুজ বলে, ‘এইসব শক-মক দিয়া হইবো না। জুয়েল ভাই ভয়কাতুরে মানুষ। তারে হাত-পা-মুখ বাঁইন্ধা ভূতের বাড়িতে ফালায় রাইখা আসা যায়। সারারাত সে ওইখানেই থাকবো। তাইলে বুঝবো আমগো লগে লাগার মজা কী রকম!’

‘ভূতের বাড়ি!’ নাম শুনেই শিউরে ওঠে শেফালি। অন্যরাও হয়তো ওঠে, কিন্তু প্রকাশ করে না।

‘ক্যামনে করবি সেটা?’ রুবেল পুরো প্রক্রিয়া জানতে চায়।

‘সে যখন রাস্তা দিয়া আসবো তখন তার ওপর আমরা সবাই ঝাঁপায় পড়বো। তারপর হাত-পা-মুখ বাঁইন্ধা ভূতের বাড়িতে ফালায় দিয়া আসবো।’

‘জুয়েল ভাইকে ওই অতদূরে ভূতের বাড়িতে হাত-পা বেঁধে নিয়ে যাওয়া সম্ভব!’ লাবু সংশয় প্রকাশ করে।

সুরুজ মাথা চুলকায়, ‘তাইলে ভুলায়-ভালায় নিয়ে যাওয়া যাইতে পারে। তারপর ওইখানে গিয়া হাত-পা-মুখ বাঁইন্ধা ফালায় রাইখা আসবো।’

লাবু একটু খেঁকিয়ে বলে, ‘জুয়েল ভাই কী অতই বোকা যে ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিয়ে যাবি! এমনিতেই সে ভয়কাতুরে, তার ওপর যখন বুঝতে পারবে আমরা তাকে ভূতের বাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছি তখন কী সে আর এগুবে! তাও আবার এই সন্ধ্যায়! এই ভরসন্ধ্যায় তুই নিজে যেতে পারবি ভূতের বাড়িতে!’

সুরুজ জবাব দেয় না।

ভূতের বাড়িটা হলো গ্রামের একেবারে শেষপ্রান্তে ঝোপঝাড়ে ঢাকা একটা পোড়োবাড়ি। অনেক আগেকার রাজাদের আমলের একটা পরিত্যক্ত বাড়ি সেটা। বাড়িটাকে নিয়ে অনেক ভুতুড়ে কাহিনি প্রচলিত আছে। এমনও নাকি হয়েছে, ওই বাড়িতে কেউ ঢুকেছে কিন্তু বের হয়ে আসে নি, তার আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায় নি। আবার যারা কোনোরকমে ফিরে এসেছে তারা ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর কাহিনি শুনিয়েছে। কেউ কেউ পাগল হয়ে গেছে। ওই বাড়ির মুখে তাই এখন আর কেউ যায় না। আশেপাশ দিয়েও কেউ যেতে চায় না। অনেকে বাড়িটার নাম শুনলেই শিউরে ওঠে। এ কারণেই পোড়োবাড়িটার নাম হয়ে গেছে ভূতের বাড়ি! অবশ্য দিনের বেলার তেমন কোনো কাহিনি শোনা যায় নি। লাবুরাই তো একবার সাহস করে ঘুরে এসেছে। ভয়ঙ্কর যত কাহিনি সব সন্ধ্যার পরের কিংবা রাতের। লাবুরা সন্ধ্যার পরে কিংবা রাতে যাবার আর সাহস করতে পারে নি!

সুরুজের প্রস্তাব খারিজ হয়ে যেতেই শেফালি বলে, ‘জুয়েল ভাই যখন এতই ভয়কাতুরে তখন ভূতের বাড়িতে টাইনা নিয়া না যাইয়া সরাসরি ভূতের ভয় দেখালেই তো হয়!’

‘সেটা কী রকম?’ লাবু আগ্রহ নিয়ে জানতে চায়।

‘জুয়েল ভাই যে রাস্তা দিয়ে আসবো সে রাস্তায় আমরা আগে থেকেই ওঁৎ পাইতা থাকলাম। তারপর জুয়েল ভাই আসলেই ভূতের মতো ইনিয়ে-বিনিয়ে ভয় দেখাইলাম—’

রুবেল কিছুটা উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে, ‘এইটাতে কাজ হইতে পারে। জুয়েল ভাই যে রাস্তা দিয়া আসে সেখানে একটা তেঁতুল গাছ আছে। ওই গাছের আড়াল থেইকা ভয় দেখানো যাইতে পারে। জুয়েল ভাই মাঝেমইধ্যে বাড়িতে আইসা কয় ওই গাছে নাকি দোষ আছে। ওই গাছের পাশ দিয়া আসতে নাকি তার ভয় লাগে। কিন্তু তার উপায় নাই, ওই রাস্তা দিয়াই তার আসা লাগে।’

‘তাহলে তো একেবারে খাপে খাপ।’ লাবুও উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে, ‘থ্যাংক ইউ শেফালি।’
শেফালি লাজুক হাসে। লাবু সুরুজকে উদ্দেশ করে বলে, ‘কী, শেফালিকে দলে নিতে তো বাধা দিচ্ছিলি। ও ছিল বলেই না বুদ্ধিটা বের হলো।’

‘এ বুদ্ধি তো আমিও দিতে পারতাম।’ সুরুজ তাচ্ছিল্যের ভাব করে।

‘তাইলে দিলি না ক্যান?’ শেফালি তেতে ওঠে, ‘ভূতের বাড়ি ভূতের বাড়ি করতেছিলি! নিজে যাইতে পারবি ভূতের বাড়ি!’

সুরুজ পাল্টা জবাব দেয়, ‘গেছি না, ভূতের বাড়ি গেছি না! আমরা সবাই মিলে একবার গেছি ভূতের বাড়ি।’ লাবুকে উদ্দেশ করে বলে, ‘কী, গেছি না?’

‘সে তো গেছি দিনের বেলায়। দিনের বেলায় তো ভূতের বাড়িতে কিছু হয় না। যা হওয়ার তা তো সন্ধ্যার পর থেকে রাতের মধ্যে হয়!’

সুরুজ চুপসে যায়। শেফালি খিলখিল করে হেসে ওঠে, তারপর তাচ্ছিল্য করে বলে, ‘বীর বাহাদুর আমার! ভূতের বাড়িত গেছে!’

সবাই মিলে তেঁতুল গাছটার কাছে আসে। রাস্তার পাশে গাছটা। বিশাল বড় একটা গাছ। খুব ঝাঁকড়া, গোড়াও বেশ মোটা। কেউ বলে না দিলেও বোঝাই যায় বুড়ো একটা গাছ। গাছটার একপাশে রাস্তা, আরেক পাশে খানিকটা ঝোপঝাড়।
গাছের গোড়ার ওপাশে এবং ঝোপের মধ্যে থাকবে সুরুজ, মিন্টু আর শেফালি। ওরা ইনিয়ে-বিনিয়ে ভয় দেখাবে। গাছ ঝাঁকানোর একটা ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হতো। এজন্য কাউকে গাছে চড়ে থাকতে হবে। কিন্তু সন্ধ্যার পর পুরোপুরি আঁধার হওয়ার আগেই যদি জুয়েল ভাই চলে আসে তাহলে হয়তো বুঝে ফেলতে পারে। এজন্য আপাতত সেটা করা হলো না। তবে, জুয়েল ভাই যদি আঁধার হওয়ার পর আসে তাহলে সুরুজ গাছে চড়ে যাবে এবং যতটুকু পারবে গাছের ডাল ঝাঁকাবে। রাস্তার ওপাশে খানিক দূরে একটা ডাব গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকবে টিপু আর ইলিয়াস। ওরা বেশ কিছু ছোট ছোট ইটের টুকরো যোগাড় করে রাখলো। জুয়েল ভাইয়ের আশেপাশে টুকরোগুলো ফেলা হবে। লাবু আর রুবেল থাকবে তাদের বাড়ির গেটে, যেন জুয়েল ভাই বাড়িতে এসেই ওদের দেখতে পায়। কোনোভাবেই যেন জুয়েল ভাই আন্দাজ করতে না পারে যে এটা ওরা করেছে।
সবকিছু সাজিয়ে ওরা ওঁৎ পেতে বসে থাকে। সন্ধ্যার আজান হয়ে গেলে লাবু আর রুবেল বাড়ির গেটে চলে আসে। লাবু দাঁত দিয়ে নখ কাটে। এমনও হতে পারে, ওদের পরিকল্পনা জুয়েল ভাই ধরে ফেলতে পারে, কিংবা দেখা গেলো জুয়েল ভাই ভয়ই পেলো না! আবার এখান থেকেই জুয়েল ভাইয়ের ভালো একটা শিক্ষা হতে পারে। হতে পারে যেকোনো কিছুই। সবমিলিয়ে বেশ উত্তেজিত সবাই।

ধীরে ধীরে আঁধার হয়ে আসে। জুয়েল ভাই আসে না। পরিকল্পনা অনুযায়ী সুরুজ গাছে উঠে যায়। তেঁতুল গাছে ওঠা সহজ কাজ নয়। তাও আবার ভরসন্ধ্যায়। সুরুজের একটু ভয় করতে থাকে। তেঁতুল গাছে নাকি ভূত থাকে, জুয়েল ভাইয়ের নাকি এই গাছের ব্যাপারে অভিযোগ আছে। জুয়েল ভাইকে ভূতের ভয় দেখাতে গিয়ে যদি নিজের ঘাড়েই সত্যিকার ভূত চেপে বসে, তাহলে তো আর রক্ষা নাই! তবুও সে গাছে চড়ে বসে। তেঁতুল গাছের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো—কাঁটা। একের পর এক কাঁটা ফুটতে থাকে গায়ে! সুরুজ দাঁতে দাঁত চেপে সুবিধাজনক একটা ডালে বসে। এ ডালটা মোটামুটি নড়ানো যাবে, আর নিচ থেকে কারো বুঝতে পারারও কথা না, তবুও সে গায়ের জামা খুলে রেখে এসেছে।

গাছের নিচে শেফালি আর মিন্টু পজিশন নিয়ে প্রস্তুত হয়ে আছে। মূল কাজটা এদেরই করতে হবে। শেফালির একটু ভয় ভয় লাগে। একটু পর পর সে দোয়া পড়ে বুকে ফুঁ দিচ্ছে। মিন্টু খুব স্বাভাবিক, কিন্তু তার বুকও দুরুদুরু করছে। ইলিয়াস আর টিপুর অবশ্য বিশেষ কাজ নেই। ওরা কিছুটা নির্ভার।

এর মধ্যে শুরু হলো মশার উৎপাত। সুরুজ অবশ্য মশার কামড় আর কাঁটার খোঁচা আলাদা করতে পারে না! কিন্তু শেফালি একটু পর পর ‘ইস’ করে ওঠে। এই মুহূর্তে তার মনে হয়—বুদ্ধিটা দিয়ে ভুলই করে ফেলেছে! আরো বড় ভুল করে ফেলেছে এদের দলে যোগ দিয়ে!

এতসব অত্যাচারের ভেতরে হঠাৎ বোঝা যায় কেউ একজন আসছে। কে আসছে বোঝা যায় না। জুয়েল ভাই না হয়ে অন্য কেউ হলে কেলেঙ্কারি হয়ে যেতে পারে! কিন্তু সেরকম কিছু হলো না। গাছের কাছে আসতেই বোঝা যায় এটা জুয়েল ভাই-ই। প্রথমে সুরুজ গাছের ডালে একটু ঝাঁকি দেয়। জুয়েল ভাই উপরের দিকে তাকায়। বলতে গেলে তেমন কোনো বাতাস নেই এখন। কোথাও কোনো গাছ সেভাবে নড়ছে না। তেঁতুল গাছের পুরোটাও নড়ছে না। একটা অংশ শুধু নড়ছে। জুয়েল ভাই অবাক হয়ে তাকায়। আর সেসময় অদ্ভুতভাবে খিলখিল করে হেসে ওঠে শেফালি। থমকে দাঁড়ায় জুয়েল ভাই। শেফালির হাসির সাথে সুরুজ যোগ করে নাকি সুরে কান্না।

জুয়েল ভাই আতঙ্কিত হয়ে বলে, ‘কে? কে এমন করে?’

‘আঁ-ম-রাঁ!’ নাকি সুরে টেনে টেনে বলে মিন্টু।

জুয়েল ভাই আরো আতঙ্কিত হয়, ‘অ্যাঁ—’
থেমে থেমে চলতে থাকে সুরুজের নাকি সুরে কান্না আর শেফালির খিলখিল হাসি। সাথে সুরুজের হালকা করে গাছের ডাল ঝাঁকানিও চলতে থাকে।

জুয়েল ভাই ভয় পেয়ে যায়, আর দাঁড়াতে চায় না। জুয়েল ভাই দ্রুত পা চালাতে শুরু করে। মিন্টু নাকি সুরে টেনে টেনে অনেকটা ধমকের মতো করে বলে, ‘থাঁ-ম!’

থমকে দাঁড়ায় জুয়েল ভাই, পিছে ফিরে তাকায়, গাছের গোড়ার দিকে তাকায়, উপরের দিকে তাকায়, আশেপাশে তাকায়—কোথাও কাউকে দেখা যায় না। জুয়েল ভাইয়ের মনে হয় গাছটাই কথা বলছে!
‘কে—কে তোমরা? আ-আমার কাছে কী চাও?’ একটু তোতলায় জুয়েল ভাই।
মিন্টু আগের মতো করেই, তবে গলাটা একটু ভারী করে বলে, ‘তুঁ-ই বাঁ-ই-ড়াঁ গেঁ-ছোঁ-স! তোঁ-র খঁ-ব-রঁ আঁ-ছে…’
কথাটা শেষ হতেই ইলিয়াস একসাথে কয়েকটা ইটের টুকরো ছুড়ে মারে, টুকরোগুলো জুয়েল ভাইয়ের ঠিক পেছনে গিয়ে পড়ে। জুয়েল ভাই চমকে ওঠে। একবার পেছনে তাকিয়ে ‘ওরে বাবা!’ বলে দিলো ভোঁ দৌড়! টিপুও সেই মুহূর্তেই এক মুঠো ইটের টুকরো ছুড়ে মারে। জুয়েল ভাই আর পিছে ফিরে তাকায় না। আরো জোরে দৌড় দেয়। মাঝে দুইবার হোঁচট খেয়ে পড়ে, উঠে আবার দৌড় দেয়।
মিন্টু-সুরুজ-শেফালি কেউ ভাবতে পারে নি জুয়েল ভাই এত অল্পতেই ভয় পেয়ে এমন ভোঁ দৌড় দেবে! পরের সংলাপগুলো আর প্রয়োগ করা লাগলো না! সুরুজ কত কষ্ট করে সংলাপগুলো তৈরি করেছিল! সুরুজ সেটা নিয়ে আফসোস করে। জান ভরে ভয়ই দেখাতে পারলো না!

বাসার সামনে এসে দরজার দিকে তাকাতেই থতমত খেয়ে গেলো জুয়েল ভাই। লাবু আর রুবেলকে দেখে লজ্জাও পেয়ে গেলো। হাঁপাতে থাকে জুয়েল ভাই। লাবু-রুবেল এগিয়ে আসে। লাবু বলে, ‘কী হয়েছে জুয়েল ভাই?’

‘ওই, ও-ওখানে—’ থেমে যায় জুয়েল ভাই। একটু সামলে নেয়ার চেষ্টা করে।
‘ওই ওখানে কী জুয়েল ভাই?’

‘না, কিছু না।’ জুয়েল ভাই এড়িয়ে যায়, ‘কেমন আছিসরে লাবু? দরজায় দাঁড়িয়ে কী করছিস?’

‘এইতো ভাইয়া, তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।’ লাবু জুয়েল ভাইয়ার দিকে মনোযোগী দৃষ্টি দিয়ে বলে, ‘কিন্তু ভাইয়া, তোমাকে এমন লাগছে কেন! হাঁপাচ্ছো মনে হয়!’

‘আসলে তোর সাথে দেখা করার জন্য জানটা ছটফট করছিল, তাই জোরে জোরে হেঁটে আসলাম তো—’

‘কিন্তু আমি তো তোমাকে দৌড়ে আসতে দেখলাম!’

‘হ্যাঁ, ওই অনেকটা দৌড়ের মতোনই।’
‘কোনো কারণে ভয়-টয় পাও নি তো আবার!’

‘ভয়!’ জুয়েল ভাই চমকে ওঠে, কিন্তু সামলে নিয়ে বলে, ‘কীসের আবার ভয়! এইরকম কিছু না। খুব তাড়াহুড়া করে আসলাম তাই এরকম মনে হচ্ছে।’
‘আচ্ছা, তোমাকে অনেক ক্লান্ত মনে হচ্ছে। যাও, আগে ফ্রেশ হয়ে নাও। পড়ে কথা বলা যাবে।’

‘হ্যাঁ, সেই ভালো।’

জুয়েল ভাই দ্রুত বাসার ভেতরে চলে যায়।
এর মধ্যে

সুরুজ-মিন্টু-টিপু-ইলিয়াস-শেফালি এসে হাজির হয়। আড়াল থেকে তারা জুয়েল ভাইয়ের কথা শুনছিল। জুয়েল ভাই ভেতরে চলে যেতেই ওরা বের হয়ে আসে, কিছুক্ষণ হাসাহাসি করে। তারপর যে যার বাসায় চলে যায়। রুবেলকে সাথে নিয়ে লাবু শেফালিকে এগিয়ে দেয়।

জুয়েল ভাইয়ার ভেতরে অস্থিরতা দেখা যায়। কিন্তু কিছু প্রকাশ করে না। কারো সাথে কথা বলে না। ঘর থেকেও বের হয় না। বিছানায় চুপচাপ শুয়ে থাকে। আর হারুন ভাইকেও পাশে রাখে। হারুন ভাইয়ের অনেক কাজ থাকে, তার বসে থাকলে চলে না। কিন্তু জুয়েল ভাই হারুন ভাইকে যেতে দেয় না। কী কারণ সেটাও পরিষ্কার করে না। কিছুক্ষণ পর লক্ষ্য করা যায়, জুয়েল ভাই থরথর করে কাঁপছে, তার গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। এবং হঠাৎ বিড়বিড় করে আবোল-তাবোল বকতে শুরু করে। বাড়িতে হইচই পড়ে যায়। কিন্তু কেউ কিছু বুঝতে পারে না। বড় আব্বু ধারণা করে—সারাদিনের পরিশ্রমের কারণে এই দশা!

লাবু-রুবেলও কিছু প্রকাশ করে না। তারা মনে মনে অনেক আনন্দিত বোধ করে। লাবু কৃতিত্বটা শেফালিকে দিয়ে তার খুব প্রশংসা করতে থাকে। রুবেলের তাতে গা জ্বলে। কিন্তু কিছু বলে না।

হারুন ভাইকে রাতে জুয়েল ভাইয়ের পাশে থাকতে হলো। হয়তো লাবু-রুবেলও সঙ্গ দিতো, কিন্তু আগের রাতের ট্রেন জার্নি এবং সারাদিনের দৌড়ঝাঁপের ক্লান্তিতে লাবুর আর জেগে থাকার শক্তি থাকে না। রাতের খাবারের পর পরই সে ঘুমিয়ে পড়ে। তাকে অনুসরণ করে রুবেলও।

(চলবে)

পূর্ববর্তী পর্বসমূহ:

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ১)

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ০২)

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ০৩)

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ০৪)

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ০৫)

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ০৬)

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ০৭)

লেখক পরিচিতি
মুহসীন মোসাদ্দেক
জন্ম ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮; রাজশাহী, বাংলাদেশ। ২০১০ সালে প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ঘন অন্ধকারের খোঁজে’ এবং ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘ঘি দেয়া গরম ভাত আর চিতল মাছের পেটি’। মাঝে ২০১৩ সালে কিশোর গল্পগ্রন্থ ‘মগডাল বাহাদুর’ প্রকাশিত হয়। প্রাণিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর সম্পন্নের পর এমবিএ করেন ব্যবস্থাপনা শিক্ষায়। বর্তমানে স্বনামধন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিভাগে কাজ করছেন। বই প্রকাশে দীর্ঘ বিরতি চললেও লিখে যাচ্ছেন নিয়মিত। শিশু-কিশোরদের জন্য লিখতে ভালোবাসেন, বিশেষ করে দুরন্তপনার গল্পগুলো। লেখকের কৈশোর জীবন তুমুল দুরন্তপনায় কেটেছে এমনটা নয়, তবু বেশ রঙিন এক কৈশোর কাটিয়েছেন মফস্বল শহরে। রঙিন সে জীবনে ফিরে যাবার সুযোগ না থাকায় খুব আফসোস হয়। এ আফসোস ঘোচাতেই লেখার মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে ফিরিয়ে নিয়ে যান কৈশোরে আর দুরন্তপনায় মেতে ওঠেন ইচ্ছেমতো। প্রত্যাশা কেবল এতটুকুই, কিছু উপযুক্ত পাঠক সঙ্গী হোক তার লেখার এ দুরন্ত জীবনে।

2 Comments

Leave a Reply

error: Content is protected !!