মুহসীন মোসাদ্দেক
(পূর্ব প্রকাশের পর)
লাবুরা চলে আসে সেখান থেকে। আসার সময় মোটাসোটা ছেলেটার সাথে সুরুজের গরম চোখের দৃষ্টি বিনিময় হয়। মুখ ফিরিয়ে নেয়ার আগে সুরুজ একবার ভেঙচি কাটে। মোটাসোটা ছেলেটা জবাবে কাঁচকলা দেখায়।
স্কুল ছুটির পর ম্যাচ। কিন্তু এখন থেকেই উত্তেজনা কাজ করে। ক্লাসে মন বসে না। অঙ্ক স্যার যখন বোর্ডে জটিল একটা অঙ্ক বোঝাচ্ছে, রুবেল তখন দল নিয়ে ছক কষছে। সে দলের ক্যাপ্টেন। তাদের ছয়জনের সাথে ক্লাস থেকে আরো পাঁচজনকে নিতে হবে। কোন পাঁচজনকে নেয়া যায় সে নিয়েই সে ছক কষছে। রুবেল নিজে ভালো ব্যাটসম্যান, লাবু অলরাউন্ডার, মিন্টু উইকেটকিপার, সুরুজ ফাস্ট বোলার, ব্যাটিংও মোটামুটি ভালো করে, ইলিয়াস শেন ওয়ার্নের মতো লেগ স্পিন করে, কিন্তু ব্যাটিং ভালো পারে না, আর বিজ্ঞানী টিপু কোনো কিছুই ঠিকভাবে পারে না। বোলিং তো দূরের কথা, ঠিকমতো ব্যাটও ধরতে পারে না, ফিল্ডিংয়ের অবস্থা আরো খারাপ। ওর কাছে কোনো ক্যাচ গেলে সেটা নিশ্চিতভাবেই ধরে নিতে হয় আউট হবে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যাচ তো ধরতে পারেই না উল্টো বাউন্ডারি করে দেয়। এজন্য ওকে বাউন্ডারি লাইনে ফিল্ডিংয়ে রাখা হয় না। দল থেকে বাদও দেয়া যায় না, সবসময় একসাথে থাকে, খেলার সময় বাইরে রাখলে চলে! ছয়জনকে বিশ্লেষণ করে সে দেখে মূলত তার ভালো বোলার দরকার। সজিব নামের ছেলেটা খুব জোরে বল করে, ওকে নিতে হবে। নামটা লিখে নিলো রুবেল। রহিম ছেলেটা খুব ভালো ব্যাটিং করে, ওকে দিয়ে ওপেনিং করাতে হবে, এ নামটাও লিখে নেয়। আরো তিনজন লাগবে। কিন্তু ভালো খেলে সেরকম আর কাউকে রুবেলের মনে পড়ে না। ক্লাসের ভেতরে চোখ বুলায়। সবুর নামের একটা ছেলে আছে, সবদিক দিয়েই ভালো খেলে, কিন্তু ক্লাসে তাকে দেখা যাচ্ছে না। প্রায়ই সে স্কুলে আসে না। টিফিনে তার বাসায় খোঁজ করে দেখা যেতে পারে। নামটা লিখে রাখলো রুবেল। কিন্তু রিস্ক নেয়া যাবে না, অতিরিক্ত আরো একজনকে নিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু মনমতো আর কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। মোটামুটি খেলতে পারে এরকম ছেলেদের মধ্যে থেকে আবু, মিলন আর সেলিমের নাম লিখে রাখা হলো। এর মধ্যে সবুরকে পাওয়া গেলে সেলিমকে বসিয়ে দেয়া হবে। শেষ পর্যন্ত দলটা দাঁড়ায় এরকম—ওপেনিংয়ে লাবু আর রহিম, তিনে রুবেল, চারে সবুর/মিন্টু, সবুরকে পাওয়া গেলে মিন্টু পাঁচে, সুরুজ ছয়ে খেলবে। না পাওয়া গেলে মিন্টু খেলবে চারে সুরুজ পাঁচে। এরপর সজিব, তারপর আবু, মিলন, ইলিয়াস এবং সবার শেষে টিপু। সেলিম অতিরিক্ত হিসেবে থাকছে। সবুর না খেললে টিপুর আগে ব্যাটিংয়ে নামবে সে। বোলিংয়ে শুরুতে সুরুজ আর সজিব, এরপর লাবু, ইলিয়াস, সবুর। দরকার লাগলে রুবেলও বোলিং করবে। সবুরকে না পেলে একজন বোলার কম পড়বে, সেক্ষেত্রে রুবেলকে তো বল করতেই হবে, মিন্টু কিংবা মিলনের হাতেও বল তুলে দিতে হতে পারে। এই পর্যায়ে দলটা গুছিয়ে রাখে রুবেল। আর মনে মনে ঠিক করে রাখে—যে করেই হোক সবুরকে খুঁজে আনতে হবে।
অঙ্ক ক্লাস শেষে যাদের দলে নেয়া হয়েছে তাদের সাথে কথা বলে রুবেল। টিফিনে সবাই একসাথে একটু প্র্যাকটিস করতে হবে। ম্যাচের বিষয়টা ছড়িয়ে পড়তেই অনেকেই খেলার জন্য চেঁচামেচি শুরু করে। রুবেল তাদের বুঝিয়ে শান্ত করে।
একে একে ক্লাসগুলো শেষ হলো। টিফিনে বাসায় গিয়ে দ্রুত খেয়ে বেরিয়ে আসলো সবাই। সবাইকে নিয়ে প্র্যাকটিসের দায়িত্ব লাবুকে দিয়ে রুবেল গেলো সবুরের বাড়ি। সবুরকে বাসায় পাওয়া গেলো না। ওর মা বললো, সবুর বাবার সাথে ক্ষেতে কাজ করতে গেছে। দুপুরের কড়া রোদে সুরুজ ছুটলো সবুরদের ক্ষেতের দিকে। সেখানে গিয়ে দেখা গেলো সবুর তার বাবার সাথে ক্ষেতে লাঙল দিচ্ছে। তাকে একপাশে ডেকে নিয়ে ম্যাচের কথা জানায় রুবেল। সবুর খেলতে আগ্রহী। কিন্তু বাবা যেতে দেবে কিনা বলা যাচ্ছে না। তবুও সে চেষ্টা করবে বলে কথা দিলো।
রুবেল স্কুলে ফিরে আসতে আসতে টিফিনের সময় শেষ। টিফিনের পরের ক্লাসটাই ছিল আজান স্যারের ক্লাস। লাবু প্রত্যাশিত খামচি খেয়ে একটু পর পর পেটের ডান পাশে হাত বুলাতে থাকে। আর সবাই মিলে ম্যাচ নিয়ে কথা বলতে থাকে।
স্কুল ছুটির পর সবাই বাসায় গিয়ে স্কুল ড্রেস বদলে দ্রুত মাঠে চলে আসে। ক্লাস এইটের দল আসে একটু দেরিতে। এবং লক্ষ্য করা যায় ধীরে ধীরে মাঠের চারপাশে ছেলেমেয়ে জমতে থাকে। কীভাবে কীভাবে যেন স্কুলে ছড়িয়ে পড়েছিল ম্যাচের কথা। স্কুলের ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি অনেক বড় মানুষও আসে খেলা দেখতে। রুবেলরা এত মানুষের সামনে এরকম সিরিয়াস একটা ম্যাচ এর আগে খেলে নি। সবার ভেতরেই উত্তেজনা বাড়তে থাকে। উত্তেজনার পাশাপাশি রুবেলের চিন্তাও বাড়তে থাকে। সবুর এখনো আসে নি!
দুই ক্লাস থেকে দুইজনকে আম্পায়ার নির্বাচন করা হয়েছে। স্কোরার হিসেবেও দুই ক্লাস থেকে দুইজনকে নির্বাচন করা হয়েছে। ম্যাচ শুরুর আগে একটা গণ্ডগোল পাকে। ক্লাস এইটের দলে বাইরের দুইজনকে দেখা যায়। বিষয়টা তুলতেই লাবুকে ইঙ্গিত করে ক্লাস এইটের ক্যাপ্টেন বলে, লাবুও তো বাইরের ছেলে। লাবু ক্লাস সেভেনের দলে খেললে ক্লাস এইটের দলেও ওই দুইজন খেলবে। লাবুকে বাদ দিলে ওই দুইজনকেও বাদ দেয়া হবে। এমনিতেই সবুর এখনো আসে নি, ওর আসার কোনো সম্ভাবনা আর নেই। এই অবস্থায় লাবুকে বাদ দেয়ার প্রশ্নই আসে না। রুবেল তাই বিষয়টা মেনে নেয়, কিন্তু প্রস্তাব দেয় একজনকে রাখার। কারণ ক্লাস সেভেনে বাইরের ছেলে একজন, এইটে কেন দুইজন থাকবে! কিন্তু ক্লাস এইট সেটা মানে না, ওরা দুইজনকেই রাখতে চায়। এই নিয়ে কথাকাটাকাটিও লেগে যায়! শেষ পর্যন্ত দুই আম্পায়ারের মধ্যস্থতায় ঝামেলা মেটে। বাইরের একজনকে রেখে আরেকজনকে বাদ দেয় ক্লাস এইট। খেলা হবে পনেরো ওভারের। একজন বোলার সর্বোচ্চ তিন ওভার বল করতে পারবে।
টস জিতে রুবেল ব্যাটিং নেয়। লাবু আর রহিম নেমে যায় ব্যাটিংয়ে। বাইরের ছেলেটা বল করতে আসে। প্রথম বলটা লাবু ছেড়ে দেয়। বেশ গতি আছে বলে। পরের বল একটু বাউন্স করে, লাবু পুল করে লেগ সাইডে পাঠিয়ে দিয়ে এক রান নেয়।
ঠিক এই সময় সবুর এসে হাজির। রুবেল খেঁকিয়ে বলে, ‘এইটা তোর আসার সময় হইলো! আমি ভাবলাম তুই আর আসবি না!’
‘কী করবো? ক্ষ্যাতের কাম না সাইরা আব্বায় আইতে দিলো না! হের লাইগাই দেরি হইয়া গেলো।’
দুই আম্পায়ারের কাছে খেলোয়াড়ের তালিকা দেয়া আছে। সেখানে সবুরের নাম কেটে দেয়া হয়েছে। এখন সবুরকে কীভাবে দলে নেয়া যায়? রুবেল আপাতত কিছু করে না, সবুরকে বসিয়ে রাখে।
তৃতীয় বলটা মোকাবিলা করবে রহিম। ইয়র্কার বল করতে চায় বোলার, হয়ে যায় হাফভলি, রহিম তুলে মারে, বোলারের মাথার উপর দিয়ে স্ট্রেইট ছক্কা। ম্যাচে প্রথম উল্লাস ক্লাস সেভেনের। পরের বলে বাউন্সার দেয়। রহিম এবারো তুলে মারে, কিন্তু এবার বল আকাশে উঠে যায়, বল এসে জমা পড়ে বোলারের হাতেই। পাল্টা উল্লাস ক্লাস এইটের, থেমে যায় সেভেনেরটা। রুবেল আসে উইকেটে। ওভারের বাকি দুটো বলই ডিফেন্স করে। প্রথম ওভার শেষে ১ উইকেটে ৭।
পরের ওভার করতে আসে মোটাসোটা ছেলেটা। একেবারে তেড়েফুঁড়ে আসে। প্রথম বলটা লেগ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরে দিয়ে চলে যায়, উইকেটকিপারও ধরতে পারে না। ওয়াইডের সাথে চারের সংকেত দেয় আম্পায়ার। রানের খাতায় যোগ হয় পাঁচ রান। মোটাসোটা ছেলেটা রেগে রেগে তাকায় লাবুর দিকে, দোষ যেন সব লাবুর! পরের বলটা ভালো হয়, লাবু ডিফেন্স করে। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে রুবেলকে স্ট্রাইক দেয় লাবু। লাবুর কেন জানি জড়তা কাজ করছে, শট খেলতে পারছে না। পরের বলে রুবেল উইকেট থেকে বেরিয়ে এসে অফ সাইডে তুলে মারে, চার হয়ে যায়। আবার উল্লাস শুরু হয় ক্লাস সেভেন দলে এবং দর্শকদের মাঝে। পরের তিন বলে তিনটা সিঙ্গেল নেয় লাবু-রুবেল। দুই ওভার শেষে স্কোর দাঁড়ায় ১ উইকেটে ২০।
পরের ওভার করতে আসে বাইরের ছেলেটাই। স্ট্রাইকে রুবেল। প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে লাবুকে স্ট্রাইক দেয় রুবেল। লাবু পরের পাঁচটা বলই নষ্ট করে। উল্টোপাল্টা খেলতে গিয়ে একবার পেছনের দিকে ক্যাচও তুলে দিয়েছিল। উইকেটকিপার ধরতে পারে নি। লাবু বুঝতে পারে না তার এরকম কেন হচ্ছে। রুবেল সাহস দেয়।
মোটাসোটা ছেলেটার পরের ওভার থেকে এগারো রান আসে। প্রথম দুটোতেই চার মারে রুবেল। যোগ্য অধিনায়কের মতো খেলতে থাকে রুবেল। একটা ডট বলের পর সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইকে যায় লাবু। লাবু আর উল্টোপাল্টা খেলে না, তার যখন ব্যাটে-বলে হচ্ছে না তখন রুবেলকে সঙ্গ দিয়ে যাবার পরিকল্পনা করে সে। পরের বলটা অফ সাইডে ঠেলে দিয়েই একটা সিঙ্গেল নিয়ে নেয় দুজন। শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক ধরে রাখে রুবেল।
এরপর বোলিং লাইনে পরিবর্তন আসে। ক্লাস এইটের ক্যাপ্টেন আসে বল করতে। এই ওভারেও আসে দশ রান। লাবু একটা চার মারে, অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে উইকেটকিপারের পাশ দিয়ে বল বের করে দেয়। লাবুর জড়তা কাটতে থাকে। পাঁচ ওভার শেষে স্কোর দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৪২।
লাবু-রুবেল দেখেশুনে খেলতে থাকে। জমে ওঠে দুজনের জুটি। লাবু একটু ধীর-স্থির, রুবেল কিছুটা আক্রমণাত্মক। রুবেল এর মধ্যে দুইটা করে চার আর ছয় মারে, লাবু মারে দুইটা চার। ওয়াইড আর বাই রান মিলিয়ে ভালো একটা স্কোর দাঁড়িয়ে যায় দশ ওভার শেষে। ১ উইকেটে ৯০, হাতে এখনো ৯ উইকেট, একশ পঞ্চাশ-ষাট কোনো ব্যাপারই না। কিন্তু, এই পর্যায়েই বড় ধাক্কাটা লাগে লাবুদের ইনিংসে।
বাইরের ছেলেটাকে আবার বোলিংয়ে ফিরিয়ে আনতেই রুবেলকে বোল্ড করে দেয়। রুবেল আউট হয় ৪৫ রানে। এরপর সবুর ব্যাটিংয়ে আসে, রুবেল ব্যাটিংয়ে নামার সময় বলে এসেছিল, উইকেট পড়লেই যেন সে নামে। সবুরকে দেখেই তেড়ে আসে মোটাসোটা ছেলেটা, ‘ওই, তুই নামলি ক্যান? তোর নাম তো লিস্টে নাই!’
রুবেল ছুটে আসে এবং বিষয়টা বোঝানোর চেষ্টা করে, ‘আসলে ওই আইতে একটু দেরি কইরা ফেলাইছে। এই কারণে লিস্ট থেইকা ওরে কাইটা দিছিলাম। ওই এখন খেলবো।’
‘এখন খেলবো মানে! মগের মুল্লুক নাকি!’
ক্লাস এইটের আম্পায়ার খেলোয়াড়ের তালিকা বের করে দেখে সবুরের নাম কাটা। এই অবস্থায় তাকে আর খেলতে দেয়া যাবে না বলে জানিয়ে দেয় আম্পায়ার। হইচই শুরু হয়ে যায়, দুই আম্পায়ারের মধ্যেও কথাকাটাকাটি লেগে যায়। শেষ পর্যন্ত সবুরকে বাদ দিতে হয়।
মিন্টু নামে। হাতে অনেক উইকেট আছে বলে তেড়েফুঁড়ে ব্যাট চালায় মিন্টু। হিতে হয় বিপরীত। একটা চার মেরে দুইটা বল নষ্ট করে আউট হয়ে যায় মিন্টু। সুরুজ নেমেও একই কাণ্ড ঘটায়। প্রথম বলেই আউট হয়ে যায় সে। ১ উইকেটে ৯০ থেকে এক ওভারের মধ্যেই ৪ উইকেটে ৯৪।
আর চার ওভার খেলা আছে। একশ ত্রিশ-চল্লিশ রান অন্তত করতে হবে। না হলে জিততে কষ্ট হবে। লাবু তিনটা চার মারলেও অনেকগুলো বল নষ্ট করে মাত্র ২৩ রান করেছে। এখন তার হাত খুলে খেলা দরকার। পরের ওভারের প্রথম বলে লাবু জোরেশোরেই মারে কিন্তু ঠিকমতো লাগে না। মাত্র এক রান আসে। সজিব পরের বল ডট দিয়ে তার পরের বলে আউট হয়ে যায়। মিলনও আসে আর যায়। দশ বলের ভেতরেই লাবুদের ইনিংস এলোমেলো হয়ে যায়।
ইলিয়াস নামে। ব্যাটিং সে তেমন পারে না। তবু প্রথম বলটা সামলে হ্যাটট্রিক আটকে দেয়। পরের বলে ভালোভাবেই মারে। এক রান নেয়া যেত, লাবু নেয় না। পরের ওভার করতে আসে মোটাসোটা ছেলেটা। লাবুর জেদ চেপে যায়। মোটাসোটা ছেলেটাও বেশ তেড়েফুঁড়ে আসে। লাবু ভয় পায় না। প্রথম দুই বলেই ছয় মেরে দেয় লাবু। প্রথমটা লেগ সাইডে, পরেরটা স্ট্রেইট। পরের বলে সিঙ্গেল নেয়। ইলিয়াসকে বলে দেয় কোনোরকমে যেন ঠেকায়, মারতে যেন না যায়। ফুলটস বল পেয়ে ইলিয়াস অবশ্য মেরেই দেয়। ইলিয়াসের মারে তেমন জোর নেই, এক রান হয়। পরের বলটা লাবু মিস করে। শেষ বলে সিঙ্গেল নিতে চাইলেও ফুলটস পেয়ে মেরেই দেয় লাবু। অল্পের জন্য ছয় হয় না, চার হওয়ার আগে বাউন্ডারির এপাশে একটা ড্রপ পড়ে।
একটা ভালো ওভারের পর সেটা ধরে রাখা যায় না। ইলিয়াস দুইটা বল নষ্ট করে আউট হয়ে যায়। আবু নেমে একটা সিঙ্গেল নিয়ে দেয়। লাবু আবার মিস করে পরের বলটা। তারপরের বলে সিঙ্গেল নেয়।
শেষ ওভারে একটু নার্ভাস লাগে লাবুর। বড় করে শ্বাস নেয়। বল করতে আসে ক্লাস এইটের ক্যাপ্টেন। লাবু অনেকটা চোখ বন্ধ করে মারতে থাকে। প্রথম দুই বলেই লেগ সাইডে ছয়। হাফসেঞ্চুরি হয়ে যায় লাবুর। লাবু সেটা টের পায় না। বাইরে থেকে রুবেল-সুরুজ-শেফালিরা চেঁচিয়ে বলে, ‘লাবু ফিফটি। লাবু ফিফটি।’ লাবু তবু ব্যাট তোলে না।
পরের বলটাও লাবু ভালোভাবেই হিট করে, কিন্তু একটা ড্রপ পড়ে স্ট্রেইটে ফিল্ডারের হাতে পড়ে যায় বল। লাবু রান নেয় না। পরের বলে আবার মারে ছক্কা। উপস্থিত দর্শকরা বেশ বিনোদন পায়। রুবেল-সুরুজরা নাচানাচি শুরু করে। নাচানাচি অবশ্য পরের বলেই থেমে যায়। অফসাইডে ক্যাচ তুলে দেয় লাবু। ফিল্ডার প্রথমবার ধরতে পারে না, দ্বিতীয়বারে মাটিতে পড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে ধরে ফেলে। লাবু ৫৮ রান করে ফিরে আসে। প্রথম দিকে না পারলেও শেষে এসে সে-ই হিরো হয়ে যায়।
বল বাকি আর একটা। সেলিম আর টিপুর মধ্যে গণ্ডগোল লেগে যায়। নামতে চায় দুজনই। শেষ পর্যন্ত সেলিম হার মানে। টিপুর অবশ্য ব্যাট ধরা হয় না, নন-স্ট্রাইকে দাঁড়াতে হয়। ক্যাচ তুলে দিয়ে রান নেয়ার জন্য পিচ কভার করে ফেলেছিল লাবু-আবু। শেষ বলে স্ট্রাইকে তাই আবু। আবু চোখ বন্ধ করে মারে। কিন্তু ব্যাটে-বলে ভালো সংযোগ হয় না। মাত্র এক রান আসে।
শেষ পর্যন্ত লাবুদের স্কোর দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ১৩৪। খারাপ না। তবে লাবুর ৫৮ আর রুবেলের ৪৫, আর কেউ দুই অঙ্কের ঘরেই যেতে পারে না। বোলিংয়েও যদি এমন হয় তাহলে খবর আছে। এমনিতেই সবুর নেই, ভালো বোলার মাত্র চারজন।
(চলবে)
পূর্ববর্তী পর্বসমূহ:
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ১)
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ০২)
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ০৩)
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ০৪)
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ০৫)
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ০৬)
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ০৭)
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ০৮)
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ০৯)
ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস: লাবুদের দস্যিপনা (পর্ব ১০)
জন্ম ২২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮; রাজশাহী, বাংলাদেশ। ২০১০ সালে প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘ঘন অন্ধকারের খোঁজে’ এবং ২০১৪ সালে প্রকাশিত হয় দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ ‘ঘি দেয়া গরম ভাত আর চিতল মাছের পেটি’। মাঝে ২০১৩ সালে কিশোর গল্পগ্রন্থ ‘মগডাল বাহাদুর’ প্রকাশিত হয়। প্রাণিবিদ্যায় স্নাতকোত্তর সম্পন্নের পর এমবিএ করেন ব্যবস্থাপনা শিক্ষায়। বর্তমানে স্বনামধন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মানবসম্পদ বিভাগে কাজ করছেন। বই প্রকাশে দীর্ঘ বিরতি চললেও লিখে যাচ্ছেন নিয়মিত। শিশু-কিশোরদের জন্য লিখতে ভালোবাসেন, বিশেষ করে দুরন্তপনার গল্পগুলো। লেখকের কৈশোর জীবন তুমুল দুরন্তপনায় কেটেছে এমনটা নয়, তবু বেশ রঙিন এক কৈশোর কাটিয়েছেন মফস্বল শহরে। রঙিন সে জীবনে ফিরে যাবার সুযোগ না থাকায় খুব আফসোস হয়। এ আফসোস ঘোচাতেই লেখার মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে ফিরিয়ে নিয়ে যান কৈশোরে আর দুরন্তপনায় মেতে ওঠেন ইচ্ছেমতো। প্রত্যাশা কেবল এতটুকুই, কিছু উপযুক্ত পাঠক সঙ্গী হোক তার লেখার এ দুরন্ত জীবনে।
3 Comments